জেনা-ব্যভিচার সম্পর্কিত পাপ থেকে বাঁচার উপায়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মন হচ্ছে ন্যায়-অন্যায় সংঘটিত হওয়ার একমাত্র উৎস। জেনা-ব্যভিচারের মতো অপরাধের ইচ্ছা, স্পৃহা, আশা এবং প্রতিজ্ঞাও মনেরই সৃষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে সে নিজ কুপ্রবৃত্তির উপর বিজয় লাভ করবে। আর যে ব্যক্তি নিজ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না নিশ্চিতভাবে সে কুপ্রবৃত্তির শিকার হবে। মনের এ পর্যায় খুবই কঠিন। কারণ, এর শেষ পরিণতি একেবারেই অনিবার্য ধ্বংস।

ইসলামি শরিয়ার দৃষ্টিতে মানুষের চারটি অঙ্গের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলেই বাস্তবে অনেক গুনাহ ও ব্যভিচারের মতো পাপ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখা সহজ। আর তাতে ঈমানি শক্তিও বৃদ্ধি পায়। তন্মধ্যে মানুষের ‘মন ও মনোভাব’-এর নিয়ন্ত্রণও একটি।

১. তারা বলে থাকে, সময় তলোয়ারের ন্যায়। তুমি তাকে ভালো কাজে শেষ করবে। নতুবা সে তোমাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত করবে।
২. তারা আরো বলে, তুমি মনকে ভালো কাজে লাগাবে। নতুবা সে তোমাকে খারাপ কাজেই লাগাবে।

তাই মন যখন খারাপ কাজের দিকে ধাবিত করে তখনই তা মানুষের জন্য লজ্জা ও আফসোসের মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরিশেষে মানুষের মনোভাবও দুরাশা ও খারাপ দিকে রূপ নেয়।

মন ও মনোভাবকে ভালো কাজের দিকে নিয়ে যাওয়ার উপায়
তবে মানুষের মন ও মনোভাব জেনা-ব্যভিচার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। যদি মানুষ তার মন ও মনোভাবকে ভালো অভ্যাসের দিকে ধাবিত করে। এটি হলো আল্লাহর ভয়। কারণ এ ভয় মানুষবে ৪টি ভালো কাজের দিকে নিয়ে যায়। তাহলো-
১. দুনিয়ায় উপকার পাওয়ার মনোভাব।
২. দুনিয়ার ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।
৩. পরকালের লাভ অর্জনের মনোভাব।
৪. পরকালের ক্ষতি থেকে বাঁচার মনোভাব।

যারা নিজেদের মন ও মনোভাবকে এ চার কাজে সীমাবদ্ধ করতে পারবে; তারাই জেনা-ব্যভিচার থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হবে। কারণ ভালো মন ও মনোভাব কখনো মানুষকে খারাপ কাজের দিকে ধাবিত করে না।

জেনা-ব্যভিচারমুক্ত মন ও মনোভাব তৈরির লক্ষ্যে মনকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করতে কিছু চিন্তা-ভাবনা উপায় রয়েছে। তাহলো-
১. এ সম্পর্কিত কোরআনের দিকনির্দেশনা, বিধি-নিষেধ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা।
২. মনকে আল্লাহ তাআলার দৃশ্যমান নিদর্শনসমূহের চিন্তা-ভাবনা ব্যস্ত রাখা।
৩. মানুষের জন্য দেওয়া আল্লাহ তাআলা অগণিত নেয়ামত নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা। তার দয়া, ক্ষমা ও ধৈর্যের বিষয়টি অনুধাবন করা। এসব চিন্তা-ভাবনা মানুষকে অন্যায় থেকে মুক্ত রাখে।
৪. অন্যায় সংগঠিত হয়, জেনা-ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে এমন চিন্তা-চেতনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
৫. নিজের আমলগুলো সুন্দর করার চেষ্টা থাকাও জরুরি। যদি কোনো অন্যায় কাজের চিন্তা-ভাবনা থাকে তা কতটুকু কল্যাণ কিংবা অকল্যাণ তা কোরআন-সুন্নাহর মানদণ্ডে ভেবে দেখা।
৬. আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত কামনা করা। এ থেকে কখনো অন্তরকে খালি রাখা যাবে না। ভালো চিন্তা-চেতনা দিয়ে ওকে ভর্তি রাখতেই হবে। নতুবা খারাপ চিন্তা-চেতনা তাতে অবস্থান নিবেই।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, মনকে কখনো কাজ থেকে খালি না রেখে ভালো কাজের দিকে ধাবিত করার মাধ্যমে খারাপ কাজ ও চিন্তা-ভাবনা থেকে বিরত রাখা। বিশেষ করে কোরআনের এ নির্দেশনা বেশি বেশি স্মরণ করে ভালো কাজের দিকে ধাবিত হওয়া। তাহলো-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَهۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُهَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ عَلَیۡهَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰهَ مَاۤ اَمَرَهُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যেখানে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফেরেশতাগণ; যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয়, তাই করে।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মন ও মনোভাবের খারাপ চিন্তা-চেতনা ও ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। ভালো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর