‘উদ্যোক্তা হও, সমৃদ্ধ হাওর গড়ো’- মিঠামইনে প্রশিক্ষিত যুবদের প্রতি এমপি তৌফিকের আহ্বান

রফিকুল ইসলামঃ একমাত্র সরকারি চাকরির পেছনে না ছুটে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে অন্যদেরও দাঁড় করিয়ে সমৃদ্ধ হাওর গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি-পুত্র কিশোরগঞ্জের-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেছেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর পরিচালিত মিঠামইন উপজেলায় বাস্তবায়নাধীন সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ৮ম পর্বে প্রশিক্ষিত করে মোট ৪৯৩ জন শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুবমহিলার অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

20210820_030533

গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে মিঠামইনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অডিটোরিয়ামে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির তিন মাস ধরে চলা প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওরে আমার এলাকায় ৯০ ভাগেরও বেশি পরিবার অস্বচ্ছল। তাঁরা এলাকার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ফসল দেশের খাদ্য চাহিদার জোগানদাতা হলেও গরিবী জীবন যাপন করেন। তাঁদের পরিবারে শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব-মহিলারা পরিবারের বোঝা হয়ে হতাশায় ভুগছেন। তাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’র ৮ম পর্বের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কর্মসূচি অনুযায়ী মিঠামইনে দুই বছর মেয়াদে ৪৯৩ জনের অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ও অস্থায়ী সংযুক্তির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওইসব যুবক ও যুবমহিলা কর্ম-সমাপনান্তে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে সক্ষম হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

36

প্রতিটা ঘরে ঘরে বেকার যুবদের চাকরি দেয়ার সরকারের সদিচ্ছার কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্য উচ্চমাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষায় শিক্ষিত আগ্রহী বেকার যুবক ও যুবমহিলাদের জাতির গঠনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি’ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনবারের নির্বাচিত এ সংসদ সদস্য  বলেন, এটি সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত একটি কর্মসূচি, যা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি নীতিমালা’ দ্বারা পরিচালিত। এ কর্মসূচি প্রাথমিকভাবে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩টি জেলায় বাস্তবায়ন শুরু হয়। পরে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মতে দেশের দরিদ্র ম্যাপ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পূর্বভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। ৮ম পর্বটা অনেক চেষ্টাচরিত্রের ফলে হাওরের এ কেন্দ্রবিন্দুতে আনা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

34

তবে ‘এটা কোনো সরকারি চাকরি নয়’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কর্মসূচির অস্থায়ী কর্মসংস্থান সাময়িক, যার মেয়াদ দুই বছর। স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তি প্রাপ্তির মাধ্যমে অস্থায়ীভাবে সেবাদান করে যাবেন। মেয়াদ শেষে সংশ্লিষ্ট যুবক বা যুবমহিলার অস্থায়ী কর্মসংস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাপ্ত হয়ে যাবে।

ভবিষ্যতে যোগ্যতা অনুযায়ী দুই বছর পর ওই চাকরি স্থায়ী হবার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে এমপি তৌফিক বলেন, এজন্য একনিষ্ঠতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে, যাতে মূল্যায়নে টেকা যায়।

Untitled-1

শেষে এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, কর্মভাতা থেকে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাব নাম্বারে জমা হবে। কর্মের মেয়াদ শেষে মুনাফাসহ সঞ্চয়ের মোট টাকা ফেরত পেয়ে উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে এবং চাকরি পাওয়া নয়, অন্যদের চাকরি দিয়ে বেকারত্ব ঘুচিয়ে সমৃদ্ধি হাওরোন্নয়ন সূচকের সহযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে হবে যে ‘হাওর পিছিয়ে নেই’।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহানের সভাপতিত্বে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম মিয়া, আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শাহজাহান মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য সমীর কুমার বৈষ্ণব, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির রব্বানী, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা ই আ ম মামুন মজুমদার, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ আমিন আহসান।

 

20210820_032746

এছাড়াও প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হালিমা আক্তার ও মো. খোকন মিয়া।

সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যসেবা কর্মকর্তা তনুশ্রী ভৌমিক, সমবায় কর্মকর্তা আবু আসলাম, সহকারী প্রোগ্রামার ইমাম মেহেদীসহ বিভিন্ন কার্যালয়ের কর্মকর্তা, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিধান অনুযায়ী একজন যুবক বা একজন যুবমহিলা মাসিক মোট কর্মভাতা ৬ হাজার টাকার মধ্যে ২ হাজার টাকা বাধ্যতামূলকভাবে তার ব্যাংক হিসাবে সঞ্চয় করবেন এবং দুই বছর অতিবাহিত হওয়ার পর মুনাফাসহ প্রতিজনে ৫০ হাজার টাকা ফেরত পাবেন।  #

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর