হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় নির্বাচনের আগেই ডিসিদের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। এজন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারায় এক্স অফিসিও ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এমনটা হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা (ডিসি) অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা ফিরে পাবেন।
ফলে বাড়বে ডিসিদের ক্ষমতা। পাশাপাশি মর্যাদাও আগের মতো ফিরে পাবেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। ওই ধারণাপত্রের ওপর কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন বিচার বিভাগ পৃথক্করণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় কিনা ওই সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ তে ২০০৭ সালের সংশোধনীর আগ পর্যন্ত ওই কোডের ২৫ ধারা অনুসারে অন্যান্যের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরাও এক্স অফিসিও ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
কিন্তু ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের ওই ক্ষমতা ও মর্যাদা রহিত করা হয়। বর্তমানে জেলা পর্যায়ে সেশন জজ, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ অন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রিভেনটিভ ও জুডিশিয়াল দুটি দায়িত্ব পালন করতেন। বর্তমানে ডিসিদের পিউরলি জুডিশিয়াল ক্ষমতা নেই কিন্তু প্রিভেনটিভ ক্ষমতা আগের মতোই বিদ্যমান রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের তৈরি করা ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’-এর বাস্তব যে প্রয়োগ ও ঐতিহাসিক পরম্পরা শুধু বিচার কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। এটি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক কাজেও ব্যবহার করা হয়। তাই প্রিভেনটিভ কাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বিবেচনায় ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারায় ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসাবে বর্তমানে বিদ্যমান এক্স অফিসিওদের সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম আগের মতো অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এর বিপরীতে ২২টি যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৬৪ ও ৬৫ ধারামতে কোনো এক্সিকিউটিভ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল দুই ধরনের ম্যাজিস্ট্রেটেরই রয়েছে। কিন্তু সংশোধিত ২৫ ধারায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণকারী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে গণ্য করা হলেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়ন্ত্রণকারী ডিসিদের গণ্য করা হয়নি।
এটা যৌক্তিক নয়। এতে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (৪) বিধান মতে সরকার চাইলে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটকে অপরাধ আমলে নেয়ার ক্ষমতা দিতে পারেন। তাই এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে ডিসিকে ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে গণ্য থাকা জরুরি। এছাড়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটরা যখন বিভিন্ন প্রিভেনটিভ ধারায় সাক্ষ্য নেন তখন তারা সাক্ষীদের শপথ পড়ান। এ শপথ ভঙ্গ হলে তাদের বিরুদ্ধে শপথ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাই শপথ পাঠের বিষয়টি নিশ্চিতকারী হিসেবে ডিসিদের নৈতিকভাবে ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন।
ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, জেল কোড অনুসারে কারাগারের ওপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ, কারাগার পরিদর্শন, বন্দিদের ডিভিশন প্রদান, বন্দিদের শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসা, বন্দিদের বিভিন্ন আবেদন বিবেচনা ও অগ্রায়ন, সদাচরণের জন্য লঘু অপরাধের বন্দিদের মুক্তির বিষয়ে বিবেচনার জন্য সুপারিশ, কারা শৃঙ্খলা রক্ষা, মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করাসহ বিভিন্ন কাজ ডিসিদের নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই হয়ে আসছে। এসব কাজের সমর্থনে ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে ডিসিদের নাম পুনঃস্থাপন করা জরুরি। এতে বলা হয়েছে, জেলা ট্রেজারিতে রাষ্ট্রের পক্ষে সব ধরনের স্ট্যাম্পস সংরক্ষণ ও বিতরণ এবং নিয়ন্ত্রণ ডিসিদের সাধারণ তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে।
‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে ডিসিদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকলে কাজ করতে সহায়ক হবে। এছাড়া কোনো এলাকায় শান্তি ভঙ্গ হলে বা চাঞ্চল্যকর কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরজমিন পরিদর্শন করে ডিসিদের প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। একই সঙ্গে সরকারি ভবন ও জমি অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ অবৈধ দখল বন্ধ করার ক্ষমতা ডিসিরা কার্যকর করেন। এসব বিবেচনায় ‘জাস্টিস অফ দ্য পিস’ হিসেবে আগের মতো অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক। যৌক্তিকতায় বলা হয়েছে, পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা, প্রশ্নপত্রের গোপনীয়তা রক্ষা, সব ধরনের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলাসহ সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব পালনসহ যেকোনো প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্টি হওয়া দুর্যোগে জনজীবনের শান্তি রক্ষা ডিসিরা করে থাকেন। এছাড়া ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, খাদ্য সরবরাহ, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুষ্ঠু বাস্তবায়ন মনিটরিং, দুই শতাধিক কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন ডিসিদের করতে হয়।
এ জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারায় অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি মাঝামাঝি পর্যায়ে আছে। আমরা এনিয়ে কাজ করছি।