পদ্মা পাড়ি দেবে বেতাগীর পান-সুপারি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলাচলের জন্য আগামী ২৫ জুন খুলে দেওয়া হচ্ছে পদ্মা সেতু। এ সংবাদে উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে বইছে আনন্দ। বেতাগীর সর্বস্তরের মানুষ আশা করছে, পদ্মা সেতু চালুর পর ব্যবসা-বণিজ্যসহ সব ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিশেষ করে এ জনপদের কৃষকদের উৎপাদিত পান ও সুপারি যাবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এতে ভীষণ খুশি কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বেতাগী থেকে ঢাকা যেতে আগে সময় লাগত ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর লাগবে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টা।

জানা গেছে, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে বেতাগীর পান-সুপারি দেশ-বিদেশে যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার উৎপাদিত পান-সুপারি এতো দিন নদীপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হত। আবার ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলায় বেশির ভাগ পণ্য আসত এই নদীপথেই। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ফেরিতে আটকা পড়া, পণ্য পঁচে যাওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল এতদিন। পদ্মা সেতু চালুর পর এসব প্রতিবন্ধকতার অবসান ঘটবে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বেতাগী পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হচ্ছে। এ পেশায় সাত শতাধিক পরিবার জড়িত। উৎপাদিত পান এখানকার জনগোষ্ঠির বাৎসরিক চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ২-৩ কোটি টাকা লাভ হচ্ছে। পান পঁচনশীল কৃষি পণ্য হওয়া ২-৩ দিনের মধ্য নষ্ট হয়ে যায়। ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র এ উপজেলার পানের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তা দ্রুত পৌঁছানো সম্ভব হত না।

পুটিয়াখালী গ্রামের সুকুমার হাওলাদার ও সুজিৎ ঘরামী জানান, ‘স্থানীয় বাজারে বেশি দাম পাওয়া যায় না। পাইকারি ও খুরচা বিক্রেতার কাছে কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। এবার অল্প সময় এই পান ঢাকায় পৌছানো যাবে এবং ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে। ’

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, ‘পান এবং সুপারি এ দুটোই উদ্যানজাত কৃষি পণ্য। এসব কৃষি পণ্য চাষে চাষিদের প্রশিক্ষণ এবং সুদমুক্ত কৃষি ঋণ দিয়ে সহায়তা প্রয়োজন। ’

পান ছাড়াও বেতাগী উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ করা হয়। উপজেলার বিবিচিনি, দেশান্তরকাঠি, গড়িয়াবুনিয়া, পুটিয়াখালী, বাসন্ডা, হোসনাবাদ, মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ, চান্দখালী, সড়িষামুড়ি ও কুমড়াখালীতে ব্যাপকভাবে সুপারি চাষ হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, দেশে এ উপজেলার পান ও সুপারির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে এসব কৃষি পণ্যের চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাবে।

বেতাগী পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবির বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্র ছাড়াও এ অঞ্চলের ব্যবসা-বানিজ্যের নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘বেতাগী থেকে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকায় পৌঁছতে পারব। মানুষের দীর্ঘদিনের একটি চাওয়া পূরণ হতে চলেছে। এর ফলে বিষখালীর সুস্বাদু ইলিশ ও অন্যান্য কৃষিপণ্য সহজে ঢাকায় পৌঁছে যাবে। এ অঞ্চলে বাড়বে শিল্প-কলকারখানা। সব শ্রেণির মানুষের উপকার হবে। ’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর