তরমুজ চাষে বিমুখ কৃষকরা দাম না পেয়ে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত পাঁচ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে উল্লেখ করার মত তরমুজের চাষ হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চলতি বছরে তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। ন্যায্যমূল্য না পেয়ে জেলার কৃষকেরা তরমুজ চাষে বিমুখ হয়েছেন বলে জানা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে এই জেলায় বাণিজ্যিকভাবে তরমুজের চাষাবাদ হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলা ও শিবগঞ্জের পদ্মা-মহানন্দা নদী ও নদী তীরবর্তী এলাকায় গত কয়েক বছর আগেও বিপুল পরিমাণ জমিতে তরমুজের চাষাবাদ করা হত। সদর উপজেলার ইসলামপুর, চরবাগডাঙ্গা, শিবগঞ্জের পাঁকা, ঘোড়াপাখিয়া, উজিরপুর ও গোমস্তাপুর উপজেলার নয়াদিয়াড়ী এলাকায় ব্যাপক হারে তরমুজের চাষ করতেন কৃষকরা। তবে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হয়ে তরমুজের চাষ বন্ধ করে দিয়েছেন তারা।

টানা ১০ বছর মহানন্দা নদীর পাড়ে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক মো. আব্দুল মান্নান। জেলা সদরের চরমোহনপুর মহানন্দা তীরবর্তী এলাকায় তিনি তরমুজ চাষাবাদ করতেন। গত ৮ বছর ধরে চাষাবাদ করছেন না। কেন হঠাৎ তরমুজ চাষ বন্ধ করলেন— এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান বলেন, মহানন্দা নদীর পানি শুকিয়ে আসলে প্রতিবছর তরমুজের চাষাবাদ করতাম। কিন্তু তরমুজ চাষ করে কোনো বছরই তেমন লাভ করতে পারিনি। সেচ, সার দিতে যা খরচ হয় তাও উঠত না। পানির দামে বিক্রি করতে হত। সর্বশেষ বছরে পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে লাভ তো দূরের কথা প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বালু মাটিতে প্রতিবছর বাম্পার ফলন হলেও বারবার লোকসান হতে থাকলে পরিবারের অনুরোধে তরমুজ চাষ বন্ধ করে দেই। সেসব জায়গায় এখন ধান, গম চাষ করি। এসব ফসলের ভাল দাম রয়েছে। তাই তরমুজের কথা আর কখনও মাথায় আসেনা।

গত ৬-৭ বছর আগেও সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের নতুন ইসলামপুর, আহলদীপারা, ক্লাব হাট, কলাবাগান, কাজীপাড়া, গাজীপাড়া এলাকায় মহানন্দা নদীর ধারে বিস্তৃত মাঠ জুড়ে তরমুজের চাষাবাদ হত। এ বছরও দু’এক জায়গায় সামান্য পরিমাণে হয়েছে। এই এলাকার তরমুজ চাষী আবুল খায়ের জানান, এখন ভয়ে কেউ আর তরমুজ চাষ করে না। কারণ, মাঠে তরমুজের তেমন চাষাবাদ হয় না। তারপরেও অনেক ঝুঁকি নিয়ে চাষ করলে জমি থেকেই তুলে খেয়ে নেয়। তাই এখন আর কেউ তরমুজ চাষ করে না।

শিবগঞ্জের এক তরমুজ চাষী বলেন, ৫ বছর আগেও পদ্মার চরে অনেক তরমুজ চাষ হয়েছে। কিন্তু কৃষকরা তরমুজ চাষ করে ঠকতে ঠকতে তা ছেড়েই দিয়েছে। কারণ তরমুজ চাষ করে সেসময় (৫ বছর আগে) নূন্যতম খরচটাও উঠতো না। এখন এসব জমিতে মালটা, বরই, পেয়ারার বাগান গড়ে উঠেছে। কোথাও কোথাও ধান, ভুট্টা, গম ও পটলের চাষাবাদ হচ্ছে। এসব ফসলে অধিক লাভ হওয়ায় তরমুজ ছেড়ে কৃষকরা তাই এসবে ঝুঁকে পড়েছে।

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের একজন ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা মো. কাবিল জানান, পাঁচ থেকে সাত বছর আগে ভ্যানে করে কত তরমুজ বিক্রি করেছি। আশেপাশের জমি থেকে কয়েক টাকা পিস হিসেবে এনে বিক্রি করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। দাম না পেয়ে কৃষকরা তরমুজ চাষ করাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর এখন দেখুন, কত দাম তরমুজের। হয়ত কৃষকরা এখনও তাদের প্রাপ্য দাম পায় না। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।

জেলা শহরের এক আড়তদার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুই দশক ধরে তরমুজের ব্যবসা করি। সাত-আট বছর আগেও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেছি। কিন্তু গত চার-পাঁচ থেকে জেলায় চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বাইরের বিভিন্ন জেলার ওপর নির্ভর করতে হয়। স্থানীয় দামেও এর প্রভাব পড়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় তরমুজ চাষাবাদের পরিমাণ নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বর্তমানে এই জেলায় তরমুজ চাষ নেই বললেই চলে। জেলায় হাতেগোনা কয়েক জায়গায় চাষ করা হলেও সেটা খুবই কম। গত পাঁচ বছরে দাম না পেয়ে তরমুজ চাষ কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর