স্বাস্থ্যবিধি মানছে না গ্রামের মানুষ, অবাধে চলাচল

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা সংক্রমণে লকডাউন ও বিধিনিষেধ আমলেই নিচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সীমান্ত ও এর বাইরের জেলাগুলোতে সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতেও তারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা দেখাচ্ছেন। মঙ্গলবার দিনাজপুরে লকডাউন চলার সময়ে এ চিত্র দেখা গেছে। অন্যদিকে রাজশাহীতে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে।

সদর উপজেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিকে লাগাম টানতে মঙ্গলবার থেকে টানা সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন) শুরু হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ গায়েই মাখছে না এই বিধিনিষেধ। প্রথম দিনে এরকমই চিত্র ফুটে উঠেছে। দিনাজপুরে করোনা আক্রান্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দিনাজপুর জেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ২১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত চলবে এই বিধিনিষেধ।

No description available.

সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অটোরিকশা, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল চলাচল করছে অবাধে। শুধু দিনাজপুর সদর উপজেলা নয়, সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়কে শুধু যাত্রীবাহী বাস ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেছে যথারীতি। প্রশাসনের বিধিনিষেধে দিনাজপুর সদর উপজেলা থেকে প্রবেশ ও বহির্গমনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যানবাহনগুলো মানেনি সেই নিষেধাজ্ঞা। দিনাজপুর শহরের লিলির মোড়ে অবস্থান নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বেশ কিছু অটোরিকশা আটক করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও সাধারণ মানুষই মানছে না এই বিধিনিষেধ। দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মর্তুজা আল মুঈদ জানান, লকডাউনের প্রথম দিনে সাধারণ জনগণের প্রতি শক্তিপ্রয়োগ না করে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বিনা কারণে ঘরের বাইরে বের হতে সবাইকে নিরুত্সাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার কথা মাথায় রেখে তাদের চলাচল কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।

হাসপাতালে ভিড় বাড়ছেই

রাজশাহী: স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মৃতদের মধ্যে ‘ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’ আক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করছেন রামেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার শামীম ইয়াজদানী। মৃতদের বেশির ভাগই চিকিত্সাকালে অবস্থা খারাপ থাকছে। তাদের শারীরিক সমস্যা গত বছরের করোনার লক্ষণের চেয়ে আলাদা। এছাড়া শহরের চেয়ে এখন গ্রামের রোগী বাড়ছে বলেও জানান তিনি। পরিচালক বলেন, বর্তমানে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর ৪০ শতাংশই গ্রামের। কারণ হিসেবে আমরা দেখছি গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি কম মানা, অবাধে সব জায়গায় চলাচল, মাস্ক না পরাসহ অন্য কারণে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে—সামগ্রিকভাবে রাজশাহীতে শনাক্তের হার কমছে। স্বাস্থ্যবিধি মানলে শনাক্তের হার আরও কমে অবস্থার উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ডা. পার্থ মণি ভট্টাচার্য জানান, গত বছর করোনার যেমন লক্ষণ ছিলো, এবার কিন্তু অনেক বিষয় আলাদা দেখছি। ভর্তির পর থেকেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া এবং অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লিভার, কিডনি ও ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক বেশি হচ্ছে। এদিকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হার কমছে না বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে শহরের পাশাপাশি গ্রামেও বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ তাদের। লকডাউনের সুফল পেতে সাত দিন নয়, অন্তত ১৪ দিনের লকডাউনের পরামর্শ দিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ও রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর