১০ মেডিক্যাল শিক্ষার্থীর পাশে বসুন্ধরা গ্রুপ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরিশালের বানারীপাড়ার সাদিয়া আফরিন হারিছা পড়তে যাবেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার অন্তরা খাতুন নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের জন্য। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার তাজগীর হোসেনকে যেতে হবে খুলনা মেডিক্যাল কলেজে।

এই তিনজনসহ এমন ১০ জন শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁরা শুধু ভর্তি পরীক্ষায়ই নয়, আসলে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন।

তাঁদের বাকি পথচলা সহজ করতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাঁদের মেডিক্যাল কলেজে পড়ালেখার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে দেশের শীর্ষ এই শিল্পগোষ্ঠী।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীতে বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া ভবনের সম্মেলনকক্ষে জড়ো হয়েছিলেন এই আলোকিত মুখগুলো। সঙ্গে ছিলেন তঁদের মা, বাবা অথবা স্বজনরা। সন্তানদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিসহ পড়ালেখা চালিয়ে নেওয়া নিয়ে যাঁরা এত দিন দুশ্চিন্তায় ছিলেন, কাল তাঁরা যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

শুভসংঘের আয়োজনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের জানানো হয়, বসুন্ধরা গ্রুপ তাঁদের প্রত্যেককে পড়ালেখার খরচ বাবদ প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা শিক্ষাবৃত্তি দেবে। মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাস করে বের হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই বৃত্তি পাবেন। আর আজ প্রাথমিকভাবে ভর্তি ও এক মাসের হোস্টেল খরচসহ অন্যান্য খরচের জন্য তাঁদের প্রত্যেকের হাতে ৫৮ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়।

মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ফল প্রকাশের পর শতবাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়া তরুণ এই শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাঁদের গল্প পাঠকের কাছে তুলে ধরে কালের কণ্ঠ। শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া বাকি সাত শিক্ষার্থী হলেন ঠাকুরগাঁও সদরের সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন। ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজে পড়তে যাবেন বাগেরহাটের চিতলমারীর সুক্লা চিন্তাপাত্র। দিনাজপুর কাহারোলের শারমিন আক্তার ভর্তি হবেন পাবনা মেডিক্যাল কলেজে। রংপুর মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জয়পুরহাট সদরের শারমিন আক্তার। যশোরের কেশবপুর উপজেলার ইমামা ইসলাম ইমা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে, নাটোর সদরের রাকিব হোসেন চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজে এবং পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার মোসা. শাবনূর জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের একান্ত সচিব মাসুদর রহমান মান্না।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন সাদিয়া আফরিন হারিছা। তিনি বলেন, ‘যেদিন আমার মেডিক্যাল ভর্তির ফল প্রকাশ পায়, সেদিন আমার বাড়িতে আনন্দের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। সেটা আমাদের পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু কালের কণ্ঠ নিউজ করার পর আমার সম্পর্কে সবাই জানতে পারে। পরে অন্যান্য পত্রিকা, টেলিভিশনও নিউজ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে, বিদেশ থেকে অনেক মানুষ আমাকে এবং আমার মা-বাবাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি সবাইকে গর্ব করেই বলেছি, আমি রিকশাওয়ালার মেয়ে। রিকশা চালিয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বাবা আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘এখন বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে; আমাদের এই সবার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হচ্ছে, বসুন্ধরা গ্রুপ নয়, যেন পুরো দেশ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই আজ বলছি, আমরাও দেশের পাশে দাঁড়াব। আমরাও গরিবের ডাক্তার হতে চাই। ’

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত সুক্লা চিন্তাপাত্রের বাবা প্রেমানান্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আনন্দ লাগছে যে মেয়েটার দায়িত্ব বসুন্ধরা গ্রুপ নিয়ে নিল। আমার পক্ষে তাঁর পড়ানোর খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। ’

ইমদাদুল হক মিলন শিক্ষার্থীদের নিশ্চিন্তে, সাহসের সঙ্গে আগামীর পথচলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আশা করি, ডাক্তার হয়ে তোমরা তোমাদের অভিভাবক ও আমাদের স্বপ্ন পূরণ করবে। ’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘এখানে যাঁরা বসে আছো সবাই অদম্য মেধাবী। এখন তোমাদের একটাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত-আগামীকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। আর তোমাদের কাছে প্রত্যাশা, তোমরা গরীবের ডাক্তার হবে। ’

অনুষ্ঠানে নিউজ টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ, দেশ ও মানুষের কল্যাণে। কল্যাণের কাজগুলো বসুন্ধরা করে থাকে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের মাধ্যমে। বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগিতায় আপনারা সফল হয়ে দেশ ও মানুষের পাশে থাকবেন, এটাই চাওয়া। ’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের একান্ত সচিব মাসুদর রহমান মান্না বলেন, ‘আপনারা যুদ্ধ করে একটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। সামনে আরো যুদ্ধ আছে। আজ থেকে আপনাদের সঙ্গে এই যুদ্ধে বসুন্ধরা গ্রুপ যুক্ত হলো। আশা করি আপনারা আপনাদের স্বপ্নের সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছবেন। ’

কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আশা করি, কয়েক বছর পর এই মুখগুলো আরো উজ্জল হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশকে আলোকিত করবে। তবে তার জন্য আর পেছনে না তাকিয়ে আনন্দ ও সাহসের সঙ্গে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। ’

প্রসঙ্গত, বসুন্ধরা গ্রুপ করোনাকালে উত্তরবঙ্গের ৫০ হাজার মানুষকে এক মাসের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। গত শীতে দেড় লাখ কম্বল বিতরণ করেছে। অন্তত একশ পরিবারকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে। গরু-ছাগল হাঁস-মুরগী কিনে দিয়েছে অন্তত চারশ পরিবারকে। দিয়ে আসছে শিক্ষা বৃত্তি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর