নেত্রকোনায় ৮ মাসে পানিতে ডুবে ৭২ শিশু নিহত

বিজয় দাসঃ নেত্রকোনায় এ বছর আট মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) পানিতে ডুবে অন্তত ৭২ শিশু নিহত হয়েছে।  নিহত শিশুদের বয়স দুই থেকে আট বছরের মধ্যে। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলমাকান্দা উপজেলার তেলিগাঁও এলাকায় পানিতে ডুবে সাইম মিয়া নামের আড়াই বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সাইম মিয়া কলমাকান্দার তেলিগাঁও এলাকার মো. সাঈদ মিয়ার ছেলে।

নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার ১০টি উপজেলায় অন্তত ৭২ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর মধ্যে গত জুন ও আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়। ওই দুই মাসে ১২ জন করে শিশু মারা যায়। জেলার মধ্যে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে মৃত্যুর প্রবণতা বেশি। গত চার মাসে কলমাকান্দায় ১৫ জন ও দুর্গাপুরে নয়জন শিশুর মৃত্যু হয়।

এছাড়াও খালিয়াজুরি ও মদনে ছয়জন করে মোট ১২ জন এবং আটপাড়া, মোহনগঞ্জ ও সদর উপজেলায় চারজন করে মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যেসব শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে তাদের বেশিরভাগ বাড়ির সামনে, পেছনে কিংবা পাশের পুকুর, ডোবা (ছোট জলাশয়), খাল, নদীর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে।

নেত্রকোনায় শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা ‘স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি’র ইউনিসেফ প্রকল্পের জেলা সমন্বয়কারী সঞ্জয় সরকার মনে করেন, শিশুদের সাঁতার না জানা, তাৎক্ষণিক প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান না থাকা ও সচেতনতার অভাবেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, যেসব শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে, তাদের সবারই হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়।

তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেউ ডুবলেও তাকে উদ্ধারের পরপর তার শ্বাস ও হার্ট চালু করার যেসব প্রাথমিক উদ্যোগ আছে সেগুলো মানুষ জানে না। মানুষকে সেই উদ্যোগগুলো জানাতে কিংবা শেখাতে পারলে এ ধরনের মৃত্যু কমে আসতো।

নেত্রকোনা উন্ননয় ফোরামের সম্পাদক বিজয় দাস বলেন, পানিতে ডুবে কোনো শিশু অসুস্থ হলে ওই রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পদ্ধতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভালোভাবে পাঠদান করতে হবে। হাওরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কীকরণ সাইনবোর্ড স্থাপন করলে এই ধরনের অপমৃত্যু কমতে পারে।

জেলা পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সি বলেন, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। জনসচেতনতা বাড়াতে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা হয়। এ অপমৃত্যু কমাতে সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, পানিতে ডুবে এতো শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি উদ্বেগজনক। একটি এনজিও এ নিয়ে কাজ করতে চেয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা কাজ শুরু করেনি। আমরা সরকারি-বেসরকারিভাবে এটা নিয়ে কাজ করবো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর