বহুমুখী সংকটে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান লকডাউন ও রমজানের প্রভাবে বহুমুখী সংকটে পড়েছে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষ। একদিকে লকডাউনের কারণে কাজের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে তাদের আয় কমে গেছে। অনেকে কাজ হারিয়েছেন। অন্যদিকে চিকিৎসা ও পরিবহণসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় দিন দিন বেড়েই চলেছে।

এর মধ্যে রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম রীতিমতো অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব কারণে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ধরনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। আর্থিক চাপ সামাল দিতে অনেকের আগের সঞ্চয়ে হাত পড়েছে।

সঞ্চয় শেষ করে অনেকে ধার-দেনায় পড়েছেন। এতেও সামলে উঠতে না-পেরে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন কেউ কেউ। সামগ্রিক পরিস্থিতে মানুষের আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে এসেছে এমন চিত্র।

করোনার কারণে গত বছরের মার্চ থেকেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়ে। গত সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও পুরো গতি পাওয়ার আগেই হানা দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এতে গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে লকডাউন, যা পর্যায়ক্রমে বেড়েই চলেছে। গত বছর ব্যবসা-বাণিজ্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। এতেও অনেকে কাজ হারিয়েছেন।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম সোমবার বলেন, রমজানে খরচ কিছুটা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে করোনার কারণে মানুষের আয় কমছে। এ অবস্থায় আয়-ব্যয়ে একটি অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়েছে। এতে বেশি বিপাকে পড়ছে স্বল্প আয়ের মানুষ। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খারাপ।

ফলে আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিও ভালো হওয়ার সুযোগ নেই। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির অবস্থা খুব খারাপ। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার সহজ কোনো উপায় নেই। সংকট মোকাবিলার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, সবার আগে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এরপর নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছাতে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এক্ষেত্রে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। রোজা ও লকডাউনের প্রভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে হুহু করে। রোজায় পণ্যের চাহিদা বাড়ার ও লকডাউনে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ার অজুহাতে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাবে গত বছরের ২৩ মার্চ থেকে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত এক বছরে মিনিকেট চালের দাম ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ, মাঝারি চালের দাম ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, আটা ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ, সয়াবিন তেল ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ, পামঅয়েল ৪৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, ফার্মের মুরগি ৩৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ডিমের দাম ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়েছে।

লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে মানুষকে বিকল্প বাহনে বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। করোনার কারণে আনুষঙ্গিক ব্যয়ও বেড়েছে। লকডাউনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত হওয়ায়, বিশেষ করে ভাসমান কর্মী বিপাকে পড়েছেন। দোকানপাট ও শপিংমল, গণপরিবহণ ও অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব খাতে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের আয় কমে গেছে।

এর সঙ্গে জড়িত শিল্পকারখানা, ওয়ার্কশপের কর্মীদের আয়ও বলতে গেলে বন্ধ। ফলে তারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে গিয়েছিলেন। করোনার কারণে এখন চুক্তিভিত্তিক যেসব কর্মী কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রও কমে গেছে। এর মধ্যে আছে বন্দরের শ্রমিক, ঘাট শ্রমিক, বাসার কাজের বুয়া। এরা আয় করে একটি অংশ গ্রামে পাঠাত। ফলে তারা এখন গ্রামেও অর্থ পাঠাতে পারছে না। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও টাকার প্রবাহ কমেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের মার্চে ২৭৭ টাকা দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য ও সেবা পাওয়া যেত, গত মার্চে সেই পরিমাণ পণ্য ও সেবা নিতে ব্যয় করতে হয়েছে ২৯২ টাকা। আলোচ্য সময়ে একই পণ্য ও সেবা কিনতে ১৫ টাকা বেশি খরচ করতে হয়েছে।

শতকরা হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ওই সময়ের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খাদ্যপণ্যের দাম। গত বছরের মার্চে ৩০১ টাকা দিয়ে যে পরিমাণ খাদ্যপণ্য পাওয়া যেত, একই পণ্য কিনতে গত মার্চে ব্যয় হয়েছে ৩১৮ টাকা। আলোচ্য সময়ে এতে বেশি ব্যয় হয়েছে ১৭ টাকা।

শতকরা হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের ক্ষেত্রেও ব্যয় বেড়েছে। গত বছরের মার্চে ২৪৬ টাকায় যে পরিমাণ খাদ্যবহির্ভূত পণ্য পাওয়া যেত, একই পরিমাণ পণ্য কিনতে এখন ব্যয় হচ্ছে ২৫৯ টাকা। বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে ১৩ টাকা। পল্লি এলাকায় সাধারণ খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকে, শহরে বেশি থাকে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে পল্লি এলাকায় খাদ্যপণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। শহরে বেড়েছে তুলনামূলকভাবে কম। সরবরাহ ব্যবস্থার ত্রুটিতে এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে পরিবহণ খাতে ব্যয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবায় ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং অন্যান্য পণ্য ও সেবায় ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে।

এসব সেবা ও পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের খরচ বেড়েছে। ফলে আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। শহরাঞ্চলে অত্যন্ত দুশ্চিন্তার কারণ হলো বাসাভাড়া। এ ছাড়াও ৫টি মৌলিক চাহিদার ৪টি নিয়ে চিন্তিত তারা। এ অবস্থায় জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে চরম বিপাকে সাধারণ মানুষ। এক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী মানুষের চরম দুর্দিন চলছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বর্তমানে মধ্যবিত্ত যে পর্যায়ে আছে, তা হয়তো সহনীয়। কিন্তু অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে এরাই সবচেয়ে বিপদে পড়বেন। তাদের মতে, দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রয়েছে। তবে বণ্টনব্যবস্থা খুবই খারাপ। আর মধ্যবিত্তদের কোনো পরিসংখ্যানও সরকারের কাছে নেই। ফলে এদের কাছে খাবার পৌঁছানো খুব কঠিন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত বলেন, অর্থনীতির কোনো একটি অংশের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হলে এর নেতিবাচক প্রভাব ঘুরেফিরে কমবেশি সব খাতেই পড়বে। করোনার প্রভাব দীর্ঘায়িত হওয়ায় সব খাতেই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এতদিন অর্থনীতি তার সহ্যক্ষমতা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এটি দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের শিল্প ও বাণিজ্য সচল রাখতে হবে। তাহলে কর্মসংস্থান ধরে রাখা যাবে। দরিদ্রদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দিতে হবে। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিভিন্ন সংস্থার জরিপ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে দেখা গেছে, গত এক বছরে মানুষের দৈনন্দিন ব্যয় বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। বিপরীতে আয় বেড়েছে মাত্র ৪-৬ শতাংশ। এর মধ্যে অনেকের আয় বাড়ার পরিবর্তে কমে গেছে। ফলে তাদের আয় ও ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান বেড়েছে গড়ে ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে তাদেরকে আপস করতে হচ্ছে জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে।

অর্থাৎ, জীবনযাত্রার মানের চাহিদাকে কাটছাঁট করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল, নিত্যপণ্য, বাড়িভাড়া, যাতায়াত ব্যয়, সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এবং পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ব্যয় খাতে বেশি মাত্রায় খরচ বেড়েছে। এই বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেককে সঞ্চয়ে হাত দিতে হয়েছে। অনেকে ধারদেনা করেছেন। এতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে না-পেরে অনেকে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন।

অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, যাদের দৈনিক আয় ১০-৪০ ডলারের মধ্যে, তারাই মধ্যবিত্ত। এ হিসাবে তাদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার মধ্যে। তবে আর্থিক সক্ষমতার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, সামাজিক মর্যাদা, মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক সুযোগ-সুবিধাকেও মানদণ্ডে আনতে হবে। ওই বিবেচনায় বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা চার কোটির মতো।

তবে উল্লেখযোগ্য অংশই নিম্নমধ্যবিত্ত। এরা ছোট বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসা এবং দৈনন্দিন কাজের ওপর নির্ভরশীল। করোনার কারণে দেশ লকডাউন হওয়ায় বর্তমানে এদের বড় অংশের আয়-রোজগার বন্ধ। অনেকের আয় কমে গেছে। এতে খাবার ও বাসাভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। করোনার মোকাবিলায় নিম্নবিত্তরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতা পেলেও মধ্যবিত্তদের বড় একটি অংশই অসহায়।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাতের এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের আগে দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে দরিদ্র ২০ শতাংশ, মধ্যবিত্ত ৭০ শতাংশ ও ধনী ছিল ১০ শতাংশ।

লকডাউনের পর দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪০ শতাংশ, মধ্যবিত্তের হার কমে ৫০ শতাংশ এবং ধনীর হার আগের মতো ১০ শতাংশ রয়েছে। অর্থাৎ, করোনার থাবার মধ্যেও ধনীর হার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্তের ২০ শতাংশের আয় কমে তারা দরিদ্রের মধ্যে চলে গেছে। ফলে মধ্যবিত্তের হার ২০ শতাংশ কমেছে। দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ বেড়ে ৪০ শতাংশ হয়েছে।

গত বছরের নভেম্বর ডিসেম্বরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার মহামারি শুরুর আগে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের মোট আয়ের ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ করত ২০ শতাংশ দরিদ্র মানুষ।

আর ১৫ দশমিক ৮২ শতাংশ করত শীর্ষ ধনীদের ৫ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রভাবে দরিদ্রদের আয় কমেছে। বেড়েছে ধনীদের আয়। এখন দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ করেন ধনী ৫ শতাংশ মানুষ। দারিদ্র্য ২০ শতাংশ মানুষ এখন আয় করেন ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

এতে বলা হয়, করোনার এক বছরে দেশের ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ মানুষের জীবনমান নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬০ লাখ ধরলে করোনার প্রভাবে দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার ফলে এ হার আরও বাড়তে পারে।

পিপিআরসি ও বিআইজিডির জরিপে বলা হয়, করোনার ফলে কাজ হারিয়ে কিছু মানুষ কাজে ফিরতে পারলেও এখনো ৮ শতাংশ মানুষ কোনো কাজ পাচ্ছে না। ফলে তারা বেকার জীবনযাপন করছে। শহরের বস্তিবাসী করোনাভাইরাসের আগে যে আয় করতেন, এখন তারা সে পরিমাণে আয় করতে পারছেন না।

আগের চেয়ে তাদের আয় বেশ কম হচ্ছে। গড়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় তাদের আয় ১৪ শতাংশ কম হচ্ছে। গত বছর ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী কাজ হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছেন। এদের মধ্যে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ এখনো শহরে ফিরতে পারেননি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর