রৌমারী-রাজিবপুরে বন্যা, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাহাড়ি ঢলের ঘোলা-লাল পানি জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি অস্বাভাবিক গতিতে নেমে দু’কূল ছাপিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে আকস্মিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর, রৌমারী সদর, শৌলমারী, দাঁতভাঙ্গা, বন্দবেড় ইউনিয়ন এবং রাজিবপুর উপজেলার রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের অন্তত ৫০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

দুই উপজেলায় ৫৬ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। ৩৭টি বিদ্যালয়ের পাঠদান সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে ৫৯২ হেক্টর ফসলি জমি।

ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া রৌমারী-ঢাকা সড়কের পূর্ব অংশে পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করলেও এর পশ্চিম অংশে ব্রহ্মপূত্র, হলহলিয়া ও সোনাভরি নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে।

রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের খেওয়ার চর এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন  জানায়, চারিদিকে ঘোলা আর লাল পানি। বাপ-দাদার কাছে লাল পানির বানের কথা শুনছিলাম। এবার নিজের চোখে দেখতাছি পাহাড়ি ঢলের লাল পানির বান। রাস্তা পানির তলে থাকায় যাতায়াত খুব সমস্যা হইছে। নৌকা বা কলাগাছের ভেলা ছাড়া বের হওয়া যায় না।

রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের খেওয়ারচরের স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম  জানান, তার নির্বাচনী এলাকার অন্তত ৬ শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠেছে। রাস্তা-ঘাট তলিয়ে লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। ক্ষেত খামার তলিয়ে যাওয়ায় গবাদি পশুর খাদ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছে মানুষ। সেইসঙ্গে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এখন পর্যন্ত পানিবন্দি লোকজন কোনো সরকারি সহযোগিতা পায়নি।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আশরাফুল আলম রাসেল  জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে জিঞ্জিরাম, কালো ও ধরণী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে রৌমারী ও চর রাজীবপুর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের ৪৫টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রৌমারীর ৩০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক এবং ২৮৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে ৩২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এই পরিস্থিতিতে রৌমারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ পাওয়া ৩ লাখ টাকা দিয়ে শুকনো খাবার হিসেবে চিড়া, মুড়ি, চিনি, লবণ ও মোমবাতি কেনা হচ্ছে। যা দ্রুতই বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ করা হবে।

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল্লাহ জানান, জনপ্রতিনিধিদের বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে দুর্গতদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। তবে রৌমারী স্থলবন্দর পানিবন্দি হওয়ায় এই বন্দরের সঙ্গে জড়িত ৫/৬ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। যাতে তারা সহযোগিতা পান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর