লকডাউনে কাজ নেই, বাজারে মাছ বিক্রি করছেন নামী অভিনেতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কলকাতায় লকডাউনের কারণে দফায় দফায় শুটিং বন্ধ হওয়ার খবর নতুন নয়। ধারাবাহিকের শুটিং ৫০ জনের ইউনিট নিয়ে শুরু হলেও সেভাবে শুরু হয়নি সিনেমার শুটিং। বন্ধ প্রেক্ষাগৃহ। বন্ধ রঙ্গশালা। ফলে, থিয়েটার কর্মীরাও নিদারুণ অর্থ সংকটে। যারা থিয়েটারের পাশাপাশি অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত তাদের ব্যাপার আলাদা। কিন্তু যারা কেবলই থিয়েটার কিংবা সিনেমায় কোনও পার্শ্বচরিত্র করে পেট চালায় তাদের জীবন আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে তা বলাই বাহুল্য।

এমনই এক অভিনেতা শ্রীকান্ত মান্না। দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয়জীবন তাঁর ৷ শ্রীকান্ত মান্না ‘সংস্তব’ নাট্য দলে নিয়মিত অভিনয় করছেন আজ ২৫ বছর। এছাড়াও বহু বাংলা ছবি, মেগা সিরিয়াল ও শর্ট ফিল্মে দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন রঙ্গশালায় আলো জ্বলছে না, পর্দা উঠছে না। একগুচ্ছ সামাজিক নিয়মবিধি মেনে ধারাবাহিকের কাজ শুরু হলেও সবাই সেখানে কাজ পাচ্ছেন না। জমানো টাকায় কতদিন? পেট তো কারো কথা শোনে না। সে গর্জে ওঠে ক্ষুধায়। তাই পেটের দায়ে আজ মঞ্চ, শুটিং ফ্লোরের অপেক্ষা ছেড়ে মাছ নিয়ে বাজারে বসছেন অভিনেতা শ্রীকান্ত মান্না।
এক সময়ে মিঠুন চক্রবর্তী, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তীর, আবির চট্টোপাধ্যায়ের মতো বড় বড় অভিনেতার সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি ৷ সংসার চলে অভিনয় থেকে উপার্জিত টাকাতেই। কিন্তু আজ কোথায় চরিত্র? কোথায় ফ্লোর? কেউ ডাকে না। অগত্যা পেটের দায়ে বেছে নিয়েছেন নতুন পেশা। অভিনেতা থেকে তিনি আজ মাছ বিক্রেতা। কোনও কাজকেই ছোট মনে করেন না তিনি।

কলকাতার গণমাধ্যম নিউজ ফ্রন্টকে বলেন, ‘অভিনয় আমার মনের খিদে মেটায় আর মাছ বিক্রি আমার পেটের খিদে মেটাচ্ছে। দুটোই কাজ ৷ রকমটা আলাদা শুধু। প্রথম প্রথম যখন বাজারে বসতাম মুখ ঢেকে রাখতাম ভালো ভাবে, যাতে কেউ আমায় চিনতে না পারে। বাড়ি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মেকআপ হীন ‘আমি’কে দেখতাম। একদিন ভাবলাম, আজ যদি এরকম কোনও রোল আমাকে মঞ্চে বা অনস্ক্রিনে করতে হতো, তখন যদি এরকম আমার লজ্জা লাগত কিংবা ইতস্তত করতাম তা হলে তো চরিত্রটা থেকে পরিচালক আমায় বাদ দিয়ে দিতেন। বের করে দিতেন ফ্লোর থেকে।

এই অভিনেতা বলেন, সে দিনের পর থেকে আর আমি লজ্জা পাই না। মাছ বিক্রি করছি বলে আমার কোনও লজ্জা নেই। আফসোসও নেই। কারণ আমার পেটের জ্বালা মিটছে আজ এই পেশাতেই। যখন কাজকর্ম হারালাম আর চলছিল না সংসার তখন ঠিক করেছিলাম এমন একটা রাস্তা বের করব যেটাতে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। ২০২০ থেকে আজ অবধি যে দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা দিন কাটাচ্ছি তাতে অনেকেই পেশা বদলে অন্য চাকরি করছেন কেউ বা ব্যবসা করছেন।
শ্রীকান্ত বলেন, চাকরির চেষ্টা করিনি, কারণ আমি জানি একদিন না একদিন আবার চরিত্র মিলবে, মঞ্চের পর্দা উঠবে, সেদিনও আমি চাকরিটা ছাড়ব না। কারণ দুঃসময়ে যে কাজটা আমাকে অন্ন জোগাবে তাকে ছেড়ে দেওয়া মানে বেইমানি করা। ভোর ৫ টা থেকে বেলা ১২ টা কি বড়জোর দুপুর ১ টা অবধি কাজ করার পর আমি ফ্রি। তখন আমি বাড়ি ফিরে গান শোনা, সিনেমা দেখা এগুলো আজ করতে পারি।

অভিনয়ের সুবাদে অনেকে আপনাকে চেনে। তাদের মধ্যে কেউ আপনাকে দেখে চিনতে পারেনি? তাদের কাছ থেকে কীরকম প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীকান্ত বলেন, প্রথমে অবাক হয়েছেন। পরে উৎসাহ দিয়েছেন। বলেছেন, আমরাও ভালভাবে বাঁচার জন্য অন্য আরও কোনও পথ খুঁজছি। পাড়া প্রতিবেশী, অভিনেতা বন্ধুরা, সাংবাদিকরাও আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। অনেকেই বলছেন তাঁরা আমার জন্য গর্বিত। আর কী চাই?

শ্রীকান্ত বলেন, এই সময়ে সকলেই কোনও না কোনওভাবে সমস্যায় আছেন। হয়তো তা আমার থেকেও বেশি। তাই আমার কোনও আফসোস নেই আজ সকাল সকাল মাছ নিয়ে বাজারে বসছি বলে। কত ধরনের মানুষকে দেখছি, চিনছি। কত ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে আমার। এটাকেও একটা চরিত্র বলেই মেনে নিই আজকাল। বাজারটা আমার ফ্লোর বা মঞ্চ। সমৃদ্ধ হচ্ছি। সত্যিকারের ফ্লোরে বা মঞ্চে ফিরলে দর্শককে অনেক বেশি ন্যাচরাল অভিনয় উপহার দিতে পারব বলে আশাবাদী আমি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর