শ্যামপুর মাদরাসার সুপার আমিনুল ও কৃষিশিক্ষক ফরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদকে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. আমিনুল হক ও সহকারী কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদের বিরুদ্ধে অবৈধ বেতন-ভাতা ভোগ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহে স্থানীয় সুশীল সমাজের একজন সচেতন নাগরিক জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ অভিযোগ দায়ের করেছেন।

গত ২৭ এপ্রিল এ সংক্রান্ত লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভাগীয় কার্যালয় ময়মনসিংহের উচ্চমান সহকারী মো. সাইফুল ইসলাম।

মাদরাসাটি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ১নং গোপদিঘী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের শ্যামপুর গ্রামের মো. জজ মিয়ার (বর্তমানে মরহুম) রেজিস্ট্রিকৃত দলিলে দান করা একশ শতক জায়গার ওপর বিগত ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর শিক্ষাবর্ষ বা পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৫ সালে। কিন্তু সুপার ধর্মীয় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিজ কব্জায় নিয়ে অর্থ-লোপাট ও একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বানোয়াট অজুহাত দেখিয়ে অস্থায়ী অনুমতির ভিত্তিতে মাদরাসাটিকে ২০১১ সালে শ্যামপুর গ্রাম থেকে নিজ এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন ধলাই-বগাদিয়া বাজারে সরিয়ে নেয়।

এ সুযোগে স্বেচ্ছাচারীতার আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারে ব্যবহার করায় আজ প্রায় বারো বছর হতে চলল পাঠদান কার্যক্রম নিষ্ক্রিয়তাসহ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানটি কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে এখানে-ওখানে। ফলে প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত থাকা বর্তমানে নতুন বগাদিয়া গ্রামে মো. হারিছ মিয়া বেপারির (৮০) বসতভিটায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে সরকারি এমপিওভুক্ত সর্বজনীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসাটি।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তারই ধারাবাহিকতায় সহকারী কৃশিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ বছরের পর বছর ধরে সুপার মো. আমিনুল হক ওরফে কাজী মৌলভীর যোগসাজশ ও পৃষ্ঠপোষকতায় মাদরাসায় উপস্থিত থাকা কিংবা শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমে কোনোপ্রকার দায়িত্ব পালন ছাড়াই নির্ধারিত সময়ে সরকারের কোষাগার থেকে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা ইস্যু করে নিচ্ছেন। তার ইনডেক্স নং-২০৯৭৮১২।

কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ শিক্ষার্থীদের শ্রেণি পাঠদানের পরিবর্তে মিঠামইন বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যক্তিগত নানান কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। বিগত ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ শুধুমাত্র ম্যানেস্ট্রি অডিটের সময় উপস্থিত ছাড়া এবছরের ১২ মার্চ পর্যন্ত টানা অনুপস্থিত থেকেছেন। সুপার মো. আমিনুল হকের বিধিবদ্ধ ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি আর সহকারী কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদের কর্তব্য কাজে অবহেলা ও অনিয়ম-অন্যায় চূড়ান্ত মাত্রায় পৌঁছলে তা ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী-অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

ফলে এসব অন্যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে তড়িঘড়ি করে সুপার মো. আমিনুল হকের সহায়তায় ১৩ মার্চ মাদরাসায় এসে বিগত টানা প্রায় চার বছরের উপস্থিতি একদিনে শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে পুনরায় চলে যান কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ। এহেন পরিস্থিতিতে এলাকাজুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়লে গত ২৬ মার্চ থেকে কর্মস্থলে উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।20220427_105242
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের দরুন ৫৪৪ দিন পরে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও সহকারী কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদের বোন জামাই মিঠামইনের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হক সরকারি কলেজের সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো. নূরুল হক ভূঞার স্থানীয় অবাঞ্ছিত প্রভাব খাটিয়ে এবং সেসঙ্গে সুপারের দেওয়া অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এত দিন ধরে মাদরাসা কামাই করে আসছেন। তিনি বিগত ২০০৫ সালের মার্চে কর্মস্থলে যোগদান করেন এবং ২০১০ সালে মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হলেও বরাবরই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকেছেন।

এছাড়া মাঝে একসময় করোনা সংক্রমণ আবার বেড়ে যাওয়ায় এবছর গত ২১ জানুয়ারি হতে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ২৫ মার্চ পর্যন্ত গরহাজির ছিলেন সহকারী কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্তের শিকার জেনেও সুপার মো. আমিনুল হক নিজে লাভবান হতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গেছেন।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরের কেন্দ্রবিন্দু ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাবেক সংসদীয় আসন। তিনি গত ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর বিকালে অষ্টগ্রাম খেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বলেছিলেন, ‘ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে আমি শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছি; কিন্তু বাড়ছে না শিক্ষার মান। হাওরের শিক্ষার মান নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই।’

অথচ শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোংরা গ্রাম্য রাজনীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়মসহ সর্বোপরি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির সাথে যুক্ত করে ফেলায় হাওরে শিক্ষাব্যবস্থায় নেমে এসেছে এ বেহাল দশা। বিশেষ করে শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসাটির করুণ অবস্থা।

সরেজমিনে তদন্ত করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি বিধানসহ কৃষিশিক্ষক হাসান মো. ফরহাদ অবাঞ্ছিত প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ধরে ভোগ করা বেতন-ভাতা সরকারের কোষাগারে ফেরত এবং সেসঙ্গে যথেচ্ছাচার অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতা অপব্যবহারের সাথে লেপ্টে থাকা সুপারিন্টেন্ডেন্ট মো. আমিনুল হকের বিরুদ্ধে আইনি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।  #

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর