মাছের ড্রামের আড়ালে হচ্ছে তেল চুরি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাছের ড্রামের আড়ালে নতুন কায়দায় তেল চুরি হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত একটি চক্র পাশে দাঁড়ানো গাড়ি থেকে ২ মিনিটে ৫০ থেকে ১০০ লিটার তেল সরিয়ে নিচ্ছে। এজন্য তারা লম্বা পাইপ, ছোট মোটর এবং সুইচ ব্যবহার করে। মোটর এবং সুইচ বসানো হয় পিকআপ চালকের আসনের পেছনে। চক্রটি প্রথমে দূরপাল্লার বাস-ট্রাকের পাশে নিজেদের পিকআপ রাখে। এরপর সুযোগ বুঝে ওই বাস বা ট্রাকের তেলের ট্যাংকের মুখ খুলে পাইপ নামানোর পর সুইচ অন করে। মুহূর্তে তেল বিপরীত দিকের গাড়িতে রাখা ড্রামে জমতে থাকে। রোববার ফরিদপুরে হাতেনাতে ধরা পড়ে এ চক্রের এক সদস্য। নাম সুমন ভূঁইয়া। সে স্বীকার করেছে এভাবে তেল চুরির কথা। এ তেল তারা খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকে। মাছের ড্রামসহ পিকআপটিও জব্দ করা হয়েছে।
সুমনের ভাষায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীসহ দেশের অনেক এলাকায় মাছ সরবরাহ করা হয়। পানিভর্তি বড় ড্রামে জ্যান্ত মাছ আনা হয়। একই ধরনের ট্রাক বা পিকআপে তাদের ড্রাম বসানো হয়। দেখে মনে হবে এটিও মাছের পিকআপ, ড্রামে আছে জ্যান্ত মাছ। কিন্তু আসলে তা নয়। এটা হচ্ছে তেল চুরির পিকআপ। এতে প্লাস্টিকের বড় একটি ড্রাম চারিদিকে এসএস পাইপ দিয়ে সুন্দর করে বসানো। এই ড্রামে প্রায় ৫০০ লিটার তেল রাখা যায়। ড্রামের নিচে দিয়ে একটি পাইপ নেওয়া হয়েছে। এটি চালকের আসনের পেছনে রাখা বক্স পর্যন্ত চলে গেছে। এ বক্সে একটি মোটর ও সুইচ আছে। আরেকটা পাইপ নেওয়া হয় ড্রামের উপর দিয়ে। সুমন ও তার দলের সদস্যরা প্রথমে দূরপাল্লার বাস বা ট্রাক শনাক্ত করে।

যেগুলো পরদিন ভোরে যাত্রা করবে। সে ধরনের গাড়ির পাশে তাদের পিকআপ রাখে। অপেক্ষায় থাকে সুযোগের। ড্রাইভার বা গাড়ির লোকজন সরলেই তেলের ট্যাংকের মুখ খুলে ড্রামের সঙ্গে থাকা পাইপ নামিয়ে দেয়। চালকের আসনের পেছনে বক্সে থাকা মোটরের সুইচ অন করার ২-৩ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ। ট্যাংকের প্রায় সব তেল চলে আসে পিকআপের ড্রামে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই তেল চুরি করে সটকে পড়ত তারা। অন্যদিকে সেই ট্রাকের চালক এক-দুই কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখতেন গাড়ি তেলশূন্য।
একই কায়দায় এ চক্র বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন যেখানে ডিজেল বা পেট্রোল বিক্রি হয় সেখানে গিয়ে পিকআপটি পার্ক করত। চক্রের সদস্যদের সহায়তায় সেখানেও একই কাজ করত। এছাড়া তেলের ডিপো লরি থেকেও চুরি করত। এর সঙ্গে জড়িত থাকত লরির চালকও। এক্ষেত্রে তারা চালকদের সঙ্গে টাকার ভাগাভাগি হিসাবে তেল চুরি করত।
ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক এমএ জলিল বলেন, এমন অভিনব কায়দায় তেল চুরির ঘটনা আমরাও এই প্রথম দেখলাম। উত্তরবঙ্গ থেকে সকালে একই ভাবে পিকআপে চেপে মাছ আসে। যেগুলো সাধারণত নীল পলিথিন দিয়ে ঢাকা থাকে। এ পিকআপটিও সেরকম ছিল। বলেছে মাছের পিকআপ। তাই বোঝার উপায় ছিল না। কিন্তু উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য কানাইপুর এলাকায় ট্রাকে তেল ভরে রাখা অনেক চালক বলতেন সকালে এক বা দুই কিলোমিটার গেলেই দেখেন আর তেল নেই। এখন তো দেখাই যাচ্ছে কারা কি পন্থায় তেল চুরি করেছে। সুমনকে ধরার পর আমরা এখন গাড়ি থেকে তেল চুরির নানা ঘটনার খবর পাচ্ছি। গ্রেফতারকৃত সুমন ভূঁইয়া তার সঙ্গী আরও দুজনের নাম বলেছে। এর হলো শরীয়তপুরের জাজিরার ২২ বছর বয়সি মাতবর ওরপে সজীব। আরেকজন ফরিদপুরের বোয়ালমারি থানার ৪০ বছর বয়সি জুয়েল মোল্লা। এরা পলাতক রয়েছে।
এদিকে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, পেনাল কোড আইনের ৪১৩ ধারায় চোরাই মাল ক্রয়-বিক্রয় করার অপরাধে সুমন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি পাওয়া গেলে এই চক্রের বিষয়ে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Shares
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর