রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহবান: প্রধানমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভ‚মিকা রাখতে যুক্তরাজ্যের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের জন্মভ‚মি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করা উচিত। এ সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ।
স্থানীয় সময় বুধবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টারে স্পিকার্স হাউস স্টেট রুমে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০: দি রিজিলেন্ট ডেল্টা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার এখনই সময়। এ সময় পার্লামেন্ট সদস্য রুশানারা আলি, হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড জিতেশ গাধিয়া ওয়েস্টমিস্টাারে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিাত ছিলেন।
রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে যুক্তরাজ্যের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংকট নিরসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে এই অঞ্চলে স্থিাতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু বর্তমানে কক্সবাজারের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আরো তীব্র হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শিগগিরই এ অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বিস্তার লাভ করতে পারে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে অবিলম্বে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাাতিক স¤প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। এই সংকট জিয়িয়ে রেখে সংশ্লিষ্ট সকলের অর্জন হবে কেবল শ‚ন্যই।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটেনের সাথে সত্যিকার অর্থেই সম্পর্ক বর্তমানে কৌশলগত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সামুদ্রিক ও বিমান পরিবহণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার এটাই সময়। আমাদের অংশীদারিত্বকে দেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিবাসীদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। ওয়েস্টমিনিস্টারে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রতিনিধিত্ব দেখে আমি আনন্দিত। আবার তাদের সকলেই নারী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বৈচিত্রপূর্ণ এই মহান পার্লামেন্টে তাদের আরো অনেকে নির্বাচিত হবেন।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রæতির দেশ হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের স্থিতিস্থাপকতা থেকে দেশ শক্তি অর্জন করেছে। এখন দেশ সুযোগ গ্রহণের জন্য প্রস্তুত। দেশ একটি মিশন ও ভিশন নিয়ে তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে।
প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুত ও জ্বালানী এবং ডিজিটালাইজেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভ‚তপূর্ব অর্জন ও উন্নয়নের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫ সহ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গড় হার ৬ শতাংশের ওপরে। বাংলাদেশের জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীন উৎপাদন) ২০০৮ সালের ২৪৩ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং নাম মাত্র জিডিপি’র ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে ৪১তম। সরকার গত এক দশকে দারিদ্রতার হার ৩১ দশমিক ৫ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে কমিয়ে এনেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। মাথাপিছু আয় ২০০৮ সাল থেকে তিন গুন বৃদ্ধি পেয়ে এ বছরে হয়েছে ২২২৭ মার্কিন ডলার। অপর দিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাত গুন বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ ছিল একটি পরিবর্তনের অঙ্গীকার। আমাদের সরকার মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এবং আমাদের জনগণ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন লোকও গৃহহীন থাকবেনা এ ব্যাপারে সরকার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হওয়ায় গত এক দশকে প্রায় ১০ লাখ মানুষকে উপযুক্ত ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সরকার একটি সমৃদ্ধ আর্থিক এবং সামাজিক সুরক্ষা প্যাকেজ তৈরি করেছে এবং এটি বিগত ২০২০ সালে দেশকে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করেছে, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামারি করোনা মোকাবেলা আবারও আমাদের সহনশীলতা পরীক্ষা করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম কভিড-১৯ মৃত্যুর হার ছিল আমাদের দেশে। আমরা গেøাবাল ভ্যাকসিন আমাদের ইক্যুইটি নিশ্চিত করতে প্রস্তÍুত রয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মেগা-অবকাঠামো প্রকল্পগুলো নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যার অনেকগুলো নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু হবে বিশ্বের দীর্ঘতম সেতুগুলোর একটি। এ ছাড়া তিনি বলেন, আমরা এক দিকে সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগাতে কাজ করছি, অপর দিকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে মহাকাশে পা রেখেছি। এ বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে কেউ পিছিয়ে থাকবে না। মহামারির ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের অবশ্যই ভালো, শক্তিশালী এবং সবুজ পৃথিবী গড়ে তুলতে হাতে হাত রেখে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ অন্যতম জলবায়ুর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমরা এখন জলবায়ু সহনশীলতা নিয়ে কাজ করছি। স¤প্রতি আমরা ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছি। বাংলাদেশ ‘ডল্টা প্ল্যান-২১০০’ দীর্ঘমেয়াদে একটি সহনশীল ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার একটি নীলনকশা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার একটি চাবিকাঠি আমাদের নারী ও মেয়েদের সম্ভাবনাকে উন্মোচন করছে কারণ, মোট কর্মশক্তির ৪২ শতাংশ, পোশাক খাতে প্রায় ৮০ শতাংশই নারী। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে শিক্ষা ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। আমি এমন একটি সমাজের কল্পনা করি যেখানে মেয়ে ও নারীদের প্রতি কোনো বৈষম্য থাকবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি বজায় রেখেছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আমরা অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পথে রয়েছি। জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়পরায়ণ, সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতি গঠনে জীবন ও রাজনীতি উৎসর্গ করেছি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর