সড়কে মানুষ ও যানচলাচল বেড়েছে চেকপোস্টে দীর্ঘ লাইন

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ লকডাউনের পঞ্চমদিন গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানচলাচল অনেক বেড়েছে। এতে কোনো কোনো চেকপোস্টে যানবাহনের দীর্ঘ সারিও দেখা গেছে। আগের কয়েকদিনের চেয়ে ঢাকায় রাস্তায় মানুষের চলাচলও ছিল বেশি। নানা প্রয়োজনে নগরবাসীকে রাস্তায় বের হতে দেখা গেছে। টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর গতকাল খুলেছে ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাই অনেক ব্যাংকে ছিল গ্রহকদের ভিড়। লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে আগের মতই পুলিশ, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্টে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।

আমাদের সংবাদাতারা সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন গতকাল রাজধানীতে প্রাইভেটকার ও রিকশার সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কলেজ গেট, ফার্মগেট, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, কাকরাইল, বাড্ডা ও মতিঝিলে দেখা যায়, এসব এলাকায় রাস্তায় মানুষের চলাচল যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহনের চাপ। ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি বের হওয়ায় এসব স্থানের চেকপোস্টে গাড়ীর দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। গতকাল পঞ্চমদিনে রাজধানীর প্রতিটি সিগন্যালে যানবাহনগুলোকে অপেক্ষা করতে হয়েছে।

কাকরাইল এলাকার একটি ব্যবসরকারি হাসপাতালে কর্মরত এক নার্স কর্মস্থলে যাওয়ার সময় রাস্তায় মানুষ ও যানচলাচল দেখে বলেন, সকাল থেকে রাস্তায় এত মানুষের চলাচল দেখে মনেই হয় না দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। যারা বের হয়েছেন তারা হয়তো জরুরি প্রয়োজনেই বের হয়েছেন, তবে একসঙ্গে এত মানুষের চলাচল প্রতিটি রাস্তায় হলে করোনা সংক্রমণতো আরও বেড়ে যাবে।

কঠোর লকডাউনের পঞ্চমদিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় ৫০৯ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপি। আর ২৮৭ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগের অভিযানে ৫২৬টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ১২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
আমাদের সারাদেশের সংবাদদাতারা লকডাউনের ৫ম দিনের যে তথ্য পাঠিয়েছেন তা তুলে ধরা হলো।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, সরকার ঘোষিত লকডাউন প্রথম চারদিন মোটামুটি পালন হলেও গতকাল ৫ম দিনে তা’ ভেঙে পড়েছে। ৫ম দিনে বগুড়া শহর ও শহরতলীর সর্বত্রই যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। অধিকাংশ দোকানপাটই ছিল খোলা। কারণ জানতে চাইলে বগুড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজিবুল ইসলাম জানালেন , ব্যাংক খোলা থাকায় প্রায় সবাই টাকা তুলতে বেরিয়েছেন। টাকা তুলে মাসিক বাজারহাট করার জন্য তারা বাজার ও দোকান পাটে ভিড় করেছেন । শহরে রিকশাসহ যানবাহন চলাচলের এটা একটা বড় কারণ। সাতমাথায় ডিউটিরত এক পুলিশ কর্মকর্তা বললেন , ভাই পরিস্থিতি বড় জটিল কঠিন , জীবন জীবীকার সমন্বয় করেই আইন প্রয়োগ করতে হবে। সপ্তাহ ব্যাপী বন্ধ থাকার পর টিসিবি পণ্যের ট্রাক এসেছে রাস্তায় । প্রতিটি ট্রাকের পেছনেই দেখা গেছে , ভোক্তাদের লম্বা লাইন।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, জেলায় কঠোর লকডাউন হচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃংখলাবানির টহল চলছে। দোকানপাট শপিংমল বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ। র‌্যাব-৮’এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি নির্দেশনার আলোকে মানবিক বিষয় বিবেচনায় রেখেই পূর্ণাঙ্গ লকডাউন বাস্তবায়নে যতটুকু কঠোর হওয়া প্রয়োজন আইনশৃংখলাবাহিনী তাই করছে। এতদিন আমরা নগর মহানগরের বড় রাস্তাগুলোসহ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রতি অধিক নজর দিয়েছি। এখন থেকে সব অলিগলিতেও নজরদারি করবে র‌্যাব।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সংব্দাদাতা জানান, কঠোর বিধি নিষেধের পঞ্চম দিন চুয়াডাঙ্গায় কঠোর অবস্থানে ছিল প্রশাসন। সকাল থেকে জেলার প্রবেশ পথগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা। লকডাউনকৃত এলাকাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন ১৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের জরিমানার আওতায় আনছেন ভ্রাম্যমান আদালত। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ফিরোজ হোসেন জানান, গত ২৪ ঘন্টায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৮টি মোবাইল কোর্টে ৪২টি মামলায় ৬৩ জনকে ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োমিত টহল দিচ্ছে ৪ প্লাটুন সেনাবাহিনী ও ৩ প্লাটুন বিজিবিসহ পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা।

গাইবান্ধা থেকে স্টাফ রির্পোটার জানায়, লকডাউন কঠোর ভাবে পালনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ৭ টি উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও ব্যাটেলিয়ন আনসার বাহিনী মানুষকে ঘরে রাখতে এবং জন সাধারনের চলাচল নিয়ন্ত্রন করতে শহরের ৬টি প্রবেশ পথে চেকপোষ্ট বসিয়েছে। রিকশা ছাড়া সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-রেস্তোঁরা, কাঁচাবাজার, ওষুধের দোকানগুলো সীমিতভাবে খোলা রেখে বেচাকেনা করছে। জেলা প্রশাসনের ১৭ টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১০৩ টি মামলায় ৮৯ হাজার ৫০ টাকা অর্থদন্ড আদায় করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সর্বাত্নক লকডাউনের ৫ম দিনে ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ্য করা যায়। মিশুক অটোরিকশা অবাধে চলাচল করায় লোকসমাগম ও চলাচল বৃদ্বি পেয়েছে। মীরকাদিম ও রিকাবীবাজার বন্দরে ব্যবসায়ীরা সারাদিন এক শাটার নামিয়ে দোকান খোলা রাখছে। মোবাইল কোর্ট আসলে দোকানের শাটার নামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ চলে গেলে আবার খুলে ফেলছে। ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্টেটের এর নেতৃত্বে জেলায় ২১টি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে। লকডাউনের বিধি নিষেধ অমান্য করায় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্বে গত ২দিনে ১৫৯টি মামলায় সর্বমোট ৯১ হাজার ৬শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন পয়েন্টে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৪টি চেকপোষ্ট বসিয়ে লকডাউন কার্যকর করতে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা। এছাড়া র‌্যাব ও আনসার সদস্যাও মাঠে টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে নির্বাহী ম্যাজিসস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত মাঠে কাজ করছে। পুরো জেলায় শহর এলাকায় মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া সংবাদদাতা জানান, লকডাউনের পঞ্চম দিনে প্রশাসনের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মত। বিনা কারনে ঘরের বাইরে বের হলেই করা হচ্ছে জরিমানা আদায়। করোনার বিধিনিষেধ না মানায় ১৯ জনকে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত কলাপাড়া পৌর শহরের নতুন বাজার, বাদুরতলী এবং উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমাড়া বাজার এলাকায় পথচারী ও ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় : চট্টগ্রামে কঠোর লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। সুযোগ পেলেই রাস্তায় নামছে মানুষ। অলিগলি, হাটবাজারে অকারণ ঘোরাফেরা থেমে নেই। মাস্ক ছাড়াই ঘুরছে অনেকে। দিনভর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল আর তল্লাশির কারণে লোক সমাগম কম। তবে বিকেল থেকে সন্ধ্যার পর পাল্টে যায় চিত্র। অলিগলি,পাড়া মহল্লা এমনকি সড়কেও ভিড় লেগে যায়। নগরীর উম্মুক্ত স্থানে মানুষের ভিড় দেখা যায়।

বালিয়াকান্দি উপজেলা সংবাদদাতা জানান : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসনের অভিযানের গতকাল সোমবার সকালে মোবাইল কোটে ২২ মামলায় ৩৯শত টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের ঢোলজানি ও বালিয়াকান্দি বাজার অভিযান পরিচালনা করে স্বাস্থ্য বিধি না মানায় ২২টি মামলায় ৩৯শত টাকা মোবাইল কোটের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়।

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : গতকাল সোমবার দৌলতপুরেও প্রশাসন ছিল তৎপর। তবে বিগত দিনের তুলনায় গতকাল বিভিন্ন জনবহুল সড়কে জনসাধারণের চলাচল বেশী লক্ষ্য করা গেছে। দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের নেতৃত্বে সেনা বাহিনীর টহল টিম দৌলতপুরে বিভিন্ন এলাকায় টহল পরিচালনা করেছে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় মোতায়েন করা দুই প্লাটুন বিজিবি সীমান্ত সংলগ্ন প্রতিটি বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অভিযান চলামান রেখেছে।

এদিকে রোববার রাতে দৌলতপুরে করোনা স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং লকডাউনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার অপরাধে পৃথক মামলায় ৭ জনের ১৮ হাজার ৫০০ টাকা অর্থদন্ড করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি)উপজেলাসংবাদদাতা জানান : রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাস এর প্রকৌপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এই মূহুর্তে সকলকে স্বাস্থ্য বিধী কঠোর ভাবে মেনে চলা উচিত, মাস্ক ছাড়া কোনভাবেই কেউ বের হবেন না এবং প্রয়োজন ছাড়া কেউ বের হবেন না। প্রতিটি সংকটকালীন সময়ে পুলিশ জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

সোমবার সকাল ১১ টায় কাপ্তাই উপজেলা সদর বড়ইছড়িতে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।

খুলনা ব্যুরো জানান : গতকাল সোমবার ও রোববার পরপর দুই রাতে খুলনা সদর থানার সামনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন এক চিত্র। থানার মোড় নামে পরিচিত সদর থানা থেকে মাত্র ১০০ গজ সামনে বাজার বসেছে। বাজারটি থেকে খুলনা সদর পুলিশ ফাঁড়ির দূরত্ব আনুমানিক ৫০ গজ। খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান আল মামুন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান

সিলেট ব্যুরো জানান : সরকার ঘোষিত ‘কঠোর লকডাউন’ চলছে সিলেট্ওে। এমন ‘কঠোর লকডাউন’ বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। এদিকে সারাদিন মাঠে থাকার পর রাতের শহরে লকডাউন বাস্তবায়নে নগরীতে নামে পুলিশ। অপরদিকে, কঠোর লকডাউনের পঞ্চম দিন গতকাল সোমবার মাঠে সক্রিয় রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। সকাল থেকেই বিভিন্ন মোড়ে টহল দিতে দেখা গেছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের। তবে লকডাউনের শুরুতে সবকিছু কঠোর থাকলেও কিছুটা ঢিলেভাব লক্ষনীয় হয়ে উঠছে। লকডাউনে গত চারদিনের যে চিত্র সিলেটে ছিলো পঞ্চম দিনের লকডাউনে সড়কগুলোতে যানবাহন ও কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে জনসমাগম।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর