হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাত পোহালেই ঈদুল আযহা। ধর্মপ্রাণ মানুষ এ দিন তাদের সাধ্যমতো পশু কোরবানি করবেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়। পশু কোরবানির পর মাংস একবারে খেয়ে ফেলা সম্ভব বলেই অনেকে ফ্রিজিং করে রাখেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যাদের ঘরে ফ্রিজ নেই তাদের কি হবে? খুব সহজেই কিছু নিয়ম মেনে মাংস সংরক্ষণ করলে ৬ মাস পর্যন্ত মাংস ভালো রাখা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক ফ্রিজ ছাড়া মাংস সংরক্ষণ করার কিছু নিয়ম।
পাত্রটি এমন জায়গায় রাখুন যেন চুলার তাপ বা গরম কম লাগে। নয়ত মাংস তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রথম সপ্তাহে ২ বার এবং পরে সপ্তাহে অন্তত ১ বার মাংস জ্বাল দিয়ে রাখুন।
চর্বি দেওয়ার সময় মনে রাখবেন মাংস যেন চর্বির অন্তত আধা ইঞ্চি নিচে ডুবে থাকে।
এলোমনিয়ামের হাঁড়িতে রাখা ঠিক হবে না। ১ সপ্তাহের বেশি থাকলে লবণ থাকার কারণে এলোমনিয়ামের হাঁড়ি ছিদ্র হয়ে যায়।
খেয়াল রাখবেন মাংস যেন ছায়াতে না থাকে। বেশিক্ষণ ছায়াতে থাকলে মাংসে ফাঙ্গাস ধরে যাবে।
মাংস শুকানোর পর ভেজা পাত্রে রাখা যাবে না। কাঁচের জারে খবরের কাগজ অথবা ব্লাটিং পেপার রেখে তারপর মাংস রাখুন।
মাঝে মাঝে জার থেকে বের করে মাংস শুকিয়ে রাখুন। এভাবে মাংস ৬ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
মাংস শুকানোর সময় পাতলা কাপড় বা নেট দিয়ে ঢেকে রাখুন। এতে ধুলাবালি পরবে না। কাক-পাখি এসে নষ্ট করতে পারবে না।
অনেক পাতলা করে মাংস শুকালে সরাসরি ভেঁজে বা রান্না করে খেতে পারবেন। আর একটু ভারি হলে মাংস রান্নার আগে ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে রান্না করুন। তাহলে মাংস নরম থাকবে।
রান্না করে সংরক্ষণ : স্বাভাবিক নিয়মে মাংস রাখতে চাইলে মশলা কম এবং তেল বেশি দিয়ে রান্না করেও মাংস ১ সপ্তাহের মতো রাখা যায়। তবে ঠাণ্ডা যায়গায় রাখতে হবে। ফ্যান ছেড়ে ফ্যানের নিচে রাখতে পারেন। চুলা বা রোদের তাপ পরে এমন জায়গায় থেকে দূরে রাখুন।
দিনে অন্তত ১ বার ভালো করে জ্বাল দিতে হবে।
জ্বাল দেয়ার সময় খুব বেশি নাড়াচাড়া করা যাবে না।
জ্বাল দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে তলানিতে যেন না লেগে যায়।
মাংসের টুকরা একটু বড় রাখুন নয়তো মাংস তাড়াতাড়ি গলে যাবে।
মাংসে শুধু তেল থাকবে। পানি থাকা যাবে না। তাহলে মাংস গলে যাবে এবং গন্ধ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি।
মাংস ভেজে সংরক্ষণ : মাংস ভেজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মাংসে লবণ আর হলুদ মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে মাংস নষ্ট হবে না। অনেকেদিন ভাল থাকবে।
উল্লেখ্য, মাংস সংরক্ষণের প্রধান উদ্দেশ্য হলো তা জীবাণু মুক্ত রাখা, স্বাদ ও গুণগত মান যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ রাখা, পচন রোধ করা, খাদ্যবাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত থাকা।” এজন্য অবশ্যই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
মাংস বেশিক্ষণ বাইরে রাখলে ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। তাই মাংস বাড়িতে আসার পর দ্রুত সেটা ভালোভাবে ধুয়ে, রক্ত পরিষ্কার করে রান্না করতে হবে। অথবা ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে।
মাংস অবশ্যই প্লাস্টিকের ব্যাগে বা ‘অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল’য়ে মুড়ে রাখতে হবে। এতে মাংসে বাতাস ঢুকবে না। ফলে ব্যাক্টেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা কমবে।
ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে মাংস সঠিকভাবে জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। আর ছয় ঘণ্টা পরপর সেটা পুনরায় জ্বাল দিতে হবে।
প্রথমেই ফ্রিজ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ দীর্ঘদিন মাংস সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজ পরিষ্কার থাকা খুবই জরুরি। ফ্রিজে আগের মাছ ও মাংসের কারণে গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
কোরবানির তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত মাংস শক্ত থাকে। এই সময় মাংস ফ্রিজে না রাখাই ভালো। পরে খানিকটা নরম হলে মাংস সংরক্ষণ করতে হবে।
ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য মোটা ও ভালো মানের পলিথিন বেছে নেওয়া উচিত। একেকটি মাংসের প্যাকেট রাখার সময় মাঝে মোটা কাগজের টুকরা দিয়ে রাখা যেতে পারে। এতে একটি মাংসের প্যাকেটের সঙ্গে অন্য প্যাকেট আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
মাংস সংরক্ষণের জন্য অবশ্যই নতুন ও পরিষ্কার প্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। পুরানো বা আগের ব্যবহৃত পলিথিন ব্যবহার করলে মাংস গন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ফ্রিজে মাংস রাখার পর তাপমাত্রা কমিয়ে দিতে হবে। এতে মাংস তাড়াতাড়ি জমবে।
এক বছর পর্যন্ত মাংস সংরক্ষণ করতে চাইলে ফ্রিজের তাপমাত্রা থাকতে হবে মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বাসাবাড়িতে থাকা ফ্রিজগুলোতে সাধারণত এতটা ঠাণ্ডা করার সুবিধা থাকে না। সেক্ষেত্রে মাইনাস চার ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাংস রাখলে পাঁচ থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে। মাংস রাখার পর ফ্রিজ যতটা সম্ভব কম খোলার চেষ্টা করতে হবে।