দুই ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঝলসে গেলো শত বিঘা ধানক্ষেত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাট সদর উপজেলার আর.বি.এম ও পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর বিবিসি নামক দুটি ইটভাটার বিষাক্ত ও গরম ধোঁয়ায় ঝলসে গেছে প্রায় দুই শতাধিক বিঘার ধানক্ষেত। এছাড়া আম, জাম, নারকেল, কলা, শসা, লাউসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ক্ষেত একই ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এ ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরুপণ করেনি কৃষি বিভাগ।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ৩ ফসলি জমির এ জেলায় ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসে বারবার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসন বরাবরই নীরব ভূমিকায় থেকেছে। ৩ ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। এ কারণে জয়পুরহাটে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে ইটভাটা।

প্রায় প্রতি বছর কোনো না কোনো ইটভাটার বিষাক্ত ও গরম ধোঁয়ায় ঝলসে বা পুড়ে যাচ্ছে কৃষকের শত শত বিঘা নানান জাতের ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর গেলো এক সপ্তাহে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল এলাকার ১টি ও পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার ১টি ইটভাটার বিষাক্ত ও গরম ধোঁয়া সর্বনাশ করেছে অর্ধ শতাধিক কৃষকের শতাধিক বিঘা বোরো ধান, শাক-সবজিক্ষেত ছাড়াও আম, জাম, কলাসহ নানান ফলমূলের গাছের।

জমির বেশিরভাগ ধান গাছে ধানের শীষ দেখা দিয়েছে। কিছুদিন পরই কৃষকের ঘরে উঠবে সোনার ফসল। কৃষকরা সেই ধান বিক্রি করে মানুষের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করে দুই পয়সা লাভের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল এলাকায় ও পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার শতাধিক কৃষকের স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

পুরানাপৈল এলাকার কৃষক গাজীউল হক বলেন, আমার একবিঘা জমির ধান ও একবিঘা কলা বেলায়েত হোসেন লেবুর ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক টাকা খরচ করে আমরা ফসলগুলো লাগিয়েছিলাম। এখন আমাদের কী হবে? আমরা এই ভাটার মালিকের বিচার চাই, সেই সঙ্গে আমরা ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।

পুরানাপৈল এলাকার কৃষক ও কৃষক প্রতিনিধি বেলাল হোসেন বলেন, এই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে আমার আড়াই বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যতদিন যাচ্ছে, নষ্টের পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পুরানাপৈলে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ৮-৯টি ভাটার অনুমোদন কীভাবে দেওয়া হয় সেটিও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।

পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এলাকার কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, প্রতি বিঘা ৭ হাজার টাকা দরে অগ্রিম টাকা দিয়ে অন্যের কাছ থেকে ৭ বিঘা জমি নিয়ে ধান চাষাবাদ করেছি। লাভ তো দূরের কথা এখন খরচের টাকা নিয়ে চিন্তিত। ইটভাটার গ্যাসের কারণে আমার মতো এলাকার বহু কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে সেই দায়ভার নেবে কে? সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

সোনাপুর বিবিসি ইটভাটার স্বত্বাধিকারী আরিফ হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের ইটভাটার কারণেই যে জমির সব ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা ঠিক নয়। তবে কিছু কিছু জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো আমরা পরে দেখব।

তবে আর.বি.এম ইট ভাটার মালিক বেলায়েত হোসেন লেবু সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা হলেও কথা বলতে রাজি হননি।

 

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, সোনাপুর বিবিসি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে যেসব জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে মাঠ পরিদর্শন করে সেসব ফসলের ক্ষতির পরিমাণ যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য স্থানীয় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কৃষকরা যদি এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে তাহলে কৃষি বিভাগ তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতা (ইউএনও) আরাফাত হোসেন বলেন, এ ঘটনায় কৃষকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী র্কমর্কতাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর