স্কুল সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে চার সদস্যের পদত্যাগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ‘বদলগাছী লাবণ্য প্রভা পাইলট ও কমিউনিটি গার্লস হাইস্কুল’র সভাপতির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে কমিটির চার সদস্য পদত্যাগ করেছেন। ফলে কমিটি ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ১৩ এপ্রিল রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর আবেদন করেছেন প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম।

বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সভাপতির অপসারণসহ নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, আটজন সদস্য নিয়ে দুই বছর মেয়াদী বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়। চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কমিটির মেয়াদ ছিল। গত ২০/৮/২১ তারিখে মজিদা বেগম নামে কমিটির এক সদস্য মারা যাওয়ার পর সাত সদস্য নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল।

১২ এপ্রিল ম্যানেজিং কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় সভাপতি আব্দুস সালাম অনুপস্থিত ছিলেন। তার অনুপস্থিতে শিক্ষক প্রতিনিধি তোফাজ্জল হোসেনের প্রস্তাবে এবং আরেক শিক্ষক প্রতিনিধি আকতার জাহানের সমর্থনে অভিভাবক সদস্য সুমন হোসেনকে সভাপতি নির্বাচিত করে আলোচনা হয়।

আলোচনায় উঠে আসে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম পর পর তিনবার সভায় অনুপস্থিত থাকায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হয়। এছাড়া সভাপতি বিরুদ্ধে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে মতপার্থক্য ও গুরুত্ব না দেওয়া, প্রতিটি বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও একক আধিপত্য বিস্তারসহ বিদ্যালয়ের স্বার্থের পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

পরে সহকারী শিক্ষক (গণিত) তোফাজ্জল হোসেন, সহকারী শিক্ষক আকতার জাহান ও সহকারী শিক্ষক মনজুয়ারা বেগম এবং অভিভাবক সদস্য সুমন হোসেন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

তারা বলেন, সভাপতি আমাদের মতামতকে গুরুত্ব দেন না। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে সভায় অনুপস্থিত থাকেন। প্রতিটি বিষয়ে স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও একক আধিপত্য বিস্তার করতে চান। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টা করছেন। ভকেশনাল শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের বেতন শিটে স্বাক্ষর করলেও আমাদের (সাধারণ শিক্ষক) বেতন শিটে স্বাক্ষর না করায় বেতন পাইনি। বেতনের ওপর আমাদের সংসার চলে। সামনে ঈদ। এখন কষ্ট করে দিনগুলো পার করতে হবে।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, উপজেলাবাসী জানে আমি কী ধরনের ব্যক্তি। আমার বিরুদ্ধে একটা আজগুবি অভিযোগ উত্থাপন করলে তো হবে না। তবে কমিটির সদস্যরা কার কাছে কিভাবে পদত্যাগ করেছেন আমার জানা নেই।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক তার নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ের বিষয়ে বার বার মিটিং ডাকতে বলা হলে তিনি সময়ক্ষেপণ করেন। প্রধান শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা করছেন। প্রধান শিক্ষককে শোকজ করা এবং জবাব চাওয়া হয়েছে। জবাবের এখনো সময় আছে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২ এপ্রিল মোবাইল ফোনে সভাপতি আব্দুস সালাম তার পছন্দের দুই প্রার্থীকে সহকারী প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমাকে মিটিং ডাকতে বলেন। আমার বাচ্চা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে থাকায় মিটিং ডাকা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি আমাকে ছাড়াই মিটিং করেন যেখানে একজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সভাপতির এমন কার্যক্রমে ১২ এপ্রিল আলোচনা সভা হয় যেখানে সাতজন সদস্যের মধ্যে তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং একজন অভিভাবক সদস্যসহ চারজন পদত্যাগ করেন। এতে কমিটির কার্যকারিতা আর থাকে না এবং কমিটি ভেঙে যায়। পরে বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করা হয়।

তিনি বলেন, কমিটি ভেঙে যাওয়ার পরও গত ১৭ এপ্রিল সভাপতি আমাকে শোকজ করেন। প্রশাসনিকভাবে তাকে বার বার হয়রানির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম জিল্লুর রহমান বলেন, কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোর্ডে একটি আবেদন করেছেন। আমার কাছেও একটি কপি আছে। যেহেতু কমিটির বেশির ভাগ সদস্যই পদত্যাগ করেছেন এবং কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে। যদি বোর্ড চাই কমিটি ভেঙে দিতে পারবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর