ভ্যাকসিন রাজনীতিতে বিশ্বের সফলতম রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা : তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকাল ১০ অক্টোবর, রবিবার, বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে হেলথ টিভি ও বীকন পয়েন্ট লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে এবং বায়োফার্মা লিমিটেড, জেনারেল ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, রেনাটা লিমিটেড ও আজমত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের পৃষ্ঠপোষতায় আজ রবিবার বিকাল ৩ টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক বর্ণাঢ্য আলোচনা সভা অুনষ্ঠিত হয়েছে। হেলথ টিভির চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী  বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাক্তন ব্যক্তিগত চিকিৎসক,  বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস এর প্রাক্তন কনসালটেন্ট ফিজিসিয়ান জেনারেল প্রফেসর ডা. মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুল আলী মিয়া ও আজমত গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজমত রহমান। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ডেন্টিস্ট অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, বরেণ্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ব্রিগে. জেনারেল অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফেলো অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও বীকন পয়েন্ট লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হানিফ প্রমূখ।

এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য”। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী বিশ্বি মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন হয়ে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে কিছু দেশে একে মানসিক রোগ সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবেও পালন করা হয়।

উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান বলেন- স্বাস্থ্যসেবা প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকার। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ছাড়া সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেয়া এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, মানসিক রোগ নিয়ে এদেশের মানুষের মধ্যে অনেক অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক রোগীকে পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন প্রদান খুবই জরুরি। একই সাথে ঝাড়ফুঁক বা অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি পরিহারে জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়ে আরও বলেন,  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনীয়তা যথাযথভাবে অনুধাবন করে ২০০১ সালে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে প্রতিষ্ঠা করে ‘জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট’। সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বাস্তবায়নে এটি একটি মাইলফলক।

বিশেষ অতিথি প্রফেসর ডা. মেজর জেনারেল (অব.) মো. আব্দুল আলী মিয়া বলেন, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু কিশোরদের শতকরা ১৮ ভাগ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ অনেক সময় প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কার ও চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা জাতীয় অগ্রগতির উন্নয়নের পথে বড় বাধা। মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। এর প্রধান কারণ মানসিক স্বাস্থ্য রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাজে মর্যাদাবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এজন্য অনেকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেওয়াকে সামাজিকভাবে লজ্জাকর মনে করেন, যেটি শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় রোগী ও পারিবারের সদস্যগণ খারাপ আচরণের শিকার হন। এজন্য পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ বিষয়টি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর অর্থ ব্যাপক। মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতীত জোরপূর্বক আটকে রাখা মর্যাদাহানি, নিম্নমানের সেবা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা যা পাওয়া এসব বিষয় মর্যাদার সংঙ্গে জড়িত। এ বিষয়টি খেয়াল করে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্রুত রোগ নির্ণয় করে তাকে বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব।

আলোচকবৃন্দ উল্লেখ করেন, করোনাকালে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ৮৪ শতাংশের বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাঁদের ৪ ভাগের ৩ ভাগ শিক্ষার্থী পড়ালেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এ সময় গ্রামে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। মানসিক সমস্যা বেশি হয়েছে নারী শিক্ষার্থীদের।

বক্তাগণ আরও বলেন, সারাদেশে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি পালন করা হচ্ছে। তবুও সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্য আজও অবহেলিত। তাই সবার উচিত নিজের মনের যত্ন নেওয়া, অন্যের মনের যত্ন নেওয়া। সমস্যা হলে চিকিৎসক কিংবা মনোবিজ্ঞানীদের সঙ্গে পরামর্শ করা। যেকোনো মানসিক সমস্যায় দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেকাংশেই সুস্থ থাকা সম্ভব। নিজে ও আশপাশের মানুষদের নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মিনার স্পন্সর প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, উপস্থিত অডিয়েন্স, ফেসবুক ও ইউটিউব লাইভের দর্শক ও শ্রোতা, গণমাধ্যম কর্মী এবং আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন- মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে হেলথ টিভি সবসময় কাজ করে যাবে। মানুষের পাশে থাকবে। তিনি আরও বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এ বিষয়ক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি আলোচনা সভার কার্যক্রম শেষ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর