গাইবান্ধার ‘ইচ্ছে পূরণের মেলা’ শেষ হচ্ছে আজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘ইচ্ছে পূরণের মেলা’ শেষ হচ্ছে আজ ৩১ বৈশাখ। গাইবান্ধার দারিয়াপুরের ঐতিহাসিক মীরের বাগানকে ঘিরে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ শুরু হয় এই মেলা।

মীর বাগানের সঙ্গে ইতিহাস খ্যাত মীরজুমলার সম্পর্ক আছে বলে কিংবদন্তী রয়েছে। তাই মানুষ প্রতিবছর বৈশাখ মাসে এই মেলায় নানা মানত নিয়ে আসেন।  মনের আশা পূরণের আশায় পশু কোরবানি দিয়ে শিরনি বিতরণ করেন।

গাইবান্ধা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই মীরের বাগান। প্রবেশ পথেই রয়েছে তোরণ।  বিশাল আম বাগানের জন্য এক সময় মীরের বাগানের খ্যাতি ছিল। মসজিদ সংস্কার করার সময় ১০১১ সাল লেখা একটি কালো পাথর পাওয়া যায়। পাথরের গায়ের লেখা অনুযায়ী ১০১১ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয় বলে ধারণা করা হয়।

মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন পীর শাহ সুলতান গাজী, মোশারফ হোসাইন ও সরফ উদ্দিন হোসাইন। বাংলা ১৩০৭ সালে কলকাতার পীর সৈয়দ ওয়াজেদ আলী বাহারবন্দ পরগনার ঘন জঙ্গল থেকে পীর ইবনে শরফুদ্দিনের স্মৃতিবাহী কবর ও মসজিদের ধ্বংসাবশেষ উদঘাটন করে।

এই এলাকার প্রবীণ মানুষ সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ সিদ্দিক বলেন, ৩শ ৯৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই মাজার ও সমজিদের সাথে শাহ সুলতান গাজী নামের একজন ধর্মপ্রচারক ও বীর যোদ্ধার সর্ম্পকের কথা জানা যায়।

নাট্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী লক্ষ্মণ রায় বলেন, ছোট বেলা থেকে দেখে আসছেন মাজারকে কেন্দ্র করে এখানে মেলা বসে। রোগ বালাই দূর হবে- এই ধারণা থেকে মেলায় আসেন নারী পুরুষ ।

প্রচলিত আছে তিনি এবং তার অনুসারীরা ধর্ম প্রচার করতে এসে মারা গেলে এখানে সমাহিত করা হয়। সেই থেকে ময়মনসিংহের ক্বারী করিম বক্সের উত্তরাধিকারীগণ বংশ পরম্পরায় মোতওয়াল্লী হিসেবে এই ওয়াকফ সম্পত্তিটি রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। সেই সময়ের ইট দিয়ে এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদ, উপরে তিনটি গম্বুজ ও আজান দেওয়ার জন্য পাশে একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের প্রবেশ পথের দক্ষিণ পাশে তিন জনের কবর রয়েছে । সেগুলো পরবর্র্তী পর্যায়ে সংস্কার করা হয়।

মাজারের মতোয়ালী ক্বারী করিম বক্স বলেন, কিছু না পেলে তো আর দূর-দুরান্ত থেকে নারী পুরুষ আসতো না । মনের ইচ্ছা পূরণ, রোগ বালাই থেকে মুক্তি, সন্তান হওয়াসহ নানা আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ মীরের বাগানে আসেন। তারা মাজার প্রাঙ্গণে গরু, খাসি, হাঁস, মুরগি জবাই করে রান্না করেন এবং মাজারে দান করেন। এই শিরনি নিজেরা খেলে আশা পূর্ণ হয় বলে জানা যায়।

মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম বলেন, কিছু না কিছু তো একটা পায় মানুষ। তবে এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে ধর্ম প্রচার করতে এসে প্রাণ দিয়েছেন অনেকেই । তাদের মাজারকে ঘিরেই বসে মাসব্যাপী মেলা ।

ঘাগোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুজ্জামান রিংকু বলেন দীর্ঘদিন থেকে মানুষ এই মাজারে আসেন তাদের রোগ বালাই থেকে, সন্তান হওয়ার আশা- এসব নিয়ে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর