ঢাকা ০৯:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেরুদণ্ডের সমস্যা ডেকে আনতে পারে ভারসাম্যহীনতা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫২:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৮
  • ৩১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেরুদণ্ডহীন হয়ে বাঁচা দায়। শরীরের এই হাড়ের অল্প ক্ষতিই ডেকে আনতে পারে ভারসাম্যহীনতা। তখন শেষ ভরসা ওষুধ না কি অপারেশন? জানা জরুরি কোন ধরনের সমস্যার বীজ লুকিয়ে শিরদাঁড়ায়।

ব্যারাম ব্যমো

১. লাম্বার ডিস্ক প্রোলাপ্স বা স্লিপ ডিস্ক। এই সমস্যায় শিরদাঁড়ার ডিস্কের হাড়ের মধ্যে থাকা জেলি (nucleus pulposus) হাড়ের চাপে বাইরে বেরিয়ে আসে।

২. লাম্বার ক্যানেল স্টেনোসিস বা শিরদাঁড়ার সঙ্গে নার্ভ যুক্ত থাকতে ঠিক যতটা স্থান প্রয়োজন সেই স্থান ছোট হতে থাকলে।

৩. ল্যাটারাল রিসেস সিনড্রম বা শিরদাঁড়া থেকে যে স্নায়ুগুলি বের হয় সেই স্নায়ু বেরনোর যে গর্ত তা কোনও কারণে ছোট হয়ে গেলে।

৪. শিরদাঁড়ার হাড় ভাঙা বা ভাটিব্রাল কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার হলে।

৫. শিরদাঁড়ার হাড় একটা আর একটার উপর সরে গেলে সেই সমস্যাকে বলা হবে লাম্বার স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস।

কাদের হয়?
অনেক সময় লাম্বার স্পাইনে বা শিরদাঁড়ার নিচের দিকে খুব চাপ পড়ে স্নায়ুর উপরেও চাপ তৈরি হয়। যা থেকে কোমর, পা অবশ হতে থাকে। পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে ব্যথা শুরু হয়। সেক্ষেত্রে স্পাইনাল সার্জারি করে স্নায়ুর চাপ মুক্ত করলে এই সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অপারেশনের পর ফিজিওথেরাপি জরুরি।

বয়সজনিত কারণে শিরদাঁড়ার হাড়ের মাঝের ফাঁকা স্থান সংকীর্ণ হয়ে স্নায়ুর উপড় চাপ বাড়তে থাকে। সেই চাপ শিরদাঁড়া সন্নিবিষ্ট স্নায়ুর উপরেও পড়ে। যাকে বলা হয় লাম্বার ক্যানেল স্পেনোসিস। তখন অপারেশন করে সেই স্থান একটু বড় করে দিলে সমস্যা মিটে যায়। এমন হলে রোগীর হাঁটতে গেলেই পা ঝিনঝিন করতে থাকে। একটু হাঁটলে দাঁড়িয়ে অথবা বসে পড়তে হয়।

চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে হাঁটার ক্ষমতা কমতে থাকে রোগীর। এছাড়া কোনও দুর্ঘটনার কারণে শিরদাঁড়ার হাড় সরে গেলে সেক্ষেত্রেও অপারেশন জরুরি। খুব বয়স্কদের হাড় সরে গিয়ে এমন সমস্যা হতে পারে। এছাড়া চোট লেগে, কোনও সংক্রমণের কারণেও লাম্বার ভাটিব্রার (শিরদাঁড়ার হাড়) ক্ষতি হতে পারে। তখন অপারেশন করে ভেঙে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভাটিব্রা বাইপাস করা হয়। তারপর উপর থেকে নিচে রড ও স্ক্রু দিয়ে শিরদাঁড়া নির্দিষ্ট করা সম্ভব।

ব্যথা বুঝে লক্ষণ চিনুন

ব্যথা মানেই যেমন তা শিরদাঁড়ায় সমস্যা নয়, আবার এমন ব্যথা হলে অবহেলাও নয়।

১. কোমরের ব্যথা ধীরে ধীরে পা পর্যন্ত গেলে।

২. ঘাড়ের ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে যেতে থাকলে।

৩. পায়ের কিছু অংশ কম জোর হয়ে যাচ্ছে, পা তুলতে অসুবিধা, হাঁটতে কষ্ট।

৪. পায়ের বুড়ো আঙুল অসাড় হয়ে যাওয়া বা জোর কমে যাওয়া। চলতে গেলে বারবার পা থেকে জুতো খুলে যাওয়া।

৫. হাতে চাপ দিতে সমস্যা, কোনও জিনিসপত্র তুলতে, ধরতে অসুবিধা।

৬. হাত কাঁপছে। বোতাম লাগাতে অসুবিধা, সুচে সুতো পরাতে কষ্ট। লিখতে গেলে হাত কাঁপছে এমন সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকলে অবহেলা করা চলবে না। সেক্ষেত্রে প্রথমে ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি করে রোগ সারানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে কাজ না হলে ঘাড়ের কাছে শিরদাঁড়া বা সার্ভাইক্যাল স্পাইন অথবা কোমরের কাছের শিরদাঁড়া বা লাম্বার স্পাইনে অপারেশন করে সমস্যা সমাধান সম্ভব।

শক্ত শিরদাঁড়া শর্ত

১. শিরদাঁড়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক হাঁটা-চলা ও বসার ভঙ্গিমা মেনে চলতে হবে।

২. ধূমপানের প্রভাবে শিরদাঁড়ায় সঙ্গে যুক্ত কোষ ও স্নায়ুগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। তাই এই নেশা থেকে দূরে থাকাই ভাল।

৩. ভারী জিনিস সামনের দিকে ঝুঁকে কোনও কিছু তোলার অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইধরনের কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।

৪. বাথরুমে কোমট ব্যবহার করুন।

৫. অনেকক্ষণ বসে একটানা কাজ করা বা পড়াশোনা করলে টেবিল, চেয়ারে বসে করা উচিত। একটানা না বসে থেকে এক-দু’ ঘণ্টা অন্তর অন্তর হাঁটা চলা করা উচিত।

৬. শিরদাঁড়ার অপারেশনের পর প্রাথমিক নিয়ম মানার পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপি করতে হবে। এছাড়া অপারেশনের পর শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজাভাবে না উঠে পাশ ফিরে উঠতে হবে।

৭.নিয়মিত ভিটামিন ডি শরীরের প্রবেশ জরুরি। পিঠে রোদ লাগালে শিরদাঁড়া ভাল থাকে।

৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা দরকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মেরুদণ্ডের সমস্যা ডেকে আনতে পারে ভারসাম্যহীনতা

আপডেট টাইম : ১১:৫২:৪১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ নভেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মেরুদণ্ডহীন হয়ে বাঁচা দায়। শরীরের এই হাড়ের অল্প ক্ষতিই ডেকে আনতে পারে ভারসাম্যহীনতা। তখন শেষ ভরসা ওষুধ না কি অপারেশন? জানা জরুরি কোন ধরনের সমস্যার বীজ লুকিয়ে শিরদাঁড়ায়।

ব্যারাম ব্যমো

১. লাম্বার ডিস্ক প্রোলাপ্স বা স্লিপ ডিস্ক। এই সমস্যায় শিরদাঁড়ার ডিস্কের হাড়ের মধ্যে থাকা জেলি (nucleus pulposus) হাড়ের চাপে বাইরে বেরিয়ে আসে।

২. লাম্বার ক্যানেল স্টেনোসিস বা শিরদাঁড়ার সঙ্গে নার্ভ যুক্ত থাকতে ঠিক যতটা স্থান প্রয়োজন সেই স্থান ছোট হতে থাকলে।

৩. ল্যাটারাল রিসেস সিনড্রম বা শিরদাঁড়া থেকে যে স্নায়ুগুলি বের হয় সেই স্নায়ু বেরনোর যে গর্ত তা কোনও কারণে ছোট হয়ে গেলে।

৪. শিরদাঁড়ার হাড় ভাঙা বা ভাটিব্রাল কম্প্রেশন ফ্র্যাকচার হলে।

৫. শিরদাঁড়ার হাড় একটা আর একটার উপর সরে গেলে সেই সমস্যাকে বলা হবে লাম্বার স্পন্ডাইলোলিস্থেসিস।

কাদের হয়?
অনেক সময় লাম্বার স্পাইনে বা শিরদাঁড়ার নিচের দিকে খুব চাপ পড়ে স্নায়ুর উপরেও চাপ তৈরি হয়। যা থেকে কোমর, পা অবশ হতে থাকে। পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে ব্যথা শুরু হয়। সেক্ষেত্রে স্পাইনাল সার্জারি করে স্নায়ুর চাপ মুক্ত করলে এই সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অপারেশনের পর ফিজিওথেরাপি জরুরি।

বয়সজনিত কারণে শিরদাঁড়ার হাড়ের মাঝের ফাঁকা স্থান সংকীর্ণ হয়ে স্নায়ুর উপড় চাপ বাড়তে থাকে। সেই চাপ শিরদাঁড়া সন্নিবিষ্ট স্নায়ুর উপরেও পড়ে। যাকে বলা হয় লাম্বার ক্যানেল স্পেনোসিস। তখন অপারেশন করে সেই স্থান একটু বড় করে দিলে সমস্যা মিটে যায়। এমন হলে রোগীর হাঁটতে গেলেই পা ঝিনঝিন করতে থাকে। একটু হাঁটলে দাঁড়িয়ে অথবা বসে পড়তে হয়।

চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে হাঁটার ক্ষমতা কমতে থাকে রোগীর। এছাড়া কোনও দুর্ঘটনার কারণে শিরদাঁড়ার হাড় সরে গেলে সেক্ষেত্রেও অপারেশন জরুরি। খুব বয়স্কদের হাড় সরে গিয়ে এমন সমস্যা হতে পারে। এছাড়া চোট লেগে, কোনও সংক্রমণের কারণেও লাম্বার ভাটিব্রার (শিরদাঁড়ার হাড়) ক্ষতি হতে পারে। তখন অপারেশন করে ভেঙে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ভাটিব্রা বাইপাস করা হয়। তারপর উপর থেকে নিচে রড ও স্ক্রু দিয়ে শিরদাঁড়া নির্দিষ্ট করা সম্ভব।

ব্যথা বুঝে লক্ষণ চিনুন

ব্যথা মানেই যেমন তা শিরদাঁড়ায় সমস্যা নয়, আবার এমন ব্যথা হলে অবহেলাও নয়।

১. কোমরের ব্যথা ধীরে ধীরে পা পর্যন্ত গেলে।

২. ঘাড়ের ব্যথা ঘাড় থেকে হাতের দিকে যেতে থাকলে।

৩. পায়ের কিছু অংশ কম জোর হয়ে যাচ্ছে, পা তুলতে অসুবিধা, হাঁটতে কষ্ট।

৪. পায়ের বুড়ো আঙুল অসাড় হয়ে যাওয়া বা জোর কমে যাওয়া। চলতে গেলে বারবার পা থেকে জুতো খুলে যাওয়া।

৫. হাতে চাপ দিতে সমস্যা, কোনও জিনিসপত্র তুলতে, ধরতে অসুবিধা।

৬. হাত কাঁপছে। বোতাম লাগাতে অসুবিধা, সুচে সুতো পরাতে কষ্ট। লিখতে গেলে হাত কাঁপছে এমন সমস্যা দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকলে অবহেলা করা চলবে না। সেক্ষেত্রে প্রথমে ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি করে রোগ সারানোর চেষ্টা করা হয়। তাতে কাজ না হলে ঘাড়ের কাছে শিরদাঁড়া বা সার্ভাইক্যাল স্পাইন অথবা কোমরের কাছের শিরদাঁড়া বা লাম্বার স্পাইনে অপারেশন করে সমস্যা সমাধান সম্ভব।

শক্ত শিরদাঁড়া শর্ত

১. শিরদাঁড়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকতে সঠিক হাঁটা-চলা ও বসার ভঙ্গিমা মেনে চলতে হবে।

২. ধূমপানের প্রভাবে শিরদাঁড়ায় সঙ্গে যুক্ত কোষ ও স্নায়ুগুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। তাই এই নেশা থেকে দূরে থাকাই ভাল।

৩. ভারী জিনিস সামনের দিকে ঝুঁকে কোনও কিছু তোলার অভ্যাস অত্যন্ত ক্ষতিকর। এইধরনের কাজ এড়িয়ে চলাই ভাল।

৪. বাথরুমে কোমট ব্যবহার করুন।

৫. অনেকক্ষণ বসে একটানা কাজ করা বা পড়াশোনা করলে টেবিল, চেয়ারে বসে করা উচিত। একটানা না বসে থেকে এক-দু’ ঘণ্টা অন্তর অন্তর হাঁটা চলা করা উচিত।

৬. শিরদাঁড়ার অপারেশনের পর প্রাথমিক নিয়ম মানার পাশাপাশি, ফিজিওথেরাপি করতে হবে। এছাড়া অপারেশনের পর শুয়ে থাকা অবস্থা থেকে সোজাভাবে না উঠে পাশ ফিরে উঠতে হবে।

৭.নিয়মিত ভিটামিন ডি শরীরের প্রবেশ জরুরি। পিঠে রোদ লাগালে শিরদাঁড়া ভাল থাকে।

৮. স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ক্যালশিয়াম রাখা দরকার।