মধুর স্মৃতি ও বনের পাখী ধরা প্রসঙ্গ

পর্ব ৩
ড. গোলসান আরা বেগমঃ

আমার চাচা ছিলো স্বনাম ধন্য পেশাধার উকিল। অর্থ বিত্তের অভাব ছিলো না। বাবার এক মাত্র সন্তান হওয়ায় সব সম্পদের মালিক ছিলেন তিনি একক ভাবে। তার ছিলো একটি দু’নলা একটি বন্ধুক।ছুটির দিনে অামার বাবাসহ দলবল নিয়ে বেড়িয়ে পড়তেন পাখী শিকারে। হরেক রখমের পাখী নিয়ে ফিরতেন সন্ধ্যার অালো অাধারে।বাড়ীতে খুশীর ধুম পরে যেতো।চাচা মারা যাবার পর তার বড় ছেলে একই কায়দায় পাখী ধরতেন।
অারো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে পাখী ধরতে দেখেছি। পাঁচ ছয়জন মিলে একটি পাখী ধরার জাল ঝুলিয়ে দিতো অাখ ক্ষেতের এক কিনারা ঘেষে। রাতের শেষ প্রহরে।পাখীরা তখন ঘুমিয়ে থাকতো।আতঃপর ক্ষেতের অপর প্রান্ত থেকে পাঁচ ছয় জন আখ গাছে ঝাকি দিয়ে অালোড়ন তৈরী করতো। ঘুম থেকে জেগে পাখীরা উল্টা পাল্টা দৌড়া দৌড়ি করতে করতে টানানো জালের ভেতর ঢুকে পড়তো। সে জাল থেকে বেড়িয়ে আসার রাস্তা পেতো না।এভাবে বহু পাখী এক সাথে ধরা পড়তো।পাখি জবাই করতে করতে হাত পা রক্তাক্ত হয়ে যেতো। রাত শেষে সকালে বাড়ী ফিরতো পাখী শিকারী দল বেধে।
একজন কুড়া পাখী শিকারীর সাথে ছিলো অামার গভীর সখ্যতা। তিনি ছোট খাটো চাকুরী করতেন। তার কথায় ও কাজে ছিলো না কোন গড়মিল। সন্তানের মত স্নেহ আদর দিয়ে একটি কুড়া পাখী পোষতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বেড়িয়ে পড়তেন কুড়া পাখী শিকারে। গভীর জঙ্গলের পাশে রেখে দিতের তার পোষা প্রশিক্ষিত পাখীর খাঁচা। বনের কুড়া পাখীরে বিশেষ সুরে খাঁচার পাখীটি এক নাগাড়ে ডাকতে থাকতো। বনের গভীর অবস্থান থেকে উড়ে আসতো কুড়া পাখী খাঁচার ধারে।এসেই সে ঝগড়া শুরু করে দিতো খাঁচার পাখীর সঙ্গে। ততক্ষনে পাখী শিকারী সূঁতার জাল দিয়ে বনের পাখীটিরে ধরে ফেলতো।
এ ভাবেই কুড়া পাখী ধরে সে খুব আনন্দ পাইতো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর