মাদককাণ্ডে যে সাজা হতে পারে পিয়াসা-মৌয়ের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় মডেল ফারিয়া মাহাবুব ওরফে পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার ওরফে মৌয়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পিয়াসার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা এবং মৌয়ের বিরুদ্ধে একটি মামলা বিচারের জন্য প্রস্তুত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এসব মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুজনের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। হতে পারে অর্থদণ্ডও।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) তাপস কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, ফারিয়া মাহাবুব ওরফে পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার ওরফে মৌয়ের বিরুদ্ধে যে ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে, তা সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা পাঁচ বছর কারাদণ্ড, পাশাপাশি অর্থদণ্ড হতে পারে।

গত ১ জুলাই রাত ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ বারিধারার বাসা থেকে পিয়াসাকে আটক করে। এসময় পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা, রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে নয় বোতল বিদেশি মদ, ফ্রিজে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল এবং বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট জব্দ করা হয়। এছাড়া পিয়াসার কাছ থেকে চারটি স্মার্টফোনও জব্দ করে সাইবার ক্রাইম বিভাগ।

একই রাতে মিরপুর রোড সংলগ্ন ২২/৯ বাবর রোডের বাসা থেকে মৌকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তার বাসার ভেতরের বেডরুমের একটি ড্রয়ার থেকে পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এছাড়া একটি ড্রেসিং রুম থেকে অন্তত এক ডজন বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।

এরপর পিয়াসার বিরুদ্ধে গুলশান, খিলক্ষেত ও ভাটারা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা করা হয়। এ মামলাগুলোতে তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থানায় একই আইনে মৌয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার পর তাকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়।

পিয়াসার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় করা মাদক মামলার অভিযোগপত্রে সিআইডি বলেছে, পিয়াসা মডেলিং পেশার আড়ালে নিয়মিত ক্লাবে যেতেন এবং ক্লাব থেকে টাকার বিনিময়ে নিয়মিত মদ সংগ্রহ করতেন। পরে এসব মাদকদ্রব্য তিনি ক্লাব ও বাসায় বিভিন্ন পার্টিতে আসা লোকজনের কাছে বিক্রি করতেন।

তবে পিয়াসা কোন ক্লাব থেকে, কার কাছ থেকে কিংবা কী ধরনের মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করেছিলেন, সে ব্যাপারে অভিযোগপত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই।

খিলক্ষেত থানায় করা মাদক মামলায় পিয়াসা এবং তার সহযোগী মাসুদুল ইসলামকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ভাটারা থানার মাদক মামলায় পিয়াসা ও তার সযোগী শরিফুল হাসানকে আসামি করে সিআইডি। এ দুই মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শরিফুল হাসান ও মাসুদুল মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের কাছ থেকে ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। তাদের সহযোগী হিসেবে ভূমিকা রাখেন পিয়াসা।

অন্যদিকে মাদক মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন আসামি মরিয়ম আক্তার ওরফে মৌ। তার বিরুদ্ধে দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মাদক ব্যবসায় মৌয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে যে সাজা হতে পারে
পিয়াসার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনের তিন মামলায় তিন ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ভাটারা থানার মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ৩৬(১) এর ১০(ক), ৩৮ ও ৪১ ধারায়। গুলশান ও ভাটারা থানার মামলায়ও প্রায় একই ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কারও কাছ থেকে জব্দ মাদকদ্রব্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হলে ওই ব্যক্তির কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।

৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি সজ্ঞানে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনের জন্য তার মালিকানাধীন অথবা দখলি কোনো বাড়িঘর, জায়গা-জমি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, যন্ত্রপাতি অথবা সাজসরঞ্জাম কিংবা কোনো অর্থ অথবা সম্পদ ব্যবহার করতে অনুমতি দেন, তাহলে তিনি অনূর্ধ্ব ৫ (পাঁচ) বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

৪১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে অথবা সাহায্য করলে অথবা কারও সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে অথবা এ উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোগ অথবা চেষ্টা করলে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটিত হোক বা না হোক, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মতো দণ্ড পাবেন।

মৌয়ের বিরুদ্ধে মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর ৩৬(১) এর ১০(ক), ২৪(খ) ও ৪১ ধারায় চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত সংস্থা সিআইডি।

৩৬ (১) এর সারণি ১০ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, কারও কাছ থেকে জব্দ মাদকদ্রব্যের পরিমাণ সর্বোচ্চ ২০০ গ্রাম বা মিলিলিটার হলে ওই ব্যক্তির কমপক্ষে এক বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।

৩৬ (১) এর সারণি ২৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যের পরিমাণ ১০ কেজি বা লিটারের বেশি এবং ১০০ কেজি বা লিটারের কম হলে কমপক্ষে তিন বছর ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হবে।

৪১ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটনে কাউকে প্ররোচনা দিলে অথবা সাহায্য করলে অথবা কারও সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে অথবা এ উদ্দেশ্যে কোনো উদ্যোগ অথবা চেষ্টা করলে মাদকদ্রব্য অপরাধ সংঘটিত হোক বা না হোক, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডের মতো দণ্ড পাবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর