হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যবীমা কার্যকর করা হবে। অর্থের অভাবে দেশের কোনো মানুষ চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না, দরিদ্র জনগোষ্ঠী চিকিৎসা করাতে গিয়ে যেন আরও নিস্ব না হয় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবীমা কার্যকর করা হবে।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধিবেশনে স্বাস্থ্যখাতের বিশ্ব নেতাদের সামনে নির্ধারিত বক্তব্যে এমন লক্ষ্য ও অঙ্গীকারের কথা তিনি তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিৎ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাব্যয় মেটানোই আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।
তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের ধারায় আমরা ইতোমধ্যেই ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ কার্যক্রমের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র মানুষের সবধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমরা তিনটি উপজেলায় বিশেষ হেলথ স্কিম চালু করেছি। সেই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্যবীমা ব্যবস্থা কার্যকর করতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। যেটা এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে উঠেছে। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম অংশ হিসেবে পুষ্টির উন্নয়নকেও আমরা অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে চলছি। অপুষ্টি দল করার ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিকনির্দেশনার আলোকে কর্মপরিকল্পনাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
এছাড়া জাতীয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে কাজ চলছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি ঘটেছে, শিশু ও মাতৃ-মৃত্যু হার কমিয়ে আনা গেছে, সংক্রামক রোগেও মৃত্যু কমেছে।
রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি তুলে ধরে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে ওই দেশ থেকে বিতারিত হওয়া ১০ লাখের বেশি মানুষকে মানবিক কারণে আমরা বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে মানবতার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। তাদের কেবল আশ্রয়ই নয়, খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এ কাজে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আরও কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে সহায়তা করছে।
বাংলাদেশে ওষুধ খাত সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন কমদামে উচ্চ মানসম্পন্ন সব ধরনের ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
এর আগে গতকাল সকালে বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কার্যক্রম বিষয়ক পরিচালক ফাদিয়া সাদাহ্ জাতিসংঘ ভবনের এক সভাকক্ষে বৈঠকে মিলিত হন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। এ সময়ে বিশ্বব্যাংক পরিচালক জানান, রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যহত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আগামী মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য প্রস্তাব বিশ্বব্যাংক কর্তৃক অনুমোদিত হবে। মোহাম্মদ নাসিম এসময় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নসহ বিভিন্ন সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সহয়তায় চতুর্থ স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় পুষ্টিনীতির আলোকে একটি স্বাস্থ্যবান ও উৎপাদনক্ষম জাতি গঠনের লক্ষ্যে সরকার জনগণের মাঝে পর্যাপ্ত পুষ্টি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়া গতকাল অধিবেশনের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অন্যান্য সভাগুলোতে বাংলাদেশে পক্ষে অংশ নেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. এস কে রায়, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়াম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়, কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রকল্প পরিচালক ডা. আবুল হাসেম খান, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব মীর মোশারফ হোসেন।
সাইড মিটিংগুলোতেও বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা, অসংক্রামিত রোগের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।