সবুজ সংকেত মিললেই রাজনীতিতে সম্রাট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামিনে মুক্তির পরও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) আছেন তিনি।

তার চিকিৎসা চলছে বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের অধীনে। সম্রাটের অনুসারীদের দাবি, তাদের নেতা শারীরিক সুস্থতা ও দলের উপর মহলের সবুজ সংকেত মিললেই রাজনীতির মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন।

তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা সম্রাটকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, তাকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছাড়া যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড।

এদিকে সম্রাটের জামিন ঠেকাতে হাইকোর্টে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।

জামিনে কারামুক্তির পর থেকেই সব বাধা পেরিয়ে হাসপাতালেই ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন তার অনুসারীরা। তাদের অনেকেই বলেছেন, সম্রাটকে দল থেকে বহিষ্কারের দালিলিক কোনো প্রমাণপত্র নেই।

ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতারের পর যুবলীগের তখনকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ সম্রাটকে বহিষ্কারের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এর কোনো দালিলিক ভিত্তি নেই।

দলের পক্ষ থেকে তার বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারে কোনো বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি। সম্রাটের অনুসারীদের দাবি, তাদের ‘নেতা’ ফের রাজনীতিতে ফিরছেন। শারীরিক সুস্থতা ও দলের উপর মহলের সবুজ সংকেত মিললেই রাজনীতির মাঠে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন তিনি।

সম্রাটের বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, ‘ওই সময়ে অনেক কিছু অগোছালো ছিল। তখন সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তৎকালীন চেয়ারম্যান।’ সম্রাটের বহিষ্কারাদেশ নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিলের কাছে সম্রাটের বহিষ্কারাদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘আপনারাই তো তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের কথা লিখেছেন।’ দলীয় কার্যালয়ের অফিস ফাইলে সম্রাটকে বহিষ্কারের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র রক্ষিত আছে কিনা সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আড়াই বছরের বেশি সময় কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হতেই সম্রাটকে নিয়ে সুর পালটে ফেলেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এটাকেই সম্রাটের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত হিসাবে দেখছেন তার অনুসারীরা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম মাসুদ  বলেন, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি। তাকে বহিষ্কারাদেশের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র নেই। তিনি এখনো দলের মহানগর দক্ষিণের সভাপতি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সম্রাটের সঙ্গে দেখা করেন ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ এক নেতা। যুগান্তরকে তিনি বলেন, মুক্তি পাওয়ায় তার মধ্যে উচ্ছ্বাস ছিল। ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে।

বিপদের দিনে তার পাশে যারা ছিলেন তাদেরকে পেলেই জড়িয়ে ধরছিলেন। অনেকের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন।

তার কথায় রাজনীতিতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ পেয়েছে। তবে দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তির ‘গ্রিন সিগন্যাল’-এর আগে তিনি সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াবেন না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জামিনে মুক্তির খবর পেয়েই হাসপাতালে গিয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন-এমন বেশ কয়েকজন অনুসারীর সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। তারা জানিয়েছেন, সম্রাটের রাজনীতিতে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

মাঠকর্মীদের মধ্যে এখনো তার প্রভাব ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। দলীয় প্রধানের অনুমতি পেলেই তিনি সক্রিয় হবেন। শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর তিনি রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হতে দলীয় প্রধানের নির্দেশনাও চাইবেন।

সেখান থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ মিললেই তিনি আবার আগের মতো চষে বেড়াবেন রাজনীতির ময়দান। দলীয় প্রধানের ইতিবাচক মনোভাব না থাকলে আপাতত রাজনীতি থেকে দূরেই থাকবেন তিনি।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেও সম্রাটের রাজনীতিতে ফেরার ইঙ্গিত মিলেছে। সম্রাটের ভাই রাসেল আহমেদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আপাতত আরও বেশ কিছু দিন তিনি হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে পুরোপুরি সুস্থ হতে চান।

তবে তার চিকিৎসার ব্যাপারে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। মেডিকেল বোর্ড বিদেশে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দিলে দ্রুতই তাকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নেবেন।

মেডিকেল বোর্ড দেশে চিকিৎসার পরামর্শ দিলে সেটাই করা হবে। সম্রাটের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই রাজনীতি থেকে তো কখনো বিদায় নেননি। তিনি কর্মীবান্ধব নেতা হিসাবে সর্বত্র পরিচিত। এখন দলীয় প্রধান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত বলে আমরা মেনে নেব।’

সম্রাটকে হাসপাতালে থাকার পরামর্শ : বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, সম্রাটকে এ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেবে মেডিকেল বোর্ড।

এতদিন তার অন্যত্র চিকিৎসা নেওয়ার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন পরিবার চাইলে যেকোনো হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে পারে।

বিএসএমএমইউয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রায়হান মাসুম মণ্ডল বলেন, তিনি কিছু সময় স্থিতিশীল থাকেন, আবার কিছু সময় অস্থিতিশীল। তার ‘সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ’ সিনড্রোম আছে।

এর সঙ্গে ভাল্ব রিপ্লেসমেন্ট (হার্টের ভাল্ব প্রতিস্থাপন) আছে। যখন প্রথম এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন, তার হৃদস্পন্দন এলোমেলো ছিল। যতক্ষণ তার জটিলতাগুলো ঠিক না হচ্ছে, তার এমন জায়গায় থাকতে হবে যাতে, দ্রুত সিসিইউ কিংবা কার্ডিওলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, তার শরীরে একটি ধাতব বস্তু আছে সেখানে কারেন্ট দিয়ে দিয়ে ইলেকট্রোফিজিও স্টাডি করব। এতে আরেকটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ জন্য হাইলি ইকুপমেন্ট (উন্নত চিকিৎসা সরঞ্জাম) আছে এমন জায়গায় যাওয়া ভালো। ঢাকায় আমরা এমন জায়গা এখনো ডেভেলপড (উন্নতি) করতে পারিনি।

তিনি সিঙ্গাপুরের কথা বলেছেন, সেটা অবশ্যই ভালো জায়গা। তিনি চাইলে তার চেয়েও ভালো জায়গায় যেতে পারেন। আমরা আসলে ইলেকট্রোফিজিওলজি স্টাডিতে অতটা সক্ষম নই।

প্রসঙ্গত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা সম্রাট ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িয়ে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর গ্রেফতার হন।

তার বিরুদ্ধে এখন অস্ত্র, মাদক, অর্থ পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের চারটি মামলা বিচারাধীন। আড়াই বছর কারাবাসের পর সব মামলায় জামিন পেলে বুধবার তিনি মুক্তি পান। এর পর থেকে গুঞ্জন শুরু হয় সম্রাট কি তাহলে আবার রাজনীতিতে ফিরছেন।

জামিন ঠেকাতে হাইকোর্টে যাচ্ছে দুদক : ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জামিন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আশা করছি, আগামী সোমবার আদালতে এ আবেদন দাখিল করতে পারব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে মামলার কাগজপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। আদালত বন্ধ থাকায় আবেদন করতে বিলম্ব হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর