সাব্বির আর মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে না

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বরগুনা সদর ইউনিয়নের ঢলুয়া গ্রামের দরিদ্র এক শ্রমিক সুমন বয়াতি ঘরে জন্ম হলো ফুটফুটে এক শিশুর। শিশুটির মা শখ করে তার নাম রাখলেন সাব্বির হোসেন। অভাবের ঘরে শিশুটি হয়ে ওঠে মা-বাবার কাছে একটুকরো চাঁদ। নিজেদের অক্ষরজ্ঞান না থাকলেও সাব্বিরকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন মা-বাবার।লেখাপড়া করিয়ে সাব্বিরকে পাইলট বানাবে তার মা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমে অল্প অল্প করে সঞ্চয় শুরু করে সাব্বিরের বাবা সুমন। দেখতে দেখতে ফুটফুটে শিশু সাব্বিরের বয়স এখন ৯ বছর।

সদর বরগুনার ঢলুয়া ইউপির হেউলিবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র সে। চটপটে কথা বলার পাশাপাশি মেধাবী হওয়ায় পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও বিদ্যালয়ের সবার কাছেই প্রিয় সাব্বির। লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেটে ভালো বল করে বলে বন্ধুদের কাছেও খুব প্রিয় সে।

শিশুটি আজ ঠিকমতো দাঁড়াতে পারে না, হাঁটতে পারে না, কিছু ধরতেও পারে না। এমনকি নিজ হাতে খাবারটাও খেতে পারে না। অন্যের সাহায্যছাড়া কিছুই করতে পারে না সে। হৃদয়বিদারক এক দুর্ঘটনায় চিরদিনের জন্য সাব্বির এখন পঙ্গু। অভাবের সংসারে পঙ্গু সন্তানকে নিয়ে এখন বিপাকে সাব্বিরের বাবা-মা।

 

সাব্বিরের মা ঝুমুর জানান, দুই প্রভাবশালী প্রতিবেশী সাব্বিরকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুপারি পারতে গাছে উঠালে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গাছ থেকে ছিটকে মাটিতে পড়ে যায় সে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় সাব্বিরের একটি হাত ও দুটি পা প্রায় অচল হয়ে গেছে এবং একটি হাতে পচন ধরায় কেটে ফেলতে হয়েছে।

বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউপির কড়ইতলা গ্রামের মহসীনের স্ত্রী সিরিন আক্তার রিনা ও আবদুল আজিজ নয়া মিয়ার ছেলে আবদুল রব মিয়ার বরাবর এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ২৬ নভেম্বর সিরিন আক্তার রিনা ও আ. রব মিয়া তাদের সুপারি বাগানে শিশু সাব্বিরকে ডেকে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গাছে উঠিয়ে সুপারি পাড়তে বাধ্য করে। গাছে উঠে শিশু সাব্বির ভীত অবস্থায় যখন সুপারি পাড়ছিল তখন সুপারিগাছ সংলগ্ন বিদ্যুতের তারের সঙ্গে গাছের সংযােগে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সে মাটিতে পড়ে যায়।

মুমূর্ষু অবস্থায় শিশু সাব্বিরকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজে এবং ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। বর্তমানে সাব্বিরের ডান হাতের বাহু থেকে কর্তন করা হয়েছে এবং দুই পা ও বাম হাত সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে।

সাব্বিরের মা ঝুমুর বলেন, অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেটা বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হবে। লেখাপড়া শেষ করে পাইলট হবে। কিছুই হলো না। আমার ছেলেটাকে জোড় করে গাছে উঠিয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিলো।

সাব্বিরের বাবা সুমন বয়াতি বলেন, আমার যা কিছু সম্বল ও সঞ্চয় ছিলো সব শেষ করেও আমার ছেলেটার চিকিৎসা সম্পূর্ণ করতে পারিনি। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। কতো স্বপ্ন ছিলো আর এখন ছেলেটার কী ভবিষ্যৎ আছে?

অভিযুক্ত সিরিন আক্তার রিনা বলেন, দুর্ঘটনার জন্য আমি দায়ী না। আমার চাচাশ্বশুর আবদুর রব মিয়া সাব্বিরকে সুপারি পাড়তে ডেকেছেন। তারপরও চিকিৎসার জন্য কমবেশি খরচ আমি দিয়েছি।

আইনজীবী শফিকুল ইসলাম নেছার বলেন, একটি শিশুকে ধমকিয়ে তার ইচ্ছা বিরুদ্ধে বাধ্য করে ঝুকিপূর্ণ কাজ জেনেও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। পঙ্গুত্বের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং ভুক্তভোগী শিশুসহ তার পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে তার জন্য ২৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিলে দায়ীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর