রমজানের শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে সারা বছর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজান মাসে রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। রোজা মুসলমানদের আদর্শ চরিত্র গঠন, নিয়মানুবর্তিতা ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের শিক্ষা দেয়। সত্যিকার মুমিন হিসাবে গড়ে ওঠার অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাস রমজান।

রমজানে ইবাদতের পাশাপাশি মানবিক কিছু বিষয়েও শিক্ষা অর্জন করা হয়। অভুক্ত-অনাহারে থেকে এক ধরনের সাধনা করা হলো রোজার মৌলিক প্রতিপাদ্য। রোজা মানুষকে অনাহারি অভুক্ত মানুষের কথা ভাবতে শেখায়। পৃথিবীর দেশে দেশে ক্ষুধা, দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের প্রতিচ্ছবি রোজাদারের সামনে ভেসে ওঠে।

আমাদের প্রিয় নবিজি (সা.) মানুষকে আহার করানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। মন ভরে ইফতার বিতরণ করতে বলেছেন। রোজাদারকে ইফতার করানোর মধ্য দিয়ে রোজাদারের ভেতর মানুষকে আহার করানোর একটি মানসিকতা তৈরি হয়। অপরের পাশে দাঁড়ানোর এ মূল্যবান মানসিকতার মধ্য দিয়ে আভিজাত্যের একটা চর্চা নিজেদের জীবনে সৃষ্টি হয়। তাই বছরের বাকি দিনগুলোতেও সৃষ্টির প্রতি যথাযথ বদন্যতা প্রদর্শন করতে হবে।

রমজানে কর্মচারীদের কষ্টের বোঝা হালকা করার নির্দেশ এসেছে। শ্রমিকদের প্রতি দয়াপরবশ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। ইসলামে শ্রমিকের অধিকার অসামান্য। তার শ্রমমূল্য ও সামাজিক অধিকার ইসলামে সুন্দরতম উপায়ে সংরক্ষিত। মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করাও একটি ইবাদত। নবিজি (সা.) বলেছেন-‘তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে যার আচরণ ভালো, যার চরিত্র সুন্দর’ (বুখারি)।

মাহে রমজানে মুমিন বান্দাদের মধ্যে দান-খয়রাতের আগ্রহ বেড়ে যায়। এটিও আল্লাহর অনুগ্রহ। সম্পদের মালিক আল্লাহ। বান্দা নিছক আমানতদার। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সম্পদ ব্যয় করা মুমিনের প্রধান গুণ। ধনীর সম্পদে অভাবী ও বঞ্চিতদের প্রাপ্য রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়েছে কুরআন-হাদিসে। রমজানে মুমিন বান্দারা আল্লাহর এ বিশেষ হুকুম পালনে আরও আগ্রহী হয়, কারণ এ মাহে রমজানে অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি পুণ্য অর্জন হয়। এ কারণেই মাহে রমজানে সাদাকাতুল ফিতর ও জাকাত আদায় করা হয়। নবিজি (সা.) সব সময় দানের হাত সম্প্রসারিত রাখতেন। অতএব, রমজান শেষ হলেও এসব ইবাদত অব্যাহত রাখা উচিত।

রমজানে ইবাদত-বন্দেগিতে মুমিনের হৃদয়ে নবপ্রেরণার উদ্রেক ঘটে। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন-‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার’ (সূরা বাকারা ১৮৩)। রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হয়। আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশানুযায়ী মানবজীবন পরিচালনা করার নামই হচ্ছে তাকওয়া। ইসলামে তাকওয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান কোনো কাজ নেই। তাকওয়া মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ সম্পদ।

মাহে রমজান ও রোজা মুসলিম উম্মাহকে যে প্রশিক্ষণ দেয়, তা পরবর্তী জীবনের সবক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হওয়াই এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। অতএব, মাহে রমজানের এ বিদায়ক্ষণে আমাদের এ চিন্তা করা উচিত যে-এ পবিত্র মাহে রমজান আমাদের যে শিক্ষা ও চারিত্রিক প্রশিক্ষণ দিয়ে গেল, তা আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের বাকি এগারো মাসে কীভাবে প্রয়োগ করতে পারি, কাজে লাগাতে পারি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সারাটা বছর রমজানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর