প্রার্থী বিক্রি ঠেকাতে পারছে না জাপা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সংসদীয় আসনে নির্বাচনের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে উপনির্বাচনে শুরু হওয়া ‘সমঝোতা’ নামক নতুন খেলা ঘুরেফিরে মাঠে গড়াচ্ছে। সর্বশেষ এই খেলা হয়ে গেল কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের উপনির্বাচনে। আগামী ৭ অক্টোবর এই উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের কথা ছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন তিনজন- আওয়ামী লীগের ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, জাতীয় পার্টির (জাপা) লুৎফুর রেজা খোকন ও ন্যাপের মো. মনিরুল ইসলাম। জাপা ও ন্যাপের প্রার্থী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ফলস্বরূপ ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

দলের অগোচরে কুমিল্লা-৭ আসনের উপনির্বাচনে ভোটের মাঠ থেকে সরে যান জাপা মনোনীত ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী লুত্ফুর রেজা খোকন। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদারের কাছে তিনি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন করেন। খবর পেয়ে শুক্রবার পার্টির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে খোকনকে বহিষ্কার করে জাপা। বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদের পাশাপাশি কুমিল্লা উত্তর জেলা জাপারও আহ্বায়ক ছিলেন খোকন। দলীয় গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে খোকনকে দল থেকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি দলের কুমিল্লা উত্তর জেলা কমিটিও বিলুপ্ত করেছেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

জি এম কাদের ইত্তেফাককে বলেন, ‘খোকনকে মনোনয়ন দেওয়ার সময়ই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে না, ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। কিন্তু পার্টিকে কিছু না জানিয়ে সে (খোকন) গোপনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ এর আগে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) ও ঢাকা-১৪ আসনের উপনির্বাচনেও জাপার প্রার্থীরা গোপনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যান। বিএনপিবিহীন উপনির্বাচনে দলকে কিছু না জানিয়েই ঐ দুটি আসনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় দলের দুই প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল জাপা। লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের আংশিক) আসনের মতো একই খেলা আবারও হলো কুমিল্লায়। চারটি আসনেই ‘লক্ষ্মীপুর মডেল’-এ জাপার প্রার্থীরা বিক্রি হয়ে গেছেন বলে খোদ দলটির নেতা-কর্মীদেরই মুখে-মুখে চাউর। তবে দল থেকে বহিষ্কার করেও দলীয় প্রার্থী বিক্রি হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঠেকাতে পারছে না জাপা। অবশ্য গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে ছিলেন।

এর আগে গত ২১ জুন লক্ষ্মীপুর-২ আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপি নির্বাচিত হন। উপনির্বাচনে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাপার ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের শেখ মোহাম্মদ ফায়িজ উল্যাহ। এই আসনে জাপার প্রার্থী শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকলেও এখানেও ‘সমঝোতা’র চেষ্টা হয়েছিল।

ভোট থেকে সরে যাওয়ার জন্য দলের অনুমতি নিতে ফায়িজ উল্যাহর মতো ‘ভুল’ করেননি কুমিল্লা-৫ আসনে জাপার মনোনীত প্রার্থী মো. জসিম উদ্দিন ও ঢাকা-১৪ আসনে দলীয় প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক। ফায়িজ উল্যাহর ঘটনা মাথায় রেখে দলকে কিছু না জানিয়েই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ভোট থেকে সরে যান জসিম ও মোস্তাক। যার কারণে জসিম ও মোস্তাককে দল থেকে বহিষ্কার করে জাপা। অভিযোগ উঠেছিল, টাকার বিনিময়ে দলের অগোচরে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান জসিম। ফলে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন।

ঢাকা-১৪ আসনে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন চারজন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের আগা খান মিন্টু, জাপার মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জাসদের আবু হানিফ ও বিএনএফের কে ওয়াই এম কামরুল ইসলাম। তবে মোস্তাকসহ অপর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগের আগা খান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়ে যান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর