বহিষ্কার-শোকজের পর যেভাবে ঘুচল নুর-রাশেদের দ্বন্দ্ব

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বহিষ্কার-পাল্টা শোকজের পর ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শীর্ষ দুই নেতা নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।  দুজন পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেন। রোববার এ নিয়ে দিনব্যাপী আলোচনা-সমালোচনা ও গুঞ্জন চলে। ওইদিনই সন্ধ্যায় দুই নেতা সমস্যার সমাধান হওয়ার কথা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর দাবি করেন রাশেদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের সুষ্ঠু সমাধান হয়েছে। রাশেদ খানও এক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে এ ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন, স্বীকার করে নেন এটি তার বয়সের ভুল।

শনিবার রাতে রাশেদকে বহিষ্কার করে একটি বিজ্ঞপ্তি ফেসবুকে পোস্ট করেন নুর। এতে তিনি নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

নুরের এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি রাশেদ। নুরকে দেন পাল্টা চিঠি। এতে কেন নুরের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা নিয়ে কারণ দর্শাতেও বলা হয়।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদে কর্তৃত্ব নিয়ে মূলত নুরুল হক নুরের সঙ্গে রাশেদ খানসহ অন্যদের দ্বন্দ্ব ছিল।  সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সেই নেতৃত্ব নিয়ে আপাতত তাদের মধ্যে একটা সমাধান হয়েছে। নুর তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। যেমনটি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসেছে।

ফেসবুকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নুরুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ আলোচনা সভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনকে স্বপদে বহাল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। একই সঙ্গে ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুব অধিকার পরিষদের কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বাছাই ও নতুন কমিটি গঠনে স্ব-স্ব সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।’

শোকজের দাবি থেকে সরে এসে রাশেদও ইউটার্ন নিয়েছেন। একই দিন তিনি এক ফেসবুক পোস্টে ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে নুরের সঙ্গে বিরোধ মিটে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ফেসবুকে পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা বয়সে তরুণ হওয়ায় মাঝেমধ্যে বক্তব্য, কথা ও কাজে ভুল করে বসি। নুর ও আমার মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা আলোচনার মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে নিজেরা চলার পথে আরও বেশি সতর্ক থাকব।

নুর ও আমার মধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরুর দিন থেকে সুসম্পর্ক ছিল, ভবিষ্যতেও সম্পর্ক ধরে রেখে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব, ইনশা আল্লাহ। দেশের মানুষকে আমরা অভিভাবক মনে করি। আমাদের ভুল হলে অবশ্যই সমালোচনা করবেন, পরামর্শ দেবেন, যাতে শুধরিয়ে নিয়ে নিজেদের পরিপক্ব হিসেবে গড়ে তুলতে পারি।’

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে গঠিত হয়েছিল সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে এই সংগঠনের প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়ে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক। তার আরেক সঙ্গী আখতার হোসেন হয়েছিলেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ করা হয়।

ছাত্র অধিকার পরিষদের পাশাপাশি যুব, শ্রমিক ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে পৃথক তিনটি সংগঠন গঠন করে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার দিকে এগোনোর ঘোষণা দিয়েছিলেন নুর। শুরু থেকেই ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থাকা নুরুল সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাতে আপত্তি জানিয়ে রাশেদ বলেছিলেন, তাদের সংগঠনগুলোতে এমন কোনো পদ নেই। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল।

রাশেদ ও সোহরাবকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে নুর বলেছিলেন, রাশেদ, সোহরাবসহ পাঁচজনের বেশ কিছু ‘স্পর্শকাতর কথোপকথন’ পাওয়া গেছে। কমল বড়ুয়া নামের ফেসবুক মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খুলে সেখানে তারা সংগঠন ভাঙার জন্য সংবাদ প্রকাশ করানো, বিভিন্নজনের নামে অপপ্রচার চালানো ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেছেন। এই কথোপকথনটি হাতে আসার ফলে তাঁদের সতর্ক করার জন্যই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশোধিত না হয়ে উল্টো তারা প্রতিক্রিয়া দেখালেন।

রাশেদের সঙ্গে বিরোধ মেটার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে নুর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আসলে রাজনৈতিক সংগঠনে অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। দেখা যায়, মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে দল ছেড়ে অন্য দলে যান, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। রাজনীতিতে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। রাশেদ খানের বিরুদ্ধে একটা অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটা প্রাথমিক পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। যেটা তিনি না মেনে উল্টো প্রেস রিলিজ দিয়েছিলেন। যেটা একপ্রকার ছাত্র যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের যে সমন্বিত সিদ্ধান্তকে ভায়োলেট করা হয়। তবে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছেন এবং সভায় সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আমরাও আমাদের একজন ত্যাগী ও সংগ্রামী সহযোদ্ধা হিসেবে সদয় হয়ে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

এ বছরই ছাত্র অধিকার পরিষদ ও যুব অধিকার পরিষদের কাউন্সিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের পর তাঁরা একটি রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবেন বলে জানান নুরুল হক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর