ঈদের আগে দেশে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে প্রবাসীরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপের মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসীরা। প্রতি মাসেই বাড়ছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। কোরবানির ঈদের আগে ১৯ দিনে ১৫৫ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমান বাজার দরে টাকার অঙ্কে (প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা) এই অর্থের পরিমাণ ১৩ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

জানা যায় , করোনা মহামারির মধ্যেও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪.৮ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের চেয়ে ৬.৬ বিলিয়ন ডলার বা ৩৬.১ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বছর বা অর্থবছরে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনোই আসেনি।

এর আগে, গত নভেম্বরে রেমিট্যান্স পাওয়া আরো সহজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংক রেমিটারের কাগজপত্র নিজ দায়িত্বেই যাচাই করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ ছাড় করার জন্য রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংকের কাছে ‘কনফার্মেশন’পাঠাবে। তার ভিত্তিতে রেমিট্যান্স আহরণকারী ব্যাংক রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংক বরাবর প্রণোদনার টাকা ছাড় করবে বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও কোরবানির ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সে কারণেই ঈদের ছুটির আগে ১৯ দিনেই দেড় বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।

এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার (২৫ জুলাই) রেমিট্যান্স প্রবাহের সাপ্তাহিক তথ্যে দেখা গেছে, চলতি জুলাই মাসের ১৯ দিনে (১লা জুলাই থেকে ১৯শে জুলাই) প্রবাসীরা মোট ১৫৫ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর আগে কোনো মাসের ১৯ দিনে এত বেশি রেমিট্যান্স কখনোই আসেনি। এই রেমিট্যান্সের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ১৯ লাখ ডলার। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৪২ লাখ ডলার। বেসরকারি ৪০ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১১৫ কোটি ৯২ লাখ ডলার। আর বিদেশি ৯ ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

২১শে জুলাই বুধবার কোরবানির ঈদ উদযাপিত হয়। তার আগে (১৯শে জুলাই) মঙ্গলবার ছিল ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটেও এই প্রণোদনা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। তবে, ঈদের ছুটির আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে মাসে ৫০০ ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ১ শতাংশ বাড়তি প্রণোদনা দিতে সরকারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

উল্লেখ্য, রেমিট্যান্স বাড়ার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়াকে নির্দেশ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ বিদেশি মজুত থাকলে তাকে ঝুঁকিমুক্ত দেশ হিসাবে চিহ্নিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর