কবিতার ইতিহাসে নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ এক অনন্য সাধারণ রচনা সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, কবিতার ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ এক অনন্য সাধারণ রচনা। এক রাতেই তিনি বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের অনবদ্য এ কবিতাটি রচনা করেছেন। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে নজরুল রচনা করেন ১৪১ পঙক্তির এই ভূবনবিজয়ী কবিতা যার প্রথম শ্রোতা ছিলেন মুজাফফর আহমদ। তার সূত্রে জানা যায়, সে সময় বলপেন বা ফাউন্টেনপেন ছিল না। দোয়াতে বারে বারে কলম ডোবাতে গিয়ে তার মাথার সঙ্গে তার হাত তাল রাখতে পারবে না ভেবে নজরুল কবিতাটি প্রথমে পেন্সিলে লিখেছিলেন। কবিতাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল মানচিত্র। যেখানে বেদ-পুরাণ-উপনিষদ-গীতা মহাকাব্য থেকে ইসলামের অনুষঙ্গ অসামান্য দক্ষতায় চিত্রিত হয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আজ নজরুল স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে (টাউন হল) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসন আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্‌মুদ।

প্রধান অতিথি বলেন, রবীন্দ্রনাথের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন নজরুল। কিন্তু নজরুলের স্বাতন্ত্র্য হচ্ছে তিনি মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, সাম্য ও সম্প্রীতির কথা বলেছেন। কবিতা যে মানুষকে উদ্দীপ্ত করে, বিদ্রোহী করে- তার অনন্য উদাহরণ নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা।

বঙ্গবন্ধু কেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তার কারণ ব্যাখ্যা করে  ড. হাছান মাহ্‌মুদ বলেন, প্রায় পাঁচ হাজার পূর্বে বাঙালি জাতির উন্মেষ ঘটেছিল। আর বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস দেড় হাজার বছরের পুরনো। এ সুদীর্ঘকালে পুরো বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে কোনো রাজ্য বা রাষ্ট্র ছিল না। বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল নিয়ে একটি জাতিরাষ্ট্র গঠন করেন যার নাম বাংলাদেশ। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু নিরস্ত্র একটি জাতিকে একটি ভাষণের মাধ্যমে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করেছিলেন। জনযুদ্ধের মাধ্যমে একটি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। এ রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধু নজরুলের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। মুক্তি ও সাম্যের পক্ষে কথা বলার প্রেরণা তিনি নজরুল থেকে পেয়েছিলেন।

সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লার মাটি ও মানুষের সঙ্গে নজরুলের রয়েছে অটুট বন্ধন। ১৯২১ সালের এপ্রিল থেকে ১৯২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নজরুল কুমিল্লায় এসেছেন মোট পাঁচবার। সবমিলিয়ে থেকেছেন প্রায় ১১ মাস। নজরুলের দাম্পত্য জীবনের বন্ধনও ঘটেছিল কুমিল্লায়। কুমিল্লার দৌলতপুরে ৭৩দিন অবস্থানকালে নজরুল ১৬০টি গান ও ১২০টি কবিতা রচনা করেছেন। এখানকার রচনা নজরুলকে প্রেমিক কবি হিসেবে পাঠক দরবারে পরিচিত করেছে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নজরুলকে আকর্ষণ করেছিল। সে সময় তিনি সুদূর কলকাতা থেকে ছুটে এসেছেন ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ পূর্ব বাংলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। কে এম খালিদ বলেন, সে সময় যাতায়াত ব্যবস্থা তেমন ভালো ছিল না। কোনো যাতায়াত মাধ্যম ও রুট ব্যবহার করে নজরুল এদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছিলেন তা নিয়ে আগ্রহী গবেষকগণ গবেষণা করতে পারেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রয়োজনে এসব গবেষণাকর্মে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। স্মারক বক্তৃতা করেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও নজরুল গবেষক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন (রিমি) এমপি, কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান এবং কবিপৌত্রী খিলখিল কাজী ও মিষ্টি কাজী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান।

পরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নৃত্যনাট্যসহ ৩০ মিনিটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

#

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর