হাওর বার্তা ডেস্কঃ চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বেলগাছি গ্রামে প্রচুর গাছপালা। গাছপালার কারণেই বোধ হয় একসময় এই গ্রামে পাখিদের আনাগোনা ছিল বেশি। শহরের কাছাকাছি হওয়ায় শিকারিদেরও আনাগোনা ছিল। গ্রামের কারোরই তা ভালো লাগত না। ২০১১ সালে স্নাতকের ছাত্র বখতিয়ার হামিদ শিকারিদের কবল থেকে এলাকার পাখিদের বাঁচানোর উদ্যোগ নেন। গড়ে তোলেন একটি যুব সংগঠন। সংগঠনের ছেলেদের নিয়ে গ্রামের গাছে গাছে মাটির পাতিল বেঁধে দেন। ধীরে ধীরে তাঁর এই উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
বখতিয়ার এখন পাশের গ্রাম গাইদঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। চাকরির পাশাপাশি এখনো পাখিদের দেখভাল করেন।
গ্রামের সবাই এখন তাঁর সঙ্গে আছেন। কোনো শিকারি এখন আর সাহস পায় না এ গ্রামে ঢোকার। গ্রামে চোখে পড়ার মতো স্থানগুলোতে ‘পাখি শিকার করা নিষেধ’, ‘পাখি মারবেন না’—এ রকম অনেক সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। গ্রামে গেলেই দেখা যাবে গাছে গাছে ডালে বেঁধে রাখা মাটির কলস, পাতিল। এসবের ভেতরে ঢুকে নিরাপদে বিশ্রাম নেয় পাখিরা। পাতিলগুলো এমনভাবে গাছের সঙ্গে বাঁধা, যাতে বৃষ্টির পানি ভেতরে ঢুকতে না পারে। ঢুকলেও তা বের হয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ছিদ্র আছে।
শীতের অতিথি পাখিরাও বেলগাছি গ্রামটি খুঁজে পেয়েছে। এখন গ্রামের বিলের পাশে, ছোট পুকুরগুলোতে কিংবা বড় গাছের অনেক উঁচু ডালে তারা এসে বসে পড়ে। শিকারি নেই, গ্রামবাসীও বিরক্ত করে না। মাঠে ব্যস্ত কৃষকের পাশেই একঝাঁক পাখি মাটি থেকে খাবার খুঁটে খায়। পাখিরা বুঝে গেছে, এই গ্রামের কেউ তাদের শত্রু নয়।
শুধু বেলগাছি নয়, বখতিয়ার হামিদের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো জেলায়। তিন বছর আগে চুয়াডাঙ্গা পৌর কর্তৃপক্ষ পাখিদের বাসস্থান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। সেটিও ছিল বেলগাছির আদলে। পৌর এলাকার গাছে গাছে বেঁধে দেওয়া হয় মাটির কলস। নবগঙ্গা নদীর পাশে, কেদারগঞ্জ এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়। উদ্যোগ নেন তৎকালীন পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামও পুলিশ লাইনসের ভেতরের গাছে গাছে মাটির কলস বেঁধে পাখিদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করেন।
এভাবে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন এলাকায় এবং জেলার অনেক গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে এই কার্যক্রম।
বেলগাছি গ্রামের স্কুল শিক্ষক বখতিয়ার হামিদ বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগ সফল। আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। শুরু থেকেই গ্রামের মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। পাখির পাশাপাশি আমরা এখন কুকুর-বিড়ালসহ অন্য প্রাণীদের নিয়েও কাজ করছি। কোনো প্রাণী অসুস্থ বা আহত হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি।’