৫০-এ পা দিল যুবলীগ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে তৃণমূল সাজানোর চ্যালেঞ্জ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের এই দিনে (১১ নভেম্বর) যাত্রা শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় সংগঠনটি এবার পা রাখছে ৫০ বছরে।

দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম আর হাজারো নেতাকর্মীর আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশের বৃহৎ যুব সংগঠনে পরিণত হয়েছে যুবলীগ। তবে গত কয়েক বছরে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, কমিটি বাণিজ্য, অনুপ্রবেশসহ নানা কারণে ভাবমূর্তির সংকট দেখা দিয়েছিল।

সেখান থেকে কলঙ্ক ঘুচিয়ে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালে আসে নতুন নেতৃত্ব। গত প্রায় দুই বছরে নতুনদের নেতৃত্বে কলঙ্ক ঘুচিয়ে শুদ্ধ পথে যাত্রা করেছে এই সংগঠন।

করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে হয়েছে প্রশংসিত। নবযাত্রায় এবার আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠনটির সামনে চ্যালেঞ্জ-শৃঙ্খলা ধরে রেখে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজানো।

জানতে চাইলে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, যুবলীগকে তরুণ প্রজন্মের আদর্শিক ও সেবামূলক সুশৃঙ্খল সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে চাই।

আমরা চাই যুবলীগ দেশপ্রেম নিয়ে দেশ গড়ার কাজে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর সংগঠন নিয়ে যে পরিকল্পনা ছিল তা কতটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনার কারণে এই সময়ে সবাইকেই তাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হয়েছে।

তবে আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি মানুষের পাশে থাকতে। এ সময় যুবলীগের আশ্রয়ণ কর্মসূচি এবং করোনার সময় ত্রাণ বিতরণ, হেল্পলাইন চালু, মেডিকেল সার্ভিস, কৃষকের ধান কেটে দেওয়াসহ যুবলীগের নানা উদ্যোগের কথা জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে শেখ ফজলে শামস পরশ আরও বলেন, আমরা সংগঠনকেও তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে চাই। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাই। এ লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় ৬০ শতাংশ জেলায় বর্ধিত সভা হয়েছে।

প্রতিনিধি সম্মেলনও হয়েছে ৫০ শতাংশের মতো। ডিসেম্বর জানুয়ারিতে আমরা বেশ কিছু সম্মেলনও করে ফেলব। আমরা চাই-সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে, শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এবং দেশপ্রেম নিয়ে সেবামূলক কাজ দিয়ে দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে।

ক্যাসিনোকাণ্ডে সংগঠনের গায়ে দাগ লাগার পর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। সংগঠনটির সপ্তম কংগ্রেসে চেয়ারম্যান পদে আসেন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসেন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।

দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই সংগঠনকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেন তারা। তবে করোনার কারণে সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছিল। এর প্রায় বছরখানেক পর গত বছরের ১৪ নভেম্বর ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় দুই বছর চলে গেলেও তৃণমূল পর্যায়ের সব ইউনিটের সম্মেলন এখনো হয়নি। জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলনও হয়নি। এমনকি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের কমিটিও মেয়াদোত্তীর্ণ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নেতাদের মধ্যে ৯টি সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। করোনার প্রভাব হ্রাস পাওয়ার পর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সংগঠনকে গুছিয়ে আনার কাজে গতিও আনার চেষ্টা করছেন।

দেশব্যাপী সম্মেলন কিংবা বর্ধিত সভার কাজ জোরেশোরেই শুরু করেছেন তারা। ইতোমধ্যে ৪৩টি জেলা কমিটির বর্ধিত সভা হয়েছে।

সম্মেলন আয়োজনে একটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। জেলাটি হচ্ছে ফরিদপুর। সম্মেলন হয়েছে তিনটি উপজেলার। সেগুলো হলো-জামালপুরের মাদারগঞ্জ, গাজীপুরের কাপাসিয়া এবং কুমিল্লা উত্তরের হোমনা।

এদিকে নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনটি জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেছে। সেগুলো হলো-ঢাকা জেলা, কুমিল্লার উত্তর জেলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলা। এই তিন জেলাসহ পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার নেতাদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে।

দ্রুত সম্মেলন আয়োজনে এই সাত জেলায় নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেবে যুবলীগ। সম্প্রতি এ বিষয়ে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেছিলেন, করোনা সংক্রমণের পর থেকেই তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেছেন।

ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, উপজেলা ও জেলার খোঁজখবর নিচ্ছেন। কোথায় কী অবস্থায় আছে সেগুলো দেখছেন এবং সে অনুযায়ী সম্মেলনসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

নেতৃত্বে ছিলেন যারা : ১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহম্মেদ।

১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফকির আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু।

সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ফুলু সরকার। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট কাজী ইকবাল হোসেন।

২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে ৪৯ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মির্জা আজম। ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ কংগ্রেস।

এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মো. হারুনুর রশীদ। ক্যাসিনোকাণ্ডের মধ্যে ওমর ফারুক চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস্ পরশকে চেয়ারম্যান করা হয়। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।

কর্মসূচি : যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টার লাগানো হয়েছে। দিনটি উপলক্ষ্যে সকাল ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশ-বিদেশের প্রতিটি ইউনিটে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে-সকাল সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ।

সকাল সাড়ে ৯টায় বনানী কবরস্থানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ শেখ ফজলুল হক মনিসহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নিহত সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল ১১টায় শিল্পকলা একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। দিনটি উপলক্ষ্যে সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ এবং সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল দেশবাসীসহ যুব সমাজকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর