স্থায়ী ঠিকানা লাল-সবুজ ঘর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জমির পরিমাণ ১২.৩৫ একর। ঘর উঠছে ৪০০টি। প্রতিটি ঘর নির্মাণে খরচ দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। দুটি শোবার কক্ষসহ একেকটি ঘরে আছে রান্নার কক্ষ, শৌচাগার ও বরান্দা।

আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ৪০০ ভূমিহীন পরিবারের দেড় হাজারের বেশি মানুষের থাকার জায়গা হবে এখানে।

ঘর ছাড়াও প্রকল্প ঘিরে বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, বাজার করার পরিকল্পনা আছে। থাকছে বনায়ন। পরিকল্পনা আছে, এখানে বসবাসকারীদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। এটিকে বলা হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এর অবস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মনকশাইর গ্রামে। কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে যেতেই প্রকল্পটি চোখে পড়ে।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার মনকশাইর গ্রাম পরিদর্শনে যায়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প। আর প্রকল্প এলাকায়ই সব কিছু থাকছে, তাই এটি অন্যগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে প্রকল্পের কাজ। ৩০০ শ্রমিক কাজে ব্যস্ত। তাঁদের কেউ রড কাটছেন, কেউ বা বাঁধছেন, কেউ টিনের চালা লাগানোয় ব্যস্ত, কেউ বা দেয়ালে পলেস্তারার কাজ করছেন, কেউ ঘরের দেয়ালে পানি দিচ্ছেন। তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই চলছে এ কর্মযজ্ঞ।

প্রকল্পের সামনে যেতেই দেখা মেলে আলাদা একটি কক্ষের। ওই কক্ষের সামনে প্রকল্পের বিশদ বর্ণনা দেওয়া আছে। সেখানে উল্লেখ আছে, তিন হাজার ৪৯৪ বর্গফুটে বিদ্যালয়, তিন হাজার ৪৫ বর্গফুটে মসজিদ, তিন হাজার বর্গফুটে মন্দির, ছয় হাজার ৪৭৫ বর্গফুটে খেলার মাঠ এবং পাঁচ হাজার ৯৬৪ বর্গফুটে পুকুর করা হবে। প্রকল্পের একটু ভেতর দিকে গেলে কোথায় কী হবে তার নির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড লাগানো আছে। টিনের চালের রঙের কারণে ওপর থেকে দেখতে লাল-সবুজের পতাকার আদল দেখা যাবে বলে সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা আছে। পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বসবাসকারীদের জন্য।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক  ও কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। আগামী জুলাই নাগাদ ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব  ছাড়াও এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কি, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর প্রকল্প পরিচালক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ প্রকল্পে মোট ৪০০ পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এর মধ্যে খাড়েরা ইউনিয়নের ১৮০ পরিবার, বিনাউটির ৬০ পরিবার, কুটির ৬০ পরিবার, মূলগ্রামের ৪০ পরিবার, কসবা পৌর এলাকার ৬০ পরিবার এখানে ঘর পাবে। পতিত শ্রেণির জমিতে বালু ও মাটি ফেলে জায়গাটি বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই অনেকে দখল করে রেখেছিল। মাটি ভরাট কাজের জন্য দুই দফায় ৮৪০ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের প্রধান জানান, কয়েক মাস ধরে একসঙ্গে ৩০০ শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই শ্রমিকদের তদারক করা হচ্ছে। শ্রমিকরাও এখানে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। এখানেই তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কসবা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি ঘরের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। অন্য ঘরগুলোও যেন দ্রুত শেষ করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।

কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  বলেন, ‘বসবাসকারীরা যেন সব ধরনের সুবিধা পায়, সে কথা চিন্তা করে এখানে বিদ্যালয়, বাজার থেকে শুরু করে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের বরাদ্দের বাইরে স্থানীয়ভাবে, বিশেষ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সহযোগিতা নিয়ে অন্য পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ’

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর