ঝর্নাকে বেড়ানোর কথা বলে রিসোর্টে নিয়ে যান মামুনুল হক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথমেই সাক্ষী দিয়েছেন মামলার বাদী কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না। এ সময় ঝর্না সোনারগাঁও রিসোর্টে নিয়ে তাকে ধর্ষণের বর্ণনা দেন। বলেন, বেড়ানোর কথা বলে আমাকে রিসোর্টে নিয়ে যান মামুনুল হক।

বুধবার দুপুর সোয়া ১২টা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে বাদী ঝর্ণা সাক্ষীর জবানবন্দি দেয়া শুরু করেন। দুপুর ২টায় জবানবন্দি ও জেরা শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে আসামী মামুনুল হকের উপস্থিতিতে সাক্ষী দিয়েছে ঝর্না। আদালত পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন। সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা এ মামলায় ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদীই প্রথম সাক্ষী দিয়েছেন।

এদিকে জেরার সময় বাদীকে তার আইনজীবীরা সহযোগিতা করতে চাইলে মামুনুল হকের আইনজীবীরা বাগবিতণ্ডা ও হাসাহাসিতে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আলোচিত এ মামলার সাক্ষী শুনতে আদালতে অনেক আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। সবার দৃষ্টি ছিল মামুনুল হক ও ঝর্ণার দিকে।

আদালত সূত্র জানান, মামুনুল হকের আইনজীবী সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহ জেরার সময় ঝর্ণাকে প্রশ্ন করেন, এক লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে মামুনুল হক আপনাকে বিয়ে করেছে এটা কি সত্য। উত্তরে ঝর্ণা বলেন, সত্য নয়।

আপনাকে মামুনুল হক কিভাবে ঘটনার দিন আপনাকে নিয়ে যায়? আইনজীবীর এমন প্রশ্নের উত্তরে ঝর্ণা বলেন, রাজধানীর কলাবাগান এলাকা থেকে মামুনুল হক তার গাড়িতে উঠিয়ে বেড়ানোর কথা বলে সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে নিয়ে আসে। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মামুনুল হক ধর্ষণ করেন।

আইনজীবী প্রশ্ন করেন- আপনি হাসপাতালে ধর্ষণের ডাক্তারি পরীক্ষা করেননি কেন?

উত্তরে ঝর্না বলেন, আমি তাদের বলেছি ডিএনএ টেস্ট করতে তাই ডাক্তারি পরীক্ষায় অনীহা করি।

ডিএনএ টেস্টের জন্য আপনার কাছ থেকে কি ধরনের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে?

উত্তরে ঝর্ণা বলেন, মাথার চুল ও রক্ত।

এদিন সাক্ষী গ্রহণে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর রকিবুজ্জামান রাকিব। সহযোগিতায় ছিলেন- নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহসীন, সাবেক সভাপতি হাসান ফেরদৌস জুয়েলসহ কয়েকজন। অপর দিকে আসামিপক্ষে ছিলেন সৈয়দ মো. জয়নুল আবেদীন মেসবাহসহ কয়েকজন।

এর আগে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্নার করা ধর্ষণ মামলায় সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তাকে আদালতে হাজির করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) নাজমুল হাসান জানান, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এদিন মামলার বাদী ঝর্না সাক্ষী দিয়েছেন। দুপুর ২টায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মামুনুল হককে ফের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) রাকিবুজ্জামান রকিব জানান, কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না সোনারগাঁও থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা করেন। সেই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সাক্ষীকে উভয় পক্ষ জেরা করেছেন। আদালতের কাঠগড়ায় প্রথমে মামুনুল হক বার বার বাদীকে উদ্দেশ্য করে দিক নির্দেশনা মূলক কথা বলার চেষ্টা করেছেন। পরে অনুরোধ করার পর তিনি চুপ থাকেন।

মামুনুল হক গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসে মামুনুল হককে ঘেরাও করেন। পরে ওই রিসোর্টে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে ব্যাপক ভাঙচুর করে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান। তবে ঘেরাও থাকাবস্থায় এই হেফাজত নেতা জানান, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর