১৮ মাস পর ঢাবি আবাসিক হল খুলছে আজ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ ১৮ মাস পর আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল খুলে দেওয়া হচ্ছে। করোনাভাইরাসের এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ওঠার সুযোগ পাবেন। এদিকে করোনা থেকে সুরক্ষায় ঢাবি কর্তৃপক্ষ সোমবার থেকে ক্যাম্পাসে অস্থায়ী টিকা ক্যাম্প চালু করেছে। প্রথম দিনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২৬৫ জন টিকা নিয়েছেন।

ঢাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে আবাসিক হলগুলো প্রস্তুত। ইতোমধ্যে হল প্রশাসন সংস্কার কাজসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ কমে আসায় পূজার ছুটির পর এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে যে কোনো বর্ষের শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারবেন। এরপর সশরীরে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মজিবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে হল প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য হলে সংস্কার কাজ শতভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। করোনা-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং আবাসিক হলে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে হল প্রশাসন সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিল। ওয়াশরুম, পানি ও বিদ্যুতের লাইন এবং ঝরাজীর্ণ দেওয়াল সংস্কার করা হয়েছে। হলের রুম রঙ করা হয়েছে।

আবাসিক হল খুলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো. ইমন বলেন, করোনার কারণে লম্বা একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছিলাম। এসএম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হায়দার ওমর বলেন, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দূরে থাকায় অনেক শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। শুধু অনার্স-মাস্টার্স নয়, সব শিক্ষার্থীকেই আবাসিক হলে ওঠার সুযোগ দেওয়া উচিত এবং অনেক আগেই আবাসিক হল খুলে দেওয়া উচিত ছিল।

দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাবি কর্তৃপক্ষ শ্রেণি কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ করে। এরপর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য ১৩ মার্চ থেকে আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাবির একাডেমিক কাউন্সিল। যদিও করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে তা ৫ অক্টোবর করা হয়।

আবাসিক হল খোলার আগেই শিক্ষার্থীরা হলে : আজ আবাসিক হলে ওঠার কথা থাকলেও ছাত্রদের একটি অংশ আগেই হলে উঠে গেছেন। ঢাবির এক শিক্ষার্থী  বলেন, হল বন্ধ থাকায় মেসে থাকতাম। ৫ অক্টোবর হল খুলবে। কিন্তু কোনো বাসা তো ৫ তারিখে ছাড়া সম্ভব নয়। ৫ তারিখে বাসা ছাড়লে ওই মাসের পুরো ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। তাই বাসা ছেড়ে হলে উঠতে বাধ্য হয়েছি। শৃঙ্খলাভঙ্গ করে যারা আবাসিক হলে উঠেছেন তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় নোটিশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

শিক্ষার্থীদের জন্য এসওপি চূড়ান্ত : ক্যাম্পাস খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতীয় নীতিমালার আলোকে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। এসওপির বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, এটি হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরও বলেন, করোনা তো দ্রুত চলে যাচ্ছে না। তাই মেডিকেল সেন্টারে দুই-তিনটা রুম আইসোলেশন সেন্টারের জন্য রাখা হবে। এরপরও কোনো শিক্ষার্থীর উন্নততর চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। নীতিমালার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর শুধু বৈধ শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট হলে অবস্থান করতে পারবেন। যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা কোনোভাবেই হলে অবস্থান করতে পারবেন না। এছাড়া হলে থাকবে না কোনো ধরনের গণরুম।

টিকা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনে টিকা নিলেন ২৬৫ জন : শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনার টিকা দেওয়ার জন্য বিশেষ অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে ঢাবি প্রশাসন। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে টিকা কার্যক্রমের প্রথম দিনে ২৬৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। মেডিকেল সেন্টারের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফি  বলেন, টিকা কার্যক্রমের প্রথম দিনে আমরা ২৬৫ জনকে টিকা দিয়েছি। ক্যাম্পে প্রথম টিকা গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রুবেল দাস। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঢাকার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের সহযোগিতায় আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা (দ্বিতীয় ডোজ) আগামী ১ নভেম্বর থেকে দেওয়া হবে।

সকালে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে ঢাবি হেলথ্ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, টিকা কার্যক্রমের সমন্বয়ক ড. মো. আব্দুল মুহিত, ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, করোনাভাইরাস থেকে ঢাবি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুত টিকার আওতায় আনতে অস্থায়ী ক্যাম্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা কার্যক্রম শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর