হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাগ দেখাতে, তুচ্ছ_তাচ্ছিল্য বোঝাতে ‘কচু’র উপমা দেওয়া হয় বটে, কিন্তু কচু যে হেলাফেলার জিনিস নয় সেটাই জানান দিলো পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চাষিরা। পতিত জমিতে কচু চাষে তারা সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আউশ ধান চাষ না হওয়ায় কচুই এখন এই এলাকার বিকল্প ফসল হয়ে উঠেছে।
বাঁশবাড়িয়া চাষীরা চোঁখে আঙুল তুলে দেখিয়েছেন কচু এখন আর হেলার সবজী নয়। তারা দেখিয়ে দিলেন, আউশ চাষে মার খাওয়া চাষির মুখে হাসি ফোটাতে পারে কচুই। ফল দেখে তা টের পেয়েছেন বাঁশবাড়িয়া চাষিরা। দুই গ্রামের চাষিরা প্রায় আড়াই একর জমিতে প্রচুর কচু ফলিয়েছেন।
পতিত জমিতে কচু চাষ দেখতে ১৭ আগস্ট দশমিনায় এসেছিলেন বরিশাল কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ তাওফিকুল আলম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন পটুয়াখালীর উপপরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম মহিউদ্দিন , জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল ইসলাম মল্লিক।
জানাগেছে, গ্রামে আউশ মৌসুমে চাষাবাদ হয় না। বর্ষার সময় গ্রামটি পানিতে নিমজ্জিত থাকায় শুষ্ক মৌসুমে ঝোপঝাড় ও আগাছার জন্য জমিতে ধান রোপণ সম্ভব হয় না। যদি কেউ কেউ সেই ঝোপঝাড় আর আগাছা পরিস্কার করে চাষ করছেন। কিন্তু তাতে যে ফলন আসছে, তা বিক্রি করে খরচ উঠছে না। তাই চাষিরা বছরের পর বছর ধরে আউশ চাষে মার খাচ্ছিলেন।
এ ধরনের পতিত জমিতে কচু ফলিয়ে সাফল্য পেয়েছেন গছানি গ্রামের চাষি বারেক টন্নী। কচু চাষ করে লাভের মুখও দেখছেন তিনি। স্থানীয় কচু চাষিরা জানান, খেত থেকে দুই সপ্তাহ পর কচুর লতি তোলা হবে। এর এক মাস পর কচুর ফুল তুলবেন চাষিরা, তিন থেকে সাড়ে তিন মাস পর কচুর কন্দ তোলার সময় হবে।
বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চরহোসনাবাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ধারে ৩০ শতক জমিতে কচুর চারা লাগানো হয়েছে। আশপাশের জমি খালি পড়ে আছে। মাসখানেক আগে লাগানো এসব কচুর চারা সবুজ রং ধারণ করেছে। খেতে কচুর পরিচর্যা করছিলেন চাষিরা।
কথা হয় চাষি আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি ৩০ শতক জমিতে কচু চাষ করেছেন। এতে তাঁর প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফসল পুরোপুরি তুলতে পারলে এক লাখ টাকার বেশি লাভ হবে। তিনি আরো জানান, এলাকার এক জমির মালিকের কাছ থেকে এক মৌসুমের জন্য এক হাজার টাকায় পতিত এই জমিটি বর্গা নিয়েছেন তিনি।
বারেক টন্নী নামের এক চাষি বলেন, কচু একবার লাগালে লতি, মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। বারেক টন্নী প্রথম এসব পতিত জমিতে কচু ফলিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই কচু ফলিয়ে লাভের মুখ দেখছেন।
ভেষজবীদ মো.আহছান উল্লাহ বলেন কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন এ’ রয়েছে। কচু আঁশ জাতীয় হওয়ায় এটি কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম। কচুতে আয়োডিনের পরিমাণও অনেক। যাদের অ্যাসিডিটি রয়েছে তাদের জন্য কচু অনেক উপকারী। কচুর লতিতে চিনির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এটি।
দশমিনা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাফর আহমেদ বলেন, আউশ মৌসুমে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের এলাকার কয়েকটি গ্রামে ধানের চাষ হয় না। ফলে জমিগুলো কার্যত পতিত থাকে। আর এ ধরনের পতিত জমিতে বারেক, আবুল হোসেনরা কচু চাষ করে গ্রামের চাষিদের নতুন বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য চাষিরাও কচু চাষে এগিয়ে এসেছেন। এতে অনেক চাষি লাভবান হবেন। কচু খুবই অর্থকরী ফসল। আলু বা ধান চাষের থেকে এই চাষে পরিশ্রম বা খরচও কিছুটা কম।