অবসরে গিয়ে গুরুতর অপরাধ করলে সুবিধা বাতিল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবসরে গিয়ে কোন কর্মচারী গুরুতর অপরাধ করলে সরকার তার অবসর সুবিধা (পেনশন) সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করতে পারবে। ‘সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করে এই বিধান বাতিলের প্রস্তাব আনা হলেও মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন দেয়নি। তাতে বিধানটি বহাল রেখেই আইনের পক্ষে মত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘সরকারী চাকরি (সংশোধন) আইন, ২০২১’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সরকারী চাকরি আইন, ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল। আইনের ৫১(৪) ধারায় বলা হয়েছে- ‘অবসর সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোন গুরুতর অসদাচরণের দোষে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’ এ ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা সেটা অনুমোদন দেয়নি। মন্ত্রিসভা আগেরটিই বহাল রেখেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাব ছিল যে রিটায়ার করবে তার যাতে পেনশন থেকে কোন টাকা কাটা না হয়। মন্ত্রিসভা এটা অনুমোদন দেয়নি। আগে যেটা ছিল সেটাই রেখে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আরেকটি সংশোধন আনা হয়েছিল, আইনে আছে- পিআরএলে যাওয়া ব্যক্তিদের অন্য কোথাও চাকরি করা কিংবা বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। প্রস্তাব আনা হয়েছিল এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন লাগবে। এটাও অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রিসভা। আগে যেটা ছিল সেটাই থাকবে।’ তবে আগের আইনে কিছু করণিক ভুল ছিল সংশোধিত আইনে সেগুলো ঠিক করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সরকারী চাকরি আইনের ‘অবসর সুবিধা স্থগিত, প্রত্যাহার ইত্যাদি’ শীর্ষক ৫১ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘অবসর সুবিধাভোগী কোন ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোন গুরুতর অসদাচরণে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’

উপধারাটি বাতিলের সুপারিশ আসায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাঁরা বলছেন, এটি করা হলে দুই বছর আগে প্রণীত সরকারী কর্মচারী আইনটি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, একজন সরকারী কর্মচারী কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেনশনসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারী সুযোগ-সুবিধা পান। তিনি মারা গেলে তাঁর পরিবারও অনেক সুবিধা পায়। তাই অবসরে গেলেও তাঁদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ থাকা দরকার, যাতে তাঁরা কোন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে না জড়ান।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, এই বিধান বাতিল করা কোনভাবেই উচিত নয়। একজন কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর যদি জঙ্গীবাদ, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে যুক্ত হয়ে যান তখনও তাঁর কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে? এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘এই উপধারাটি বড় আকারের একটি জনগোষ্ঠীকে অপরাধ না করার জন্য কাজ করছে। এটা তুলে দেয়ার কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমল থেকে এই নিয়মটি আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশও এটি অনুসরণ করে। আমরা কেন বাদ দেব। আমরা খারাপ বিষয়গুলো বাদ না দিয়ে ভাল দৃষ্টান্তগুলো ছেঁটে ফেলছি, এটা ঠিক না।’

প্রস্তাবিত সংশোধনে বিদ্যমান আইনের ১, ৪৮ ও ৫০ ধারায় কয়েকটি করণিক ভুল সংশোধনেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। এ আইনটি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে অন্য ছয়টি আইন রহিত করা হয়েছে। কিন্তু এই আইনের কিছু ধারা অন্তত ১০টি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কোন কোন ধারাগুলো প্রযোজ্য থাকবে তা স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর