নীলফামারীতে বাড়ছে কফির সুবাস

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পাহাড়ি জনপদকে ছাপিয়ে এবার নীলফামারীর কিশারগঞ্জে চাষ হচ্ছে কফির। কৃষকের আগ্রহ বাড়ায় কফি চাষ এখন ছড়িয়ে পড়েছে নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলায়।

ধান, গম, সরিষা আবাদ করে দাম না পাওয়ায় তারা ঝুঁকে পড়েছেন কফি চাষে। আগামীতে কফি চাষ করেই স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন তারা।

জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা সদরের মুন্সিপাড়া গ্রামের বিসমিল্লাহ্ নার্সারির মালিক আব্দুল কুদ্দুস নিজ উদ্যোগে ২০১৪ সালে প্রথম এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কফি চাষ শুরু করেন। তখন তিনি কক্সবাজারের জাহানারা গ্রিন অ্যাগ্রো ফার্ম থেকে ১৫০টি এরাবিয়ান কফির চারা সংগ্রহ করে দুই শতাংশ জমিতে লাগান। প্রথমে উড়ুন-গাইনে বাড়িতে কফি প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় সরবরাহ করে সফলতা পান। বর্তমানে তিনি নিজের কফি বাগান থেকে বীজ সংরক্ষণ, চারা উৎপাদন বিপণনের মাধ্যমে স্থানীয় উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা শহরগুলোতে সরবরাহ করে বছরে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করছেন। স্বপ্ন নয়, সফলতার সিঁড়ি বেয়ে হাঁটছেন তিনি।

উপজেলার পুটিমারী কাচারীপাড়া গ্রামের সুলতান আলী  জানান, অন্য ফসলের চেয়ে কফি চাষে লাভ বেশি। গাছের পরিচর্যা ও রোগবালাই কম হওয়ার পাশাপাশি গরু-ছাগলেও খায় না বলে বেড়া দিয়ে রাখতে হয় না। চারা রোপণের দুই বছরেই ফলন পাওয়া যায়। আর প্রতি কেজি কফি চার হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা যায়। তিনি ১০ শতাংশ জমিতে কফি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন।

সৌখিন কৃষকের পাশাপাশি উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্বাবধানে মাগুরা, গাড়াগ্রাম, রণচন্ডীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ছয়টি কফি বাগান। এসব বাগানে চাষ করা হচ্ছে ভিয়েতনামের উচ্চ ফলনশীল কফিয়া রোবাষ্টা জাতের কফি।

জেলার জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের সুনগর গ্রামের খাদিজা আক্তার ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিকা জাতের কফির চারা লাগিয়েছিলেন। গত বছর তার বাগানে প্রথম ফলন আসে। তিনি বলেন, আমার চার একর জমির ওপর বাড়ি এবং বিভিন্ন ফলের বাগান করেছি। বাগানের ৪০ শতাংশ জায়গায় ৫৮৬টি কফি গাছ আছে। এগুলোর মধ্যে ২৪৬টি গাছে গত বছর ফল আসে। ফলনও ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন নিয়মিতই এখানে এসে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া কফির ফল সংগ্রহের বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি।

নীলফামারী জেলার আবহাওয়ায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষের জন্য উপযোগী। এ জন্য ২০২১ সালে বছর ব্যাপী কফি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কয়েকটি উপজেলার মোট ৬০ বিঘা জমিতে নতুন করে রোবাস্টা জাতের চাষের জন্য বিনামূল্যে চারা বিতরণ করা হয়।

কফির আদি জন্মস্থান ইথিওপিয়ার কাফা অঞ্চলে। কিন্তু পঞ্চাদশ শতাব্দীতে ইয়েমেনে প্রথম কফি পানের প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর এটি সৌদি আরব, দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ ভারত হয়ে বাংলাদেশে চাষাবাদ শুরু হয়।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, কিশোরগঞ্জ আগাম আলু চাষের জন্য বিখ্যাত ছিল। কিন্তু এ অঞ্চলের মাটি কফি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে কফি প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র চালু হলে কৃষকরা কফি চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আর এটি রপ্তানি খাতেও একটি স্বর্ণময়ী ফসলে পরিণত হবে। এতে কৃষি অর্থনীতি সমৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানও বাড়বে।

এছাড়া সৈয়দপুরে কফি চাষের পাশাপাশি ত্বীন ও কমলা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। উপজেলার কামারপুকুরে এসব ফলের বাগান বাড়ন্ত পর্যায়ে রয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মমতা সাহা জানান, এ জনপদে এসব ফল চাষের উপযোগী। তাই বিষয়টিতে আমরা অনেকটা আশাবাদি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, কফি সাধারণত পাহাড়ি ফসল। তবে উঁচু এবং পানি জমে থাকে না এমন সমতল জমিতে কফি চাষ করা যায়। নীলফামারীর মাটি বেলে-দোঁআশ হওয়ায় এটিও উপযোগী। ইতোমধ্যে তিনজন কৃষক ৫২ শতাংশ জমিতে অ্যারাবিয়ান জাতের কফি চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। এছাড়া চাষিরা এখন কফি চাষেও আগ্রহী হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর