ইসি গঠনে নতুন আইন চায় গণফোরাম, বিকল্পধারার সার্চ কমিটিসহ ৩ প্রস্তাবনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে নতুন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে গণফোরাম। অন্যদিকে ইসি গঠনে সার্চ কমিটিসহ তিন দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ।

স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে চলমান সংলাপের সপ্তম দিনে গতকাল (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয় দল দুটি।

গণফোরামের কার্যকারী সভাপতি মুকাব্বির খান এমপি নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং বিকল্প ধারা বাংলাদেশের মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল মান্নান, এমপি, এর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল পৃথক পৃথক ভাবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনের দরবার হলে আলোচনায় অংশ নেন।

সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, গণফোরাম নেতৃবৃন্দ সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আইন প্রনয়ণসহ কয়েক দফা প্রস্তাবনা দেন।

গণফোরাম নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের কোনও বিকল্প নেই। এ জন্য দরকার স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন। তারা আশা প্রকাশ করেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ও মতবিনিময়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন ফলপ্রসূ হবে।

ইসি গঠনে আইন প্রণয়ন এখন একটি গণদাবী উল্লেখ করে গণফোরামের প্রতিনিধি দল বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সরকার নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়ন করবে। তারা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দেন।

পরে সন্ধ্যা ৭টার সংলাপে বিকল্পধারার প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতির কাছে আইন প্রণয়নসহ তিন দফা প্রস্তাব পেশ করেন। তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রেরিত “অনুসন্ধান কমিটি”র কাছে দেয়া নামগুলো থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারের নাম প্রস্তাবের সুপারিশ করেন।

অনুসন্ধান কমিটি গঠনের জন্য বিকল্পধারা দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ঊর্ধ্বতন পদাধিকারীদের নাম সুপারিশ করেন। সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের মধ্যে সংলাপে অংশ নিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের মুখপাত্র মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এমপি।

রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নির্বাচন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার উদ্যোগ নেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।

নেতৃবৃন্দকে বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন যাতে গঠন করা যায় সেজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সুচিন্তিত মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য পরামর্শ গ্রহণের যথার্থতা রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনীতিবিদদের অনুকরণীয় কিছু করে যেতে হবে, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জন্য কিছু করে যেতে পারেন।

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

গত ২০ ডিসেম্বর প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে সংলাপে বসে রাষ্ট্রপতি হামিদ। এখন পর্যন্ত মোট ১০ টি রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

৩ জানুয়ারি সংলাপে যোগ দিবে গণতন্ত্রী পার্টি সন্ধ্যা ছয়টায়, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি সন্ধ্যা সাতটায় এবং বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়।

৪ জানুয়ারি সংলাপ হবে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সন্ধ্যা সাতটায়।

৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা হবে জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সাথে সংলাপ এবং সন্ধ্যা সাতটায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর সাথে।

৬ জানুয়ারি গণফ্রন্টের সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায় সংলাপের কথা রয়েছে।

এদিকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে আলোচনা হবে ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায়।

অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার তারিখ এখনো নির্ধারিত হয়নি।

এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন।

বর্তমান ইসির পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন করবেন, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর