বাংলাদেশের জলবায়ু প্রকল্পে বিনিয়োগের আহবান এএসইএম অংশীদারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বদ্বীপ পরিকল্পনার মতো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী জলবায়ু প্রকল্পে এএসইএম অংশীদারদের বিনিয়োগের আহবানজানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় কার্যকরভাবে লড়াইয়ের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহকে সংহত করতে ঐক্যদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান।
কম্বোডিয়ার নমপেনে ২৫ নভেম্বর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী ১৩তম এএসইএম শীর্ষ সম্মেলনে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় গতকাল তিনি বলেন, আমি সকল আগ্রহী এএসইএম অংশীদারদের আমাদের দীর্ঘমেয়াদী বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনার আওতায় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ আহবান জানাচ্ছি।
এএসইএম-এর ২৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এএসইএম১৩-এর সামগ্রিক প্রতিপাদ্য ‘অংশীদারি প্রবৃদ্ধির জন্য বহুপাক্ষিকতাকে শক্তিশালী করা’ শীর্ষক সম্মেলনে ইউরোপীয় ও এশিয়ার সদস্য দেশ, ইইউ এবং আসিয়ান সচিবালয়ের নেতাদের একত্রিত করেছে। কম্বোডিয়া বর্তমানে এএসইএম এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া ও ইউরোপকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ ও প্রযুক্তি প্রবাহ সংহত করতে অবশ্যই একত্রিত হয়ে হাতে হাত মিলাতে হবে। তিনি বলেন, যৌথ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য আমাদের এখন আগের চেয়ে আরো বেশি করে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন। উন্নত এবং শিল্পোন্নত অর্থনীতিগুলোকে কপ২৬ এর বাইরে তাদের জলবায়ু উচ্চাকাক্সক্ষা বাড়াতে হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি তারা যেন এমন দায়িত্ব না নেয় যা প্রকারান্তরে আমাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার প্রতিবেশিদের জন্য সম্ভাবনাময় সুবিধা সম্বলিত একটি আঞ্চলিক সংযোগ কেন্দ্র হতে চায়। ইইউ-এশিয়া সংযোগ কৌশলের অন্যতম সেতু হওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি তার বক্তব্যে রেল ও সড়কপথে উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্পে ইউরোপের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানান। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের যৌথ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে সহায়তা করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের মতো আঞ্চলিক সংগঠনলোকে পাচার প্রতিরোধ, সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তা প্রতিরোধে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সময়োপযোগী সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেন, আমাদের বহুপাক্ষিক সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগণ- রোহিঙ্গাদের জন্য একটি স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা। বাংলাদেশ তাদের অস্থায়ী আশ্রয় দেয় এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে। আমরা মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনে জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, কক্সবাজার ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে এবং ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অপরাধ শিগগিরই আমাদের সীমান্তের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সংকটের প্রতি অস্থায়ী প্রতিক্রিয়া খুব সামান্য উদ্দেশ্য পূরণ করবে। আমি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে অনুরোধ করছি আমরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করছি তার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিন। বাংলাদেশ নিজেকে এশিয়ার রীতিনীতি এবং ইউরোপীয় মূল্যবোধের সেরা মডেল হিসাবে বিবেচনা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার অবিচল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের বেশ কতগুলো ইউরোপিয়ান অংশীদারদের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপে সম্পৃক্ত রয়েছেন এবং তারা আসিয়ানের একটি সেক্টোরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ), ডি-৮, বিমসটেকে বর্তমানে তাদের নেতৃত্ব রয়েছে এবং আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যান্য ফোরামগুলো ব্যবহার করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ভালো একটি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য একটি শক্তি হিসাবে আমরা আসেম’কে (এএসইএম) আবির্ভূত হতে দেখতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছি। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং অর্থনীতির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহামারির কারণে আমাদের উন্নয়ন সংস্থানগুলো ঘুরিয়ে জরুরি চিকিৎসা ও ভ্যাকসিন কার্যক্রমে ব্যয় করতে বাধ্য করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের এলডিসি থেকে উত্তরণের গতি বজায় রাখার আশা করি। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের দিকে আমাদের মনোযোগ থাকবে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য অর্জনে এশিয়া এবং ইউরোপের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী ভ্যাকসিন অনুদানের জন্য এশিয়া, ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানসম্পন্ন ভ্যাকসিন উৎপাদনের ক্ষমতা আছে। আমরা চাই প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং এ জন্য লাইসেন্স।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পরে এটি আন্তর্জাতিক নেতৃত্বের বৃহত্তম সম্মেলন (এতে ৩০টি ইউরোপীয় এবং ২১ টি এশীয় দেশের সঙ্গে ইইউ ও আসিয়ান সচিবালয় রয়েছে।) আসেমে ইইউ’র ২৭ সদস্য দেশের পাশাপাশি নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুনসেন সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল, ইউরোপিয়ান কমিশন প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন ইইঊ’র প্রতিনিধিত্ব করেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর