নবিজী (সা.) মসজিদে প্রবেশ ও বের হতে যেসব দোয়া পড়তেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মসজিদ আল্লাহর ঘর। এ ঘর শুধু ইবাদতের জন্য নির্ধারিত। এতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার যেমন কিছু আদব আছে আবার রয়েছে কিছু সুন্নাত দোয়া। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদবের সঙ্গে মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং বের হতে দোয়া পড়তেন। সেসব দিকনির্দেশনা ও দোয়াগুলো কী?

মসজিদে যাওয়ার অন্যতম আদব হচ্ছে বাসা-বাড়ি বা আবাসস্থল থেকে অজু-গোসলের মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রওয়ানা হওয়া। ধীর পায়ে মসজিদে যেতে যেতে দরূদ পড়া। মসজিদে ঢুকতে ডান পা আগে দেওয়া। তারপর এ দোয়া পড়া; যা হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রমাণিত-

اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ – بِسْمِ اللهِ وَ الصَّلَاةُ وَ السَّلَامُ عَلَي رَسُوْلِ اللهِ اَلّلهُمَّ غْفِرْلِي وَ  افْتَحْ لِيْ أَبْوَاب رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ : আউযুবিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াঝহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়তানির রাঝিম। বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসুলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি, ওয়াফ-তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী এ দোয়াগুলো এভাবে এসেছে-

১. হজরত হায়াওয়া ইবনু শুরাইহ বর্ণনা করেছেন যে, হজরত উকবা ইবনু মুসলিম রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে আমার দেখা হলে, আমি তাকে বলি- ‘আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনিল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করার সময় বলতেন-

اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ وَ بِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ وَ سُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : ‘আউযুবিল্লাহিল আযিম ওয়া বিওয়াঝহিহিল কারিম ওয়া সুলতানিহিল ক্বাদিমি মিনাশ শায়তানির রাঝিম।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

অর্থ : ‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’

উকবা ইবনে মুসলিম বলেন, ‘তোমার কাছে শুধু এটুকুই পৌঁছেছে?’ আমি বলি, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বলেন, ‘কেউ এটি পড়লে শয়তান বলে, ‘সে তো সারাদিনের জন্য আমার হাত থেকে নিরাপদ হয়ে গেল!’ (আবু দাউদ)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু অথবা আবু উসাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন বলে-

اَلّلهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَاب رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’

আর বের হওয়ার সময় যেন সে বলে-

اَللهُمَّ اِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিকা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আপনার কল্যাণ চাই।’ (মুসলিম)

৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাম প্রেরণ করে এবং বলে-

اَلّلهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَاب رَحْمَتِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রাহমাতিকা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাগুলো খুলে দিন।’

আর বের হওয়ার সময় সে যেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাম প্রেরণ করে এবং বলে-

اَللهُمَّ اعْصِمْنِىْ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাঅ চিমনি মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিম।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে সুরক্ষিত রাখো।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)

৪. হজরত আনাস ইবনু মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে প্রবেশের সময় এবং বের হওয়ার সময় বলতেন

بِسْمِ اللهِ اَللهُمَّ صَلِّى عَلَى مُحَمَّدٍ

উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর শান্তি বর্ষন করুন।’ (ইবনুস সুন্নি)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি পদক্ষেপেই কল্যাণ খুঁজতেন। মানুষকে কল্যাণের পথে চলার দিকনির্দেশা দিতেন। কারণ মসজিদে ঢুকে কেউ যেন শয়তানের আক্রমণের স্বীকার না হয় সে জন্য তিনি শয়তান থেকে হেফাজতের জন্য আশ্রয় চেয়েছেন।

মসজিদে ঢুকতে শয়তান থেকে আশ্রয় চাওয়ার ফলে শয়তান ওই মুসল্লির উপর কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা দিতে ব্যর্থ হয়ে যায়। আর মুমিন মুসলমান সুন্দরভাবে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে; আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ চাওয়া-পাওয়ায় ধন্য হয়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মসজিদে প্রবেশে এবং বের হওয়ায় হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উপর যথাযথ আমল করে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর