ডলারের সংকট কাটেনি মুদ্রাবাজারে বহুমুখী তদারকি জোরদার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডলারের সংকট থেকে উত্তরণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বহুমুখী তদারকি জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের তদারকির ফলে গত দুই কার্যদিবসে বাজারে ডলারের দাম বাড়েনি। আগের দামেই ব্যাংকে ডলার বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কার্ব মার্কেটে বা খোলা বাজারেও নগদ ডলারের দাম ব্যাংকের প্রায় সমান হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের জোগান বাড়ানো হয়েছে। তবে ব্যাংকে নগদ ডলারের সংকট প্রকট হয়েছে। বিদেশি দেনা শোধেও ডলারের সংকট আছে।

আন্তর্জাতিক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার রোববার বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ আন্তঃব্যাংকে ডলারের তেমন চাহিদা ছিল না। তার পরও প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা ৬০ পয়সা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে লেনদেন হচ্ছে খুবই কম। ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার না থাকায় আন্তঃব্যাংকে কেউ বিক্রি করতে চাচ্ছে না। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ব্যাংক দৈনিক লেনদেন শেষে তাদের মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে। এর বেশি থাকলে বাজারে বিক্রি করতে হবে। বাজারে বিক্রি করা সম্ভব না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিক্রি করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন ডলার কিনে নেয়। কিন্তু বর্তমানে বিদেশি সিটি ব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি, বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ডলারের প্রবাহ খুবই কম। বিশেষ নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলো প্রচণ্ড ডলার সংকটে রয়েছে। যেসব ব্যাংকের কাছে ডলারের প্রবাহ আছে তারাও আন্তঃব্যাংকে ডলার বিক্রি করছে কম। কারণ এলসির পেমেন্টের জন্য তারা নিজেদের কাছে ডলার রাখছে। এ ছাড়া করপোরেট প্যাকেজের আওতায় অন্য ব্যাংকে বেশি দামে বিক্রি করছে। করপোরেট প্যাকেজের নামে সর্বোচ্চ ৯৬ টাকা দরেও ডলার বিক্রি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়টি তদারকি শুরু করেছে। ফলে এখন করপোরেট বিক্রির হার কমেছে। একই ডলারের ক্রয় মূল্য ও বিক্রয় মূল্যেও ব্যবধান যাতে ১০ পয়সার বেশি না হয় সেদিকেও নজরদারি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর এলসি খোলা ও বকেয়া দায়দেনার তথ্য নিয়ে নিজেরা বিশ্লেষণ করে বাজারের সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, সামনের এলসির দেনা পরিশোধের চাপ কিছুটা কমবে। তবে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়বে। কেননা করোনার সময় যেসব ঋণের কিস্তি স্থগিত করা হয়েছিল সেগুলো এখন পরিশোধ করতে হচ্ছে। এলসি মার্জিন আরোপের ফলে নতুন এলসি খোলার হার কমেছে। বিশেষ করে অপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলা অনেক কমেছে। এখন জ্বালানি তেল, সার, গ্যাস, কৃষি ও শিল্প উপকরণ আমদানির এলসি খোলার হার বেড়েছে। রিজার্ভ থেকে এখন অগ্রাধিক প্রকল্পের পাশাপাশি সরকারি খাতের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য ডলার ছাড়া হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার প্রায় তিন কোটি ডলার ছেড়েছে। এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভ বেড়ে চার হাজার ২৩০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে।

এদিকে ডলার বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত বুধবার সোনালী ব্যাংকে একটি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। বৈঠকে তারা বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অপ্রয়োজনীয় খাতে ডলারের জোগান কমানো, রেমিট্যান্স বাড়াতে হুন্ডির প্রবণতা কমানো, ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের ব্যবধান কমিয়ে আনা, ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী রিজার্ভ থেকে ডলারের জোগান আরও বাড়ানো। তারা ব্যাংকগুলোকেও এলসি খোলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও ডলারের দামের বিষয়টি তদারকি করছে। প্রতিদিন নিজেদের ব্যাংকের যে বিনিময় হার ঘোষণা করা হয়, এর চেয়ে কোনো ক্রমেই যাতে বেশি দামে ডলার বিক্রি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে। কোনো দেনা শোধ করার জন্য আগাম ডলার মজুত যাতে না রাখা হয় সেদিকে দৃষ্টি রেখেছে। কেননা, আগে অনেক শাখা গ্রাহকের এলসির দেনা শোধ করতে আগাম ডলার রেখে দিত। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদরকিও বেড়েছে।

তবে বাজারে নগদ ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যে কারণে নগদ ডলারের দাম বেড়েই চলেছে। বেসরকারি খাতের প্রায় সব ব্যাংকই ৯৫ টাকা দরে ডলার কিনে ৯৭ টাকা বিক্রি করছে। আগে ৯৮ টাকা করে বিক্রি করত। এখন বিক্রি মূল্য এক টাকা কমলেও ক্রয় মূল্য কমেনি। ফলে প্রবাসীরা উপকৃত হচ্ছে। কেননা তাদের অনেকে রেমিট্যান্সের অর্থ নগদ এনে ব্যাংকে বিক্রি করছে। প্রায় সব ব্যাংকেই নগদ ডলার ৯১ থেকে ৯৫ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।

কার্ব মার্কেটে গত মঙ্গলবার প্রতি ডলার ১০৪ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এখন তা কমে ৯৬ টাকায় নেমে এসেছে। রোববার দিলকুশা এলাকায় ভাসমান ব্যবসায়ীরা ৯৪ টাকা করে ডলার কিনেছেন। বিক্রি করেছেন ৯৬ টাকা দরে। কিছু ব্যাংকের চেয়েও কার্ব মার্কেটে দাম কম। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কার্ব মার্কেটের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেছেন। যে কারণে তারাও ডলারের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে এখানে ডলার যেমন বিক্রি কমেছে, তেমনি কেনাও কমেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর