বিমানে বিকল্প ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রযুক্তি আবিষ্কারের দাবি যুবকের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় বিমানের ইঞ্জিন বিকল হলে বিকল্প ইঞ্জিন ব্যবহারের প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন কাজী জহির রায়হান (৩৮) নামে এক যুবক। তার দাবি- স্বল্প ব্যয়ের এ প্রযুক্তি স্থাপন করা হলে একদিকে ব্যয়বহুল বিমানগুলো যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হবে না, তেমনি জানমালের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। টানা ১৫ বছর গবেষণা শেষে এই প্রযুক্তির নামকরণ করেছেন ‘বিডি ০০৭ এন’। প্রযুক্তিটি বাস্তবায়নে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন এই যুবক।

কাজী জহির রায়হান নারায়ণগঞ্জের গোগনগর ইউনিয়নের মশিনাবন্দ এলাকার কাজী কবির হোসেনের ছেলে। তিনি স্থানীয় সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সেখানেই বাংলা সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন।

ঢাকা কলেজের বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হলেও গদ্য আর পদ্যের চেয়ে কারিগরি বিদ্যাটাই যেন একমাত্র পছন্দ ছিল জহির রায়হানের। পারিবারিক কারণে অনার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষাটা দিতে না পেরে হতাশ হলেও হাল ছাড়েননি। সঙ্গী ছিল সেই কারিগরি বিদ্যাটাই। ১৫ বছরের নিরলস শ্রম আর একাগ্রতার কাছে হার মেনেছে হতাশা। বাংলা সাহিত্যের ছাত্র জহির রায়হান আবিষ্কার করেছেন বিমানের বিকল্প ইঞ্জিনের থিউরি। এখন আর্থিক সহযোগিতা পেলে এই থিউরিকে তিনি বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই এলাকায় বেশ ডানপিঠে ও মেধাবী হিসেবে পরিচিত কাজী জহির রায়হান। যন্ত্রাংশ নিয়ে তার আগ্রহ বেশি থাকায় স্থানীয়ভাবে বন্ধু মহলে তিনি হারকিউলিস নামেও পরিচিত। রায়হানের বাড়িতে প্রবেশের সড়কটি যতটা সরু ঠিক তার বিপরীত তার চিন্ত-চেতনা। ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য কিছু করতে চাইতেন তিনি। তাই ছাত্রজীবনে শুরু করেন সাংবাদিকতা। স্থানীয় একটি পত্রিকায় কাজ করতেন। পথশিশুদের জন্য করেন পাঠশালা।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে তেহেরানে একটি ইরানি সামরিক বিমান স্কাইস্ক্রাপারের ওপর ভেঙে পড়ে প্রাণ হারান ১১৫ জন। ঘটনাটি রায়হানের মনকে নাড়া দেয়। এরপর থেকে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি কীভাবে হ্রাস করা যায়, সে চিন্তা সবসময় তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। সেই থেকেই শুরু করেন এ বিষয়ে গবেষণা। তবে শুরুতে পরিবারে সমর্থন না পেয়ে দুই বছর গোপনে ইন্টারনেটে ও স্থানীয়ভাবে বিমান সংক্রান্ত নানা বই সংগ্রহ করে পড়েন। দেখেন সংশ্লিষ্ট নানা ডকুমেন্ট্রি। এরপর ২০০৭ সাল থেকে বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন আবিষ্কারের কাজে হাত দেন জোরেশোরে। একে একে ১৫ বছর পর ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রযুক্তিটির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছান।

কাজী জহির রায়হান বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করব। সেই থেকেই সংবাদিকতা পেশায় আসি। সম্ভবত ২০০৫ সালে একটি বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। এতে শতাধিক মানুষ মারা যায়। আমার খুব কষ্ট লাগে, সেই থেকেই আমার মাথায় আসে বিমান দুর্ঘটনায় কীভাবে জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করা যায়। সেই থেকেই আমি এটাকে আমার ড্রিম প্রজেক্ট হিসেবে মনে করে কাজ শুরু করি।

বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হয়ে বিমানের এই প্রযুক্তি নিয়ে কীভাবে কাজ করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে বিষয়টি আমার নিজের কাছেও অসম্ভব মনে হয়েছিল। পরে আমি বিভিন্ন স্থান থেকে বিমান সংশ্লিষ্ট বইপত্র সংগ্রহ করি। এ থেকে আমার একটা বেসিক ধারণা জন্মায়। তবে আমার অনুপ্রেরণা ছিল বিমানের আবিষ্কারক অরভিল রাইট ও উইলবার রাইট। তারা সাইকেল মিস্ত্রি হয়ে যদি বিমান আবিষ্কার করতে পারেন, তবে আমি কেন পারব না। সেই থেকে চলে আমার গবেষণা। যখন পঞ্চম বর্ষে তখন আমি কিছুটা নিশ্চিত হই যে এটা সম্ভব, দশম বর্ষে মোটামুটি নিশ্চিত হই যে এটা সম্ভব। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হই।

এই প্রযুক্তি কী ধরনের বিমানে ব্যবহার করা যাবে এবং এর ব্যয় কত হবে জানতে চাইলে কাজী জহির রায়হান বলেন, আমার এই প্রযুক্তিটি সাতটি বিশেষ ইঞ্জিনের মাধ্যমে মোট ১৪১টি যন্ত্রাংশের সংযুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত হবে। প্রযুক্তিটি বাস্তবায়নে ৫২ জন টেকনিশিয়ানের দুই মাসের মতো সময় লাগবে। এবং দুইশ ৮০ থেকে তিনশ আসনের বিমানের জন্য খরচ হবে ৩২ লাখ টাকা। এই প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের আকার ও ওজন বিমানের জন্য বিবেচনা করেই তৈরি হবে।

মানুষের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় প্রযুক্তিটি যেন বাস্তবায়ন করতে পারেন, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন কাজী জহির রায়হান।
গোগনগর ইউনিয়নের মশিনাবন্দ এলাকার বাসিন্দা লিটন দেওয়ান (৩৯) বলেন, ‘অয় ছোটকাল থেকেই একটু ইঞ্জিনিয়ারিং বেশি করতো। সাইকেল-হুন্ডা যাই পাইতো তাই লইয়া ইঞ্জিনিয়ারিং করতো। রায়হানরে আমরা সবাই হারকিউলিস বইল্লা ডাকতাম। তয় যা বানাইসে এইটা যদি মানুষের কাজে লাগে, তাহলে এইটা আমাদের মহল্লার সুনাম, দেশের সুনাম।’

রায়হানের বাবা কাজী কবির হোসেন বলেন, শুরুতে রায়হানকে অনেক বুঝাইতাম। পড়াশোনায় বেশ ভালো ছিল। চাইছিলাম বিদেশে পাঠাইয়া দেই, কিন্তু অয় নাছোরবান্দা। এমন বিমান বানাইবো, যেই বিমান ইঞ্জিন নষ্ট হইলেও ভেঙে যাবে না। প্রথমে পাগল মনে হইতো, পরে মনে হইলো না সে কিছু একটা করবে। তবে যেই জিনিসটা আবিষ্কার করছে, এইটা সরকারি সহায়তা ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব না। সরকার এই প্রযুক্তির কারিগরি দিক বিবেচনায় নিলে তবেই প্রযুক্তিটি মানুষের কল্যাণে কাজে আসবে।

গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজর আলী জানায়, আমি শুনেছি আমার এলাকর মশিনাবন্দ গ্রামের রায়হান নামে একটি ছেলে বিমানের বিকল্প ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছে। তবে আমি সরেজমিনে দেখিনি। যদি সে এ রকম কিছু করে থাকে, তবে এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

 

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন জাপানে ছিলাম। করিগরি বিষয়ে যে কোনো উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ শেষে যদি প্রযুক্তিটি সফলতা পায়, এটি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর