উজিরপুরে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা ১১ জন নিহত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বামরাইলে যমুনা লাইন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে এক শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আরো ২০ যাত্রী আহত হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বামরাইলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের ৬ জনের অবস্থা আশংকাজনক। বাসের সুপারভাইজারের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে চালক পালিয়েছে।

গত শনিবার রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি সকাল ৬টার দিকে বরিশাল মহানগরী থেকে প্রায় ২৮ কিলোমিটার দূরে এ দুর্ঘটনার কবলে পরে। বেশিরভাগ যাত্রীর অভিযোগ, ‘ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালানোর এক পর্যায়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের্র বিশাল গাছের ওপর আছড়ে পড়লে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। খবর পেয়ে উজিরপুর থানা পুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসের গৌরনদী ও উজিরপুরের দুটি ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ শুরু করে। নিহতদের বেশিরভাগের লাশ গাড়িটি কেটে বের করতে হয়েছে ।

নিহতদের মধ্যে যে ৭ জনের পরিচয় মিলেছে তারা হচ্ছেন, ঝালকাঠি সদরের নেয়ড়ী এলাকার মনির হোসেন হাওলাদারের ছেলে আরাফাত হোসেন হাওলাদার, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর ভেচকি এলাকার কুদ্দুস আকনের ছেলে নজরুল ইসলাম আকন, একই এলাকার রাকিব আকনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, বরগুনার বেতাগী উপজেলার কাজিরবাদ এলাকার মোবারক আলী বেপারীর ছেলে হালিম মিয়া, ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার সুতারকান্দা এলাকার মৃত আওলাদ আলীর ছেলে সেন্টু মোল্লা, বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার সুন্দরকাঠি গ্রামের মৃত আবুল কাশেম হাওলাদারের ছেলে রমজান হাওলাদার ও বরিশালের উজিরপুর উপজেলার মুন্ডুপাশা গ্রামের মনোরঞ্জন শীলের ছেলে মাধব শীল।

প্রাথমিকভাবে দশজনকে উজিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলেও অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। শের-ই-বাংলা হাসপাতালে ২০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
দুর্ঘটনাস্থলে আহত যাত্রীদের আর্ত চিৎকারে এলাকার পরিবেশ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়িটি গাছের সাথে সজোরে ধাক্কা লেগে তার ভেতরে ঢুকে গেলে হতাহত যাত্রীদের উদ্ধারে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। দমকলের উদ্ধার কর্মীরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও গাড়িটি কেটে হতাহতদের বের করেত ঘণ্টাকাল সময় লেগে যায়। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার কারণে সকাল ৬টা থেকে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা মহাসড়কে প্রায় ঘণ্টাখানেক যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলে উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়। নিহত অপর ৩ জনের পরিচয় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাওযা যায়নি। তবে ভান্ডারিয়া, মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটার অনেক লোকজন বরিশালে মর্গে নিহতদের লাশ দেখতে ভীড় করছেন।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেলিম ও কালু  জানান, তারা বাসের পেছনের দিকের সিটে বসা ছিলেন। দুর্ঘটনার সময় বাসের প্রায় সব যাত্রী ঘুমে ছিলেন। নিয়ন্ত্রণহীন বাসটি রেন্ট্রি গাছের ওপর আছড়ে পড়লে সকল যাত্রীই কমবেশি আহত হয়। বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়ায় এতবড় দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেন তারা। বাসটিতে তাদের আরো ৫ যাত্রী ওঠার কথা ছিল। কিন্তু বাসটি ছেড়ে দেয়ায় তারা পিছনের গাড়িতে ওঠায় প্রাণে বেঁচে যান। আহত যাত্রীরা চালককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তিরও দাবি জানান।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এসএম আখতারুজ্জামান জানান, চালককে খুঁজে বের করতে পুলিশ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।
বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট রকিবুর রহমান খান-এর নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার সকল খরচ সরকার বহন করবে এবং নিহতদের ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা জানান জসিম উদ্দিন হায়দার।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর