মোংলায় চিংড়ি ঘের থেকে গ্যাস উদ্গিরণ হচ্ছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাগেরহাটের মোংলায় চিংড়ি ঘেরে সন্ধান মিলেছে ভ‚গর্ভস্থ গ্যাসের। উদ্গিরণ হওয়া এ গ্যাসের গতি নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় উদ্ভাবন ব্যবহার করে উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে। ব্যবহার করা হচ্ছে গৃহস্থালির রান্নার কাজে। ভ‚গর্ভস্থ প্রাকৃতিক এ গ্যাসের সন্ধান, উত্তোলন প্রক্রিয়া নিয়ে হইচই পড়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। এ নিয়ে নানা শঙ্কার মধ্যেও প্রতিদিনই সেখানে বাড়ছে উৎসুক জনতার ভিড়। বাপেক্সের একটি প্রতিনিধি দল বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করেছে।

স্থানীয়রা জানান, সম্প্রতি উপজেলার মিঠাখালীর মধ্যপাড়ার চিংড়ি চাষি দেলোয়ার তার চিংড়ি ঘেরে বালু উত্তোলন করতে ছোট পরিসরের ড্রেজার মেশিন ও পাইপ বসান। এ সময় হঠাৎ তীব্র বেগে বালি ও পানি মিশে প্রায় ১৫০ ফুট উপরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন চিংড়ি ঘের ও ড্রেজারের কর্মচারীরাসহ স্থানীয়রা। আর তখনই বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়।

পরে চিংড়ি ঘেরের মাটি ও পানির মধ্য হতে তীব্রগতিতে ভ‚গর্ভস্থের গ্যাস বের হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। এরপর স্থানীয় দুই ক্ষুদে ম্যাকানিক প্রাকৃতিক এ গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহারের পরিকল্পনা শুরু করেন। তাদের উদ্ভাবন ব্যবহার করে ভ‚গর্ভের এ গ্যাস পাইপ লাইন দিয়ে উত্তোলন ও গৃহস্থালির রান্না কাজে ব্যবহƒত হচ্ছে।

এ অবস্থায় উদ্গিরণ হওয়া গ্যাসের নমুনা সংগ্রহ করেছেন বাপেক্সের বিশেষজ্ঞরা। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মিঠাখালী এলাকার পূর্বপাড়ার ওই গ্যাস উদ্গিরণস্থল পরিদর্শন শেষে বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল নমুনা সংগ্রহ করেন। সংগ্রহকৃত নমুনার দুই স্তরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন তৈরিতে সময় লাগবে প্রায় মাসখানেক বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান হাওলাদার ওহিদুল ইসলাম। তিনি বাপেক্সের জেনারেল ম্যানেজার ল্যাব (পরীক্ষাগার)।

তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই জানা যাবে এ গ্যাসের ধরন। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি শ্যালো মার্স গ্যাস (লতাপাতা, গুল্ম পচা) অর্থাৎ উপরিভাগের মিথেন গ্যাস। তারপরও দুই ধরনের পরীক্ষায় একটিতে যদি হায়ার হাইড্রোকার্বনের উপস্থিতি পাওয়া যায় তাহলে সেটি হবে ভ‚গর্ভস্থ দাহ্য মূল্যবান বাণিজ্যিক গ্যাস। আর হায়ার হাইড্রোকার্বন না থাকলে হবে ভ‚-উপরিভাগের মিথেন (মাটির নিচের লতাপাতা-গুল্ম পচা গ্যাস। যা কিছুদিন ধরে উঠতে উঠতে এক সময়ে শেষ হয়ে যাবে। আর বাণিজ্যিক হলে তো অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহের পর ঘের ও বাড়ির মালিক দেলোয়ার শেখকে এভাবে লাইন টেনে চুলায় গ্যাসের ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন। কারণ এতে বাড়িসহ আশপাশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি রয়েছে। এ সময় বাপেক্সের ল্যাব বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ওহিদুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন বাপেক্সের অপর কর্মকর্তা খুলনার সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) মো. তৌহিদুর রহমান ও তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির বাগেরহাট জেলা আহŸায়ক মো. নুর আলম শেখ।

কালিয়াকৈরে গ্যাস লাইনের পাইপ ফেটে বের হচ্ছে গ্যাস : কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার এপেক্স ল্যান্ডজারি নামক পোশাক তৈরির কারখানার সামনে তিতাস গ্যাসের পাইপ লাইন ফেটে অনবরত গ্যাস বের হচ্ছে। এক সপ্তাহ গ্যাস বের হলেও সমাধান হচ্ছে না। এতে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

এলাকার প্রায় ৫-৬শ’ ফুট জায়গাজুড়ে কমপক্ষে ৩০-৪০টি স্থানে পাইপ ফেটে এ গ্যাস বের হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস কোম্পানির কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ফেটে যাওয়া পাইপ লাইন মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার দুুপুরে সরেজমিন গিয়ে বাস্তবচিত্র দেখা যায়, সড়কের পাশ দিয়ে বুদবুদ আকারে গ্যাস বের হচ্ছে।

তিতাস গ্যাস কোম্পানির চন্দ্রা জোনাল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ বিন ইউসুফ জানান, ঈদের ছুটির কারণে মেরামতের কাজ ধরা সম্ভব হয়নি। তবে দুই একদিনের মধ্যে কাজ ধরা হবে। এই এলাকায় গ্যাস পাইপে লিকেজ থাকার কারণে অনেক আবাসিক বাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর