ব্যর্থতার তকমা মুছতে চায় ঢাকা মহানগর বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতীতের ব্যর্থতার তকমা মুছে আগামীদিনে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে ঢাকা মহানগর বিএনপি। ইউনিট থেকে থানা পর্যন্ত যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

এ লক্ষ্যে দুই সিটিতে গঠন করা হয়েছে একাধিক উপকমিটি। ইতোমধ্যে উত্তরের ৭১টি ও দক্ষিণের ৭০টি ওয়ার্ডে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে দুই সিটির সব থানা কমিটি।

কাউন্সিলের মাধ্যমে এসব কমিটি দ্রুত পুনর্গঠনে কাজ চলছে। শিগগিরই ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন শেষ করা হবে। এরপর কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে পুনর্গঠন করা হবে মহানগর বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অতীতে ঢাকা মহানগর বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে শতভাগ সফলতা দেখাতে পারেনি এটা সত্য। তারা চেষ্টা করেছে কিন্তু সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে তা সম্ভব হয়নি।

এবার অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ঢাকা মহানগরে নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। এরা পরীক্ষিত নেতা। আন্দোলনমুখী একটা নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বর্তমান কমিটি সফল হবে বলে আশা করি। তারা সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মতে, আন্দোলনের সূতিকাগার হিসাবে পরিচিত ঢাকা। কিন্তু বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা মহানগর বিএনপি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি।

সারা দেশ থেকে ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হলেও রাজধানীর ভেতরে এর প্রভাব পড়েনি। তারা মনে করেন, দেশের তৃণমূল পর্যায়ে যেভাবে আন্দোলন হয়েছে তার অর্ধেক ঢাকায় হলে বিজয় ঘরে তোলা সম্ভব হতো। শুধু আন্দোলন নয়, অতীতের কয়েকটি কমিটি মহানগর পুনর্গঠনেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কোনো কমিটিই ওয়ার্ড ও থানা কমিটি করতে পারেনি।

২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যর্থতার অভিযোগে ঢাকা মহানগরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই বছর ১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ নানা কোন্দলে সেই কমিটি সফলতা দেখাতে পারেনি। দীর্ঘদিনেও তারা পুনর্গঠন করতে পারেনি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকাকে দুভাগ করে সংগঠনে গতি আনার উদ্যোগ নেয় বিএনপির হাইকমান্ড।

২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরকে দুভাগ করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। হাবীব উন নবী খান সোহেলকে সভাপতি ও কাজী আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করে দক্ষিণে ৭০ সদস্যের এবং এমএ কাইয়ূমকে সভাপতি ও আহসান উল্লাহ হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে উত্তরে ৬৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এ কমিটিও প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনেও ততটা সফলতা দেখাতে পারেনি তারা।

মহানগর কমিটির বারবার ব্যর্থতার পর অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ২ আগস্ট ঘোষণা করা হয় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। দক্ষিণে আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক ও রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়। আর উত্তরে ৪৭ সদস্যের কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় আমানউল্লাহ আমানকে এবং সদস্য সচিব সাবেক ফুটবলার আমিনুল হক।

নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেয়। ইউনিটি ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনতে উত্তরে আটটি ও দক্ষিণে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।

একজন যুগ্ম-আহ্বায়কের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম প্রতিটি জোনের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রতিটি টিম ওয়ার্ডে গিয়ে নেতাকর্মীদের মনোবল, বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা ও কাদের নেতৃত্বে আসা উচিত এসব বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে। উপ-কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেন সেজন্য কাউকে নিজ এলাকায় রাখা হয়নি।

ইতোমধ্যে উত্তর বিএনপির ৭১টি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত কমিটি নিয়ে কিছুটা অভিযোগ থাকলেও সবমিলিয়ে যোগ্যদের জায়গা দেওয়া হয়েছে বলে জানান মহানগরের নেতাকর্মীরা। মহানগরের সব গ্রুপকে সমন্বয় করে ওয়ার্ড কমিটি করা হয়েছে। ফলে কমিটি ঘোষণার পর তেমন বিদ্রোহ দেখা দেয়নি। ঘোষিত ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিট কমিটি গঠনের নির্দেশে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা সেই কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। ইউনিট কমিটি গঠন করা হলে কাউন্সিলের মাধ্যমে হবে ওয়ার্ড কমিটি। ওয়ার্ড শেষ হওয়ার পরই থানা কমিটি গঠন শুরু হবে।

দক্ষিণে পুরোদমে চলছে পুনর্গঠনের কাজ। ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রায় সবটিতেই করা হয়েছে কর্মিসভা। রোববার একযোগে ৭০টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক  বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মহানগরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে কাজ দ্রুত করলেও আমাদের মূল লক্ষ্য প্রতিটি কমিটিতে যাতে যোগ্য ও ত্যাগীরা স্থান পান। ইতোমধ্যে আমরা ৭১টি ওয়ার্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছি। তারা চারশ ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ করেছে। ঈদের পরেই এসব কমিটি ঘোষণা করা হবে। এরপরই ওয়ার্ড এবং সবশেষ করা হবে থানা কমিটি। সব কমিটি ঠিকমতো করতে পারলে মহানগর নেতৃত্ব আগামীদিনে কিছু একটা করতে পারবে বলে আশা করি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিন  বলেন, আগামী দিনের আন্দোলনে কার্যকরী ভূমিকা রাখার মতো করেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে সাজানো হচ্ছে। যোগ্য ও ত্যাগীরা যাতে বাদ না পড়েন সে ব্যাপারে আমরা বেশ সতর্ক। তৃণমূলের চিত্র তুলে আনতে দক্ষিণ বিএনপিকে আটটি জোনে ভাগ করা হয়েছে। যোগ্য ও ত্যাগীদের সমন্বয়ে গঠন করা হবে সব কমিটি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর