শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন যুবক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলায় শিশু সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টিকে (০৯) অপহরণ এবং ধর্ষণ শেষে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক লোমহর্ষক বর্ণনা দিল আসামি নজরুল ইসলাম (৩৫)।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা জেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আসামি নজরুল। তিনি শিশু টুনি ওরফে বৃষ্টিকে ধর্ষণ-হত্যার লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন।

এর আগে ভোরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার বারুইপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি নজরুলকে গ্রেফতার করে পিবিআই কিশোরগঞ্জের একটি দল। নজরুল কটিয়াদী উপজেলার দক্ষিণ লোহা জুড়ি গ্রামের ছমর উদ্দিনের ছেলে।

গ্রেফতারের পর পিবিআই তাকে কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে সোপর্দ করে।

আদালতে জবানবন্দিতে নজরুল ইসলাম জানিয়েছে, সে তার কাকরল ক্ষেতে বৃষ্টির জমা পানি নামিয়ে বাড়ি ফেরার সময় পাটক্ষেতের পাশে সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টিকে দেখতে পেয়ে ধর্ষণের জন্য জড়িয়ে ধরে। এ সময় শিশুটি এ কথা তার মা-বাবার কাছে বলে দিবে বলে জানালে নজরুল মেয়েটির মুখ চেপে নিকটবর্তী পাটক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যায়।

সেখানে শিশুটিকে সে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টি বাঁচার চেষ্টায় নড়াচড়া করলে নজরুল মুখ এবং গলা সজোরে চেপে ধরে।

ধর্ষণ শেষে হত্যার পর নজরুল ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বাড়িতে গিয়ে স্বাভাবিক আচরণ ও চলাফেরা করতে থাকে। পরবর্তীতে সে গা ঢাকা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পলাতক হয়ে সর্বশেষ ঢাকার আশুলিয়ায় অবস্থান নেয়।

কিশোরগঞ্জ পিবিআই এর একটি বিশেষ টিম মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার বাড়ইপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠানো হলে নজরুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন ১৬৪ ধারায় নজরুল ইসলামের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

ধর্ষিত হয়ে নিহত সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টি একই গ্রামের চুন্নু মিয়ার মেয়ে ও লোহাজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

কিশোরগঞ্জ পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন,  ঘাতক নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং আদালতে ১৬৪ ধারায়  স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন জানান, গ্রামের পাশে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতিদিনের মতো গত ২ জুলাই সকালে চুন্নু মিয়া মাছ ধরতে যাওয়ার সময় মেয়ে সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে যায়।

ওইদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ ধরতে না পারায় এবং বৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় চুন্নু মিয়া মেয়ে সাদিয়াকে বাড়িতে চলে যেতে বলেন। মাছ ধরা শেষে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাড়িতে ফিরে মেয়েকে না পেয়ে খোঁজাখুজি শুরু করেন।

এক পর্যায়ে জয়নালের পাটক্ষেতে দুই পা কাঁচা পাট গাছে পেঁচানো এবং গলায় ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় সাদিয়া আক্তার টুনি ওরফে বৃষ্টির মরদেহ পাওয়া যায়। পরের দিন কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর ধর্ষণের পর সাদিয়াকে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে বলে জানান কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান।

এ ঘটনায় বাবা চুন্নু মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে কটিয়াদী থানায় মামলা দায়ের করেন। এ হত্যাকাণ্ডের পর পিবিআই, কিশোরগঞ্জ জেলার ক্রাইমসিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ধর্ষণ করে হত্যা মামলাটি পিবিআই সিডিউলভূক্ত হওয়ায় পিবিআই গত রোববার ১১ জুলাই মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ সাখরুল হক খান এর ওপর তদন্তভার অর্পণ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর