হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘ইঞ্জিনরুমের ওদিকে প্রচুর আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ ছেয়ে যায়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে লোকজন নিচে পড়ছিল। পোড়া মানুষের গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে।’

এমনই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে আগুনে পুড়ে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির মাহমুদ (১৮)। এইসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মা, নানি এবং নেজাদ নামের এক ভাগিনাকে নিয়ে অভিযান-১০ লঞ্চে ঢাকা থেকে বরগুনা যাচ্ছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি অভিযান-১০ নামের একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণ হারায় ৪০, শতাধিক আহত নিখোঁজ রয়েছে অনেক যাত্রী।

সাব্বির মাহমুদ বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চে প্রচুর যাত্রী থাকায় আমরা কেবিন পাচ্ছিলাম না, অনেক খোঁজাখুঁজির পর অভিযান-১০ লঞ্চের দ্বিতীয় তলার পেছনের দিকে ডেকে জায়গা পাই। লঞ্চ কিছুক্ষণ চলার পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা টের পেলাম আমাদের কেবিনের মেঝে অসহ্য রকম গরম হয়ে যাচ্ছিল। পরে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ওখানে দায়িত্বরত স্টাফরা আমাদের নিচতলায় মেইন গেটের পাশে অন্য আরেকটি স্টাফ কেবিনের ব্যবস্থা করে দেয়।

তিনি বলেন,  রাত গভীর হলে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, আম্মু নেজাদ ও নানিআপু লুডো খেলছিল। হঠাৎ আম্মুর ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভাঙে। বাইরে গিয়ে দেখি ইঞ্জিনরুমের ওদিকে প্রচুর আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ ছেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে লোকজন নিচে পড়ছে। মানুষের আহাজারিতে আমরা নিরুপায় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। আমাদের সামনেই জ্বলন্ত মানুষ নিচে পড়ছিল।

তিনি আরও বলেন, পোড়া মানুষের গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে গেছিল। এমন সময় আমরা দৌড়ে গিয়ে লঞ্চের একদম সামনের খোলা যায়গায় চলে যাই। আম্মুকে বললাম ওদেরকে নিয়ে লাফ দাও। আমি নিজেও কোনোকিছু না ভেবে সামনে লাফ দেই, আমার সঙ্গে আম্মু, নানিআপু ও নেজাদ ও লাফ দেয়। আমি লাফ দিয়ে তীরে উঠলেও আম্মুরা পানিতে পড়ে যায়। পরে তারা তীরে উঠে আসে। আমি কোমরে ব্যথা পেয়েছি।

সাব্বির বলেন, এরপর স্থানীয়রা আমাদের ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। আমি রাস্তায় শুয়ে পড়ি। একটু পর অ্যাম্বুলেন্স এসে আমাদের ঝালকাঠি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আজ দুপুরে বাসায় আসি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী লঞ্চ এমভি অভিযান-১০ এ আগুন লেগে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। আহত রয়েছে আরও শতাধিক। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।