অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম কারণ?

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নারীরা বর্তমানে যে রোগটি নিয়ে বেশি চিন্তিত তা হলো ব্রেস্ট ক্যান্সার। মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রাসহ আরো কিছু বিষয় এই ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী। কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে চললে এই ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে দূরে থাকা সম্ভব চলুন জেনে নেওয়া যাক।

অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ব্রেস্ট ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হতে পারে। খুব অল্পবয়সীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের সহায়তায় ব্রেস্ট ক্যান্সার চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথেই যদি চিকিৎসা করা হয় তবে তা নির্মুল করা সম্ভব ।

ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বেশ কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। বেশি বয়সে গর্ভধারণ, খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, সঠিক খাবার না খাওয়া, স্থূলতা, দূষণসহ একাধিক কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সার হতে পারে। সেই কারণে স্বাস্থ্যকর জীবনধারণের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আর অক্টোবর হল ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতা মাস।

ওজন বৃদ্ধি
ওজন বৃদ্ধির ফলে শরীরে একাধিক রোগে আক্রমণ করতে পারে এ কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। শরীরে কোলেস্টেরল বাড়লে ওজন বৃদ্ধি হয়। আর তাতেই তৈরি হয় একাধিক সমস্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোলেস্টেরল বাড়ার ফলে ফুসফুস, হৃদরোগ সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। তার সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারও হতে পারে। শরীরে বেশি ফ্যাট থাকলে শরীর থেকে বেশি এস্ট্রোজেন হরমোন তৈরি হয়। যার ফলে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি হতে পারে সমস্যা তৈরি করতে পারে। ইনসুলিনের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে গেলে ওবেসিটি দেখা দিতে পারে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্বাভাবিকের থেকে যদি কারও অতিরিক্ত ওজন থাকে তাহলে দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলা দরকার। শরীরে যত কম পরিমাণ ফ্যাট থাকবে শরীর তত বেশি ভালো থাকবে।

খাদ্যাভাসের পরিবর্তন
ক্যান্সারের অন্যতম কারণ খাদ্যাভাস। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাদ্য যে শুধু শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ায় এমনটা নয় নারীদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেকটা বাড়িয়ে তোলে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ফ্যাট জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধ করেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও বর্তমানে অনেক জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এজন্যও ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

মদ্যপান

অ্যালকোহল শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিষয়টি নতুন না। দীর্ঘদিন ধরে মদ্যপান করলে ফুসফুস, হৃদরোগ, যকৃত, পাকস্থলী সহ একাধিক সমস্যায় পড়তে হয়। পাশাপাশি এই দু’টি নেশা দ্রব্যের কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ হয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করার ফলে অনেকেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, যদি কোনও নারী সারা দিনে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি অ্যালকোহল গ্রহণ করেন তাহলে তার ক্ষেত্রে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে যায়। তুলনামূলক ভাবে যারা অ্যালকোহল সেবন করেন না তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক কম থাকে।

গর্ভধারণ
নারীদের মধ্যে অনেকে মনে করেন গর্ভধারনের কোনও নির্দিষ্ট বয়স হয় না। যে কোনও বয়সে গর্ভ ধারণ করা সম্ভব এবং তাতে শরীরের উপর কোনও প্রভাব পড়ে না। কিন্তু এই তথ্য অনেকটাই ভুল বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বক্তব্য, দেরি করে গর্ভধারণ এবং যে সব নারী গর্ভধারণ করেন না তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণ না করার ফলে অথবা দেরিতে গর্ভধারণ করার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে ইস্ট্রোজেন হরমোন শরীরে জমে যায়। এমনকি ব্রেস্টের মধ্যে থাকা কোষ থেকে অতিরিক্ত পরিমাণে ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। এর ফলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। যে সব নারীরা ৩০ বছরের সন্তানের জন্ম দেয় তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। এমনকী অনেকে সন্তানদের ইচ্ছা করে ব্রেস্টফিডিং করেন না। সেক্ষেত্রেও ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে।

অতি দ্রুত ঋতুচক্র এবং দেরিতে মেনোপজ
বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্টে প্রকাশ যদি কোনও নারীর ১২ বছর বয়সের আগে ঋতুচক্র শুরু হয় এবং তুলনামূলক দেরিতে মেনোপজ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে ওই নারীর ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর